ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

টাঙ্গাইলে দেড়শ বছরের মেলায় জামাইদের ভিড়

জেলা প্রতিনিধি | টাঙ্গাইল | প্রকাশিত: ০১:৪৬ এএম, ২৭ এপ্রিল ২০২৩

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুরে চলছে তিন দিনব্যাপী ‘জামাই মেলা’। রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) পর্যন্ত। একদিকে ঈদের আনন্দ, অপরদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে স্কুল মাঠে নেমেছে মানুষের ঢল। এ মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় বইছে উৎসবের আমেজ।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছরের ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) রসুলপুরে মেলা বসে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের অন্তত ৩০ গ্রামের জামাইরা শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন। তারাই মেলার মূল আকর্ষণ। আর মেলায় জমায়েত হন ৩০ গ্রামের জামাইরা। এছাড়া মেলার দিন শাশুড়িরা মেয়ের জামাইয়ের হাতে সামথ্র্য অনুসারে টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে জামাই বাজার করে এনে শ্বশুরবাড়ির লোকদের খাওয়ান। এ কারণেই মেলাটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। তিন দিনে রসুলপুরসহ আশপাশের গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়।

মেলায় বিভিন্ন ধরনের খেলনা, প্রসাধনী, খাবারের দোকানসহ ছোট-বড় দেড় শতাধিক দোকান বসেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন দোকানিরা। মিষ্টি জাতীয় পণ্যের দোকানও আছে। এছাড়া এ মেলায় একাধিক ফার্নিচারের দোকানও বসেছে। বড়দের পাশাপাশি ছোট ছেলে-মেয়েরাও মেলা উপভোগ করছে।

মেলায় ঘুরতে আসা সুকুমার সাহা ও প্রদীপ সাহা বলেন, প্রতিবছরই আমরা শ্বশুরবাড়ি থেকে মেলায় আসার দাওয়াত পাই। এই মেলা আমাদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে ভাব বিনিময় হয়। সব মিলিয়ে আমরা মেলার দিন আনন্দে মেতে উঠি। এই মেলা জামাই মেলা নামেই পরিচিত।

রসুলপুরের শিল্পী, রতনসহ একাধিক ক্রেতা বলেন, প্রতিবছরই আমরা এ মেলায় আসি। ভীষণ আনন্দ পাই মেলায় ঘুরে। এ মেলা প্রতিবছরই রমরমা হয়ে থাকে। আয়োজকরা আইনশৃঙ্খলা ভালো রাখায় আমরাও নিরাপত্তাবোধ করি।

রসুলপুর গ্রামের প্রবীণ হারেজ মিয়া বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখনও দাদার কাছে এই মেলার কথা শুনেছি। বাড়ির মেয়ের জামাইরা মেলাকে কেন্দ্র করে বাড়ি আসায় ও মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এই মেলা প্রতিবছর জমে ওঠে। এটি জেলার মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বড় মেলা।

jagonews24.com

পার্শ্ববর্তী বড় বাসালিয়া গ্রামের আকড়ি ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমি রডমিস্ত্রির কাজ করি। মেলা আসলে একটু বাড়তি লাভের আশায় কয়েক বছর ধরে আকড়ি বিক্রি করছি। বর্তমানে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে আকড়ি বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যবসা ভালোই হচ্ছে। অন্যান্য মেলার চেয়ে এ মেলা অনেক নিরাপদ।

আরেক ব্যবসায়ী ফরিদা বেগম বলেন, এটি টাঙ্গাইল জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। দুপুর থেকেই নারী-পুরুষ, শিশু থেকে বৃদ্ধ সব শ্রেণি পেশার মানুষ মেলায় ভিড় করছে। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন। আমাদের বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।

কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাশেদ রহমান বলেন, জামাই মেলার বয়স দেড়শ বছরের মতো হবে। এ এলাকার মানুষের কাছে এই মেলা উৎসবের। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত।

এ বিষয়ে মেলার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসেম জানান, মেলায় দুই শতাধিক দোকান বসেছে। এই মেলায় মিষ্টি জাতীয় খাবার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। মেলায় খাবার আইটেম, খেলনাসহ বিভিন্ন ফার্নিচারও পাওয়া যায়।

তিনি আরও জানান, মেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রসুলপুরসহ আশপাশের গ্রামের যুবকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করা হয়েছে। এতে করে মেলার পরিবেশ স্বাভাবিক থাকে।

আরিফ উর রহমান টগর/কেএসআর