ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ফসলি জমিতে রাতভর বুনো শুয়োরের তাণ্ডব, রাত জেগে পাহারা

সোহান মাহমুদ | প্রকাশিত: ০৮:৩৭ পিএম, ২৩ মে ২০২৩

অন্ধকার হলেই সীমান্তঘেঁষা ফসলি জমিতে নেমে আসে একঝাঁক বুনো শুয়োর। ধান, গম, ভুট্টা, পাটসহ বিভিন্ন ফসল সারারাত নষ্ট করার পর ফের ফিরে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনকষা ইউনিয়নের ঠুঁঠাপাড়া গ্রামের ফসলি জমিতে প্রতিদিনই এমনটা ঘটছে।

ফসল বাঁচাতে রাত জেগে পাহারা দিলেও মিলছে না ফল। উল্টো রাতে পাহারা দিতে গিয়ে বুনো শুয়োরের হামলার শিকার হয়েছেন অনেকে। তাই হতাশ আর আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে কৃষকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরই মধ্যে পাঁচ-সাতটি বুনো শুয়োয়র মেরে ফেলেছেন কৃষকরা। তবে এতে শান্তি নেই তাদের। কারণ প্রতিদিনই ১০০-১৫০টির মতো বুনো শুয়ো ঝাঁক বেঁধে জমিতে নেমে আসে। একেকেটা শুয়োর নষ্ট করছে প্রায় ৪০০ বিঘা জমির ফসল।

তাঁরাপুর গ্রামের কৃষক আসাদুল্লাহ বলেন, তিন মাস থেকে আমাদের ঠুঁঠাপাড়া মাঠের জমিতে ঝাঁক মেলে বুনো শুয়োর আসছে। এরা প্রতিদিন রাতে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এসে আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে। আমার দুই বিঘা জমিতে ভুট্টা ছিল। বুনো শুয়োরগুলো এসে সব নষ্ট করে দিয়েছে। এখন ফের ধান আছে জমিতে, সেগুলোও নষ্ট করছে।

তিনি আরও বলেন, গ্রামবাসী মিলে প্রায় কয়েকটি বুনো শুয়োর মেরেছি। কিন্তু কমছে না। করণ এগুলো অনেক আছে।

তাঁরাপুর মড়ল পাড়া এলাকার বাসিন্দা সামাদ আলী বলেন, ভারত থেকে এসে বুনো শুয়োর প্রতিটি ফসলের ক্ষতি করছে। এগুলো দেখতেও ভয়ঙ্কর। আমার জমিতে এখন ধান আছে। সারারাত বসে থেকে জমি পাহারা দেই। ঘুমাতে পারি না। অনেকে কাঁচা ধান কেটে নিচ্ছে বুনো শুয়োরের ভয়ে। একেকটা বুনো শুয়োরের ওজন দুই থেকে আড়াই মণ। যে ফসলের ওপর দিয়ে ছোটাছুটি করে, সেখানকার সব শেষ করে দেয়। ধান ছাড়াও গম ও ভুট্টার ব্যাপক ক্ষতি করেছে এরা।

মনাকষা ইউনিয়নের ঠুঁঠাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ধান চাষি সাদ্দাম আলী বলেন, আমার এবছর দুই বিঘা ধান আছে। কিন্তু এখনো পাকেনি। তবুও ধান কেটে নিতে হচ্ছে। কারণ ভারত থেকে বুনো শুয়োর সীমান্ত পেরিয়ে ফসলের মাঠে আসে। সারারাত থেকে আবারও ফজরের আজানের সময় সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে যায়। আর যে জমির ওপর দিয়ে শুয়োরের দল যায়, তা ধ্বংস হয়ে যায়। সমস্ত ফলন ঝরে পড়ে। ধান কাটার পর শুকানোর পর আঁটি বেঁধে মাড়াই করার কথা থাকলেও তা করবো না। কারণ কাটা ধানের ওপর দিয়ে গেলে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবো।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা আছে। কিন্তু বুনো শুয়োর থাকা এলাকাটি ভারতীয় সীমানার মধ্যে। জঙ্গল ও নদীর ধারে হওয়ায় সেখানে কোন তারের বেড়া নেই। ফলে অবাধে বুনো শুয়োরের দল চলাফেরা করতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম আলী নামে আরও এক কৃষক বলেন, গভীর রাতে পাহারা দেয়াও নিরাপদ নয়। কারণ কয়েক গজ দূরত্বে জিরো লাইন। ওপারে বিএসএফ ও এপারে বিজিবি। রাতের অন্ধকারে পাহারা দিতে এলেই নানারকম হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ ভীষণ ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এর আগেও শুনেছি এমন ঘটনা। তবে এ বছর বেড়েছে। বন বিভাগকে বিষয়টি জনিয়েছি। আশা করছি দ্রুত বন বিভাগ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।

শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হায়াত জাগো নিউজকে বলেন, এরই মধ্যে বিভাগীয় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে জানিয়েছিলাম। তারা এসে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সীমান্ত এলাকায় এক ধরনের সাউন্ড তৈরি করতে হবে। এতে ভারত থেকে আসা বুনো শুয়োরগুলো রাস্তা পরিবর্তন করবে। এছাড়া কৃষকরা যদি রাত জেগে কয়েকদিন তাড়া করে, এতেও তারা রাস্তা পরিবর্তন করবে।

এসজে/এএসএম