তাদের ঈদ কাটে যেভাবে
রাত পোহালেই ঈদ। এরই মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। তবে ছড়িয়ে পড়া এ ঈদ আনন্দ যেন ব্যতিক্রম সরকারি শিশু পরিবার। পরিবারের সঙ্গে তাদের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা হয় না। নিজেদের মধ্যেই আবদ্ধ থাকতে হয় তাদের।
বলছি নীলফামারীর সরকারি শিশু পরিবারের (বালক) নিবাসীদের কথা। কারও দুই বছর, আবার কারও আবার ১০ বছরেরও বেশি সময় পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটানোর সৌভাগ্য হয়নি। এবারও তাদের ঈদ কাটবে পরিবার ছাড়া।

সরেজমিন নীলফামারী সরকারি শিশু পরিবারে দেখা যায়, নতুন পাঞ্জাবি ও পাজামা পেয়েছেন নিবাসীরা। কেউ নতুন কাপড় চোখ বুলিয়ে দেখছে, কেউবা পরে আয়নার সামনে দাঁড়াচ্ছে।
বছরে দুই ঈদ মিলে ১৮টি ঈদ কাটিয়েছে কাজী হৃদয়। ১৮টি ঈদের স্মৃতিচারণ করে হৃদয় জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ১৮টি ঈদ এ আঙিনায় কাটিয়েছি। আলাদা করে বললে ঈদুল ফিতর ৯টি, এবারের সহ ১০টি হবে। প্রত্যেক ঈদ আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই কাটাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন কাপড় পরি। এরপর হালুয়া-রুটি খেয়ে নামাজে যাই। এসে খাওয়া-দাওয়া করে খেলাধুলা করি।’

সে আরও বলে, ‘ঈদের দিন আমাদের জন্য খেলার নানা আয়োজন থাকে। সারাদিন সবাইকে নিয়ে আনন্দে কাটাই। ডিসিসহ অন্য স্যাররা আসেন। তারা আমাদের কষ্ট ভাগাভাগি করে নেন।’
সম্রাট হোসেন নামের আরেকজন বলে, ‘আমাদের নিজেদের পরিবার না থাকলেও এই নিবাস আমাদের একটি বড় পরিবার। ঈদের দিন ক্রিকেট, ক্যারম, দাবাসহ বিভিন্ন খেলাধুলা করি। ছোটদের নিয়ে কবিতা বা গান গাই। দিনটা আনন্দেই কেটে যায়।’

আট বছরের শিশু সিহাব হোসেন। দুই বছর ধরে আছে শিশু পরিবারের। সিহাব বলে, ‘আমরা ঘুম থেকে উঠে ময়দানে যাই। ভালো ভালো খাই ওইদিন। খেলাধুলা করি। ভালো লাগে।’
কথা হয় নীলফামারী সরকারি শিশু পরিবারের সহকারী শিক্ষক দীপুল সরকারের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতি ঈদেই এখানকার বাসিন্দাদের জন্য নানা আয়োজন করা হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। উন্নত খাবারের পাশাপাশি ক্রিকেট ম্যাচ, দৌড় প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন করা হয়েছে। সবমিলিয়ে এবারও তাদের ঈদটা ভালো কাটবে ইনশা আল্লাহ।’

সরকারি শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক হৃদয় হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা একটা পরিবারের মতো ঈদ কাটাবো এখানে। এরই মধ্যে সবাইকে নতুন জামা দেওয়া হয়েছে। সরকার নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের দিন উন্নতমানের খারার পরিবেশন করা হবে। প্রতিবার ডিসি স্যার আসেন। এবারেও আসবেন। তাদের জন্য নানা উপহার নিয়ে আসেন তিনি। সবমিলিয়ে সুন্দর একটি ঈদ কাটবে আশা করি।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের দিনে শিশু পরিবারের শিশুদের ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে আমরা সেখানে যাবো। তাদের সঙ্গে সময় কাটাবো।
বর্তমানে নীলফামারী শিশু পরিবারের ৫৩ জন নিবাসী রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে তাদের প্রত্যেককেই একটি করে পায়জামা-পাঞ্জাবি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
রাজু আহম্মেদ/এসআর/এমএস