ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আগের চেয়ে দেড়গুণ বেশি নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়ায়

জেলা প্রতিনিধি | কিশোরগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৪:০৭ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২৩

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ঈদুল ফিতরের ১৯৬তম জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় চার স্তরে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবার আগের চেয়ে দেড়গুণ বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়ায়।

সকাল ১০টায় শুরু হবে ঈদুল ফিতরের জামাত। জামাতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

jagonews24

আগত লাখ লাখ মুসল্লির নিরাপত্তার স্বার্থে এখানে মাস্ক, টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। মোবাইলফোন ও ছাতা নিয়ে ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। তবে আবহাওয়া যদি খারাপ থাকে কিংবা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে ছাতা নিয়ে প্রবেশের কথা আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের সর্বশেষ সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ এবং শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এবারও ঈদুল ফিতরের জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবারের ঈদের জামাতে মাস্ক, টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছু সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না মুসল্লিরা।

jagonews24

তিনি বলেন, আগত মুসল্লিরা নিরাপত্তার স্বার্থে মোবাইলফোন ও ছাতা নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে মাঠে ছাতা নিয়ে প্রবেশের বিষয়টি আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে। শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ ও ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রোডে শোলাকিয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ২০১৬ সাল থেকে আমরা সব সময় বাড়তি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি ও করছি। এবার আগের চেয়ে দেড়গুণ বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে শোলাকিয়ায়। তাই আমরা কিছু বাড়তি আয়োজন করেছি। এর মধ্যে ময়দানকে লক্ষ্য করে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষ যখন ঈদগাহ ময়দানে আসবেন পুলিশের চারটি স্থাপনা পেরিয়ে আসতে হবে। সেটি চেকপোস্ট হোক বা পিকেট হোক। আবার কোথাও কোথাও পাঁচ থেকে ছয়টি স্থাপনা পেরিয়ে ময়দানে আসতে হবে। এখানে ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে ছয়টি। তার মধ্যে র্যাব ব্যবহার করবে দুটি আর চারটি ব্যবহার করবে পুলিশ। মাঠে চারটি ড্রোন ক্যামেরা থাকবে। থাকবে বাইনো কোলারসহ ছয়টি ভিডিও ক্যামেরা।

পুলিশ সুপার বলেন, পুরো মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে, যা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। মাঠে প্রবেশ ও বাহির পথ নামাজের আগের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে নামাজ আদায় করতে পারে সেজন্য আমাদের এই আয়োজন। এখানে ফায়ার সার্ভিস কাজ করবে। ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিকেল টিম থাকবে। পুলিশের কুইক রেসপন্স টিম থাকবে। সুইপিং করা হবে। বোম ডিসপোজাল টিম ঢাকা থেকে আসবে। এছাড়া মাঠের নিরাপত্তার জন্য পাঁচ প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে। র্যাব থাকবে। সাদা পোশাকে পুলিশ কাজ করবে। আমরা কোনো হুমকি মনে করছি না।

jagonews24

ময়মনসিংহ র্যাব-১৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বলেন, স্নাইপার, ড্রোন ক্যামেরা, দুটি ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এ নিরাপত্তা নিশ্চিতে শতাধিক র্যাব সদস্য মোতায়ন থাকবে। দুই থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাজ করবেন তারা। জঙ্গি হামলার কোনো হুমকি নেই।

শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ বলেন, মাঠের রং করা থেকে শুরু করে মুসল্লিদের অজু ও গোসলের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। কিন্তু তারপরও ভাটা পড়েনি ঐতিহাসিক এ ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে মুসল্লিদের সমাগমে।

jagonews24

জনশ্রুতি আছে, শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ ঈদের জামাতের মোনাজাতে ভবিষ্যতে মাঠে মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। অন্য একটি মতে, সেইদিনের সেই জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ লোক জমায়েত হন। ফলে ‘সোয়া লাখে’র অপভ্রংশ হয়ে ‘শোলাকিয়া’ নামটি চালু হয়ে যায়।

পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর) ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করেন। এই মাঠে ২৬৫টি কাতার আছে, প্রতিটি কাতারে ৫০০ মুসল্লি নামাজের জন্য দাঁড়াতে পারেন।

বর্তমানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের চেয়েও বড় বড় ঈদগাহ ময়দান প্রতিষ্ঠিত হলেও মুসল্লির উপস্থিতির দিক থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত ঈদুল ফিতরের জামাতই এ উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

এমআরআর/জিকেএস