ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

শহীদ সুফিয়া সরকারি বিদ্যালয়

বছরজুড়েই জলাবদ্ধতা, নেই খাবার পানি-খেলার মাঠ

জেলা প্রতিনিধি | মাদারীপুর | প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ১১ জুন ২০২৩

মাদারীপুরের শহীদ সুফিয়া পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পড়ে আছে অযত্নে-অবহেলায়। নানা সমস্যা নিয়ে কোনো রকম চলছে স্কুলের শিক্ষাক্রম। ক্লাসরুমও সংকট। নেই বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা ও শৌচাগার। এমনটি মাঠের জন্য সরকারি জায়গা থাকা সত্ত্বেও ভরাটের অভাবে বছরজুড়েই থাকে জলাবদ্ধতা। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা থাকলেও নেই কোনো পরিবর্তন।

জানা যায়, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে সরকারি করা হয়। ২০০৪ সালে বিদ্যালয়ের টিনের ঘর ভেঙ্গে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হয়। বন্যাসহ বিভিন্ন দুর্যোগে অসহায়দের আশ্রয়ণের জন্য নিচের তলা খালি রেখে দ্বিতীয় তলায় ক্লাসরুম নির্মাণ করা হয়। তিনটি শ্রেণী কক্ষ ও শিক্ষকদের জন্য একটি ছোট কক্ষ ও একটি টয়লেট বানানো হয়। এতে করে মাত্র তিনটি কক্ষে ক্লাস নিতেও সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষকদের। তাছাড়া ছোট একটি কক্ষে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও সব ধরণের অফিসিয়াল কাজ করতে হয়। এতে করে তাদের পড়তে হয় নানা সমস্যায়।

Madaripur.jpg

শুধু তাই নয়, ১৭০ জন শিক্ষার্থী ও ছয়জন শিক্ষকের খাবার পানি নিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। প্রায় দুই বছর আগে মাদারীপুর জন স্বাস্থ্য প্রকৌশলী থেকে টিপ টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করলেও এখন তা পরিপূর্ণভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় সংলগ্ন বাড়িগুলো থেকে এনে পানি খেতে হয়।

আরও পড়ুন: অনিয়মের সত্যতা মিলেছে, শিক্ষকের বেতন-ভাতা স্থগিতের নোটিশ

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করার জন্য শৌচাগারটির অবস্থা জরাজীর্ণ। বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। তাছাড়া প্রায় সময় জলাবদ্ধতা থাকায় শৌচাগারে যাতায়াতের পথে বড় বড় ঘাস হয়েছে। ফলে এই পথ দিয়ে সাপ ও পোকামাকড়ের ভয় থাকায় শিক্ষার্থীরা যেতে ভয় পায়। তাই জরুরিভাবে টয়লেট দরকার।

আরও দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পিছন দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠতে হয়। পুরো বর্ষা মৌসুমে সিঁড়ি পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকে। এছাড়াও বাকি সময় বিদ্যালয় থেকে সামান্য একটু দুরে সরকারি খাল জলাবদ্ধতায় ভরা থাকে। সরকারি এই খালটি বিদ্যালয়ের নামে লিজ নেওয়া। তাই এই খালটি ভরাট করলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলার জন্য মাঠ পাবে। পাশাপাশি ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে আসতে পারবে। অভিভাবকরাও স্বস্তি পাবেন।

সাবা, রেজা, সিমা, শিউলি, আয়ান, আরাফ, আলিফ, তাবসুমসহ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তাদের বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। তারা খেলতে পারে না। বিদ্যালয়ের পাশে পানি থাকায় তারা ভয়ও পায়। তাছাড়া খাবার পানি না থাকায় পাশের বিভিন্ন বাড়িতে পানি খেতে গেলে বিরক্ত হয়।

Madaripur.jpg

আরও পড়ুন: প্রাথমিক-মাধ্যমিকের স্কুল-মাদরাসা খুললো আজ

বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী সিমা আক্তারের মা আকলিমা বেগম বলেন, বিদ্যালয়ের পাশেই সব সময় জলাবদ্ধতা থাকে। পানিতে পড়ে যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাই মেয়েকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় লাগে। কি করবো তবুও বিদ্যালয়ে পাঠাতে হচ্ছে। তাই সব শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এটি ভরাট করা প্রয়োজন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নুরজাহান বেগম বলেন, আমার যে কক্ষে বসে অফিসিয়াল কাজ করি, সেই কক্ষটি ছোট। এক সঙ্গে সবাই মিলে কাজ করতে বা টিফিনের সময় বিশ্রাম নিতেও সমস্যা হয়। পাশাপাশি তিনটি শ্রেণি কক্ষ দিয়েই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হয়। তাই শ্রেণি কক্ষও দরকার।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা আক্তার বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে অনেকগুলো সমস্যা আছে। বিশেষ করে খেলার মাঠ নেই। বর্ষার সময় একদম সিঁড়ি পর্যন্ত পানি চলে আসে। বিদ্যালয়ে শ্রেণী কক্ষের অভাব, খাবার পানি ও শৌচাগার জরুরি। বিদ্যালয়ে টিপ টিউবওয়েলে বসানো হলেও আনুষঙ্গিক কিছু কাজের জন্য তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আমি এখানে ২০১৭ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। তখন বিদ্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৯৮ জন। সেখানে আমি অনেক চেষ্টা করে, পড়াশুনার মান বাড়িয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়ে ১৭০ জন।

আরও পড়ুন: লোহাগড়ায় শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের এ সমস্যাগুলো না থাকলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। অনেক অভিভাবক এ বিদ্যালয়ে তার সন্তানদের পাঠাতে আগ্রহী হতো। এখানের নানা সমস্যার কারণে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের এখানে ভর্তি করতে চান না। তাই শিক্ষার মান ও সুষ্ঠু এবং সুন্দর পরিবেশের জন্য এই সমস্যাগুলোর সমাধান জরুরি। এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

Madaripur.jpg

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইউসুফ আলী খান বলেন, বিদ্যালয়টি ভরাটের ব্যাপারে আমি মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খানসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি। তাছাড়া এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের বরাবরেও একটি আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়টির জায়গার একটি বড় অংশ হচ্ছে সরকারি খাস জমি। লিজের জমি হওয়ায় প্রতিবছর নবায়ন করার জন্য সরকারিভাবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা দিতে হয়। সরকারি বিদ্যালয়, এখানে বাড়তি টাকার কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই নবায়ন করার জন্য যে টাকার প্রয়োজন হয়, তা দেওয়াও সম্ভব হয়না। এটাও বিদ্যালয়ের জন্য একটি বড় সমস্যা।

আরও পড়ুন: গাছ লাগালেই মিলবে অ্যাসাইনমেন্টের নম্বর

মাদারীপুরের প্রাথমিক সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, আমি এরই মধ্যে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। বিদ্যালয়টিতে নানা সমস্যা আছে। বিদ্যালয়ে মাঠ ভরাটের জন্য যে টাকার দরকার, তা সরকারিভাবে বরাদ্দ নেই। তবুও আমরা চেষ্টা করছি। শ্রেণি কক্ষ সংকট আছে, যে ব্যাপারেও তালিকা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাইনউদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ নেই। তবে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি দরখাস্ত দিলে সরকারিভাবে টিআর আসলে তা দিয়ে ভরাটের ব্যাপারে কিছুটা সহযোগিতা করা যেতে পারে।

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/জেএস/এমএস