ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

হবিগঞ্জের নিখোঁজ ৪ শিশু মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়েছিল

প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, ১৩ মার্চ ২০১৬

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে নিখোঁজ ৪ শিশু মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত পড়ার চাপ ও কড়া শাসনের কারণেই তারা পালায়। মাদ্রাসার পড়া থেকে মুক্তি পেতে তারা সিলেটে মাজার জিয়ারত করতে গিয়েছিল। উদ্ধার হওয়ার পর রোববার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তারা এমন তথ্য জানিয়েছে।

তবে কড়া শাসন বা বেত্রাঘাতের জন্য মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো আইনী পদক্ষেপ নিতে চাননা বলে জানিয়েছেন শিশুদের অভিভাবকরা। একইসঙ্গে এমন শাসনের জন্য শিক্ষক নিজেও অনুতপ্ত বলে জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র জানান, শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের সিসি টিভি ফুটেজ দেখে তারা নিশ্চিত হন যে চার জন শিশু সিলেটগামী পাহাড়িকা ট্রেনে উঠেছে। এরপর শনিবার তারা সিলেটে মাজারসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ পাঠিয়ে তল্লাসী শুরু করেন। এর মাঝে ৩ শিশু আবার ঢাকাগামী পারাবত ট্রেনে করে শায়েস্তাগঞ্জে এসে নেমে বানিয়াচং উপজেলার বালিখাল গ্রামে নয়নের ফুফুর বাড়ি যায়। সেখান থেকে পুলিশ রাতে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। অপরজনকে রাত ৩টায় সিলেট হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর মাজার থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, মাদ্রাসায় ছোটখাট শারীরিক নির্যাতন হয়েছিল। এছাড়া কড়া শাসনের কারণে মানসিক চাপে তারা মাজারে গিয়েছিল। যেন তারা এ থেকে পরিত্রাণ পায়। শিশুদেরকে উদ্ধারের পর থেকে তাদের অভিভাবক, মাদ্রাসার শিক্ষক, ব্যাবস্থাপনা কমিটিসহ বৈঠক করা হয়েছে।

যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের নির্যাতন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, তাই এ বিষয়ে অভিভাবকরা কোনো ব্যবস্থা নিতে চান কি-না প্রশ্ন করা হলে অভিভাবকরা জানান, তারা শিক্ষককে একবার সময় দিতে চান। শিক্ষককে কারাগারে দিতে তারা রাজি নন। আবার শিক্ষক নিজেও এ নির্যাতনের জন্য অনুতপ্ত হয়েছেন বলেও তিনি জানান।

শিশুরা জানায়, হুজুর তাদের শাসন করেছিলেন। এ জন্য তারা মাজারে গিয়েছিল দোয়া করতে। যেন তারা শাসন, নির্যাতন থেকে মুক্তি পায়।

শিশুদের অভিভাবকরা জানান, শাসন না হলে মাদ্রাসায় শিশুরা পড়তে চায়না। তারা শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে চাননা।

পুলিশ ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার সুতাং পূর্ব নোয়াগাঁও সুন্নিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র বাহুবল উপজেলার পশ্চিম শাহাপুর প্রকাশিত চারগাঁও গ্রামের আহমদ রশিদ মনুর ছেলে তানভীর রশিদ রাফি (১৩), তার ভাগ্নে একই উপজেলার আব্দানারায়ন গ্রামের আব্দুল আহাদের ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ (১২), নবীগঞ্জ উপজেলার সুজাপুর গ্রামের আব্দুল্লাহর ছেলে আজহারুল ইসলাম নয়ন (১২) ও সদর উপজেলার দরিয়াপুর গ্রামের আব্দুল আওয়ালের ছেলে সোহানুর রহমান (১১) শুক্রবার মাদ্রাসা থেকে বের হয়। শায়েস্তাগঞ্জে পাঞ্জাবী বানানোর কথা বলে যায় তারা। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত তারা ফিরে না আসায় সর্বত্র হুলস্থূল পড়ে যায়। দেশ-বিদেশে গণমাধ্যমে বিষয়টি আলোড়ন সৃষ্টি করে।

এ খবরে পুলিশ সিলেট বিভাগের সর্বত্র তাদের সন্ধানে অভিযান শুরু করে। এদিকে শনিবার বিকেলে তাদের মধ্যে রাফি, ইমতিয়াজ ও নয়ন ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনযোগে শায়েস্তাগঞ্জে আসে। তারা সেখান থেকে রাতে নয়নের ফুফুর বাড়ি বানিয়াচং উপজেলার বালিখাল গ্রামে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ রাত সাড়ে ৯টায় তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

আর সোহানুর হযরত শাহপরান (রহঃ) এর মাজার জিয়ারত করতে যায়। সেখান থেকে রাত যাপনের জন্য সে হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর মাজারে আসে। রাতভর শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মুখলেছের নেতৃত্বে পুলিশ মাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাত ৩টায় তাকে উদ্ধার করে।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এফএ/পিআর

আরও পড়ুন