ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

জমির গাছ নিয়ে বিরোধ, বাবা-ছেলে মিলে বৃদ্ধাকে মারধর

জেলা প্রতিনিধি | টাঙ্গাইল | প্রকাশিত: ০৯:৩২ এএম, ১৫ জুন ২০২৩

জমির গাছ নিয়ে বিরোধে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু আদালতের স্টেনো আবু তাহের (৪০) এবং তার বাবা মোহাম্মদ আলীর (৬৫) বিরুদ্ধে এক বৃদ্ধাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর আহত বৃদ্ধা হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও পরিবারটি আতঙ্কে আছে।

গত ৭ জুন টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের আইসরা উত্তরপাড়া গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বুধবার (১৪ জুন) মোহাম্মদ আলী এবং আবু তাহেরকে বিবাদী করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন নির্যাতিত হামিদা বেগম ওরফে খুকি (৫৫)।

ভুক্তভোগী বলেন, আমি নাকি সড়কে ঘর দিয়েছি। এ কারণে আমার বাড়ির গাছ কাটতে বলে আবু তাহের ও মোহাম্মদ। আমি বলি, ঘর দিয়েছি শ্বশুরের সম্পত্তিতে, গাছ কাটবো কেন? মোহাম্মদ বলে, ‘গাছ কাটবি না, তোকে আর তোর মেয়েকে মারলে তোরা কি করতে পারবি? কিছুই করতে পারবি না।’ এসময় আমি বলি, তোমাদের গাছ আমাদের জমিতে আসছে, আমরা তো কিছু বলি না। এরপরও তোমরা আমার জমির গাছ কী কারণে কাটতে বলতাছো?

এ কথা বলতেই মোহাম্মদ আর তার ছেলে আবু তাহের আমাকে মারধর করতে শুরু করে। এ সময় আবু তাহের বলে, ‘তোকে মেরে ফেললে তুই কী করবি?’ তাহেরের বাবা মোহাম্মদ হাতে থাকা লোহার বালতি দিয়ে আমার মুখে আঘাত করে। আঘাতটি আমার কপালে লেগে ফেটে গেছে।

মারধরের শিকার বৃদ্ধার মেয়ে শাহানাজ বলেন, মোহাম্মদ লোহার বালতি দিয়ে মেরে আমার মায়ের কপাল ফাটিয়ে দিয়েছে। এসময় আবু তাহের তাকে লাথি মেরেছে। মাকে বাঁচাতে আমি এগিয়ে যাওয়ায় তারা বলে, ‘ফারুক (মেহেদী হাসান ফারুক) তোদের মাইরা ফালাইলে তোরা কী করবি?’ আবু তাহের আদালতে চাকরি করার ক্ষমতায় মাদক কারবারি ফারুকের পক্ষ নিয়ে আমাদের ওপর অত্যাচার শুরু করেছে। মায়ের ওপর হামলার কঠোর বিচারসহ নিরাপত্তার দাবি করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, আবু তাহের টাঙ্গাইল নারী ও শিশু আদালতের স্টেনো হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। বৃদ্ধার স্বামী শাহজাহান প্যারালাইসিসের রোগী হওয়ায় পাশে দাঁড়ানোর মতো তেমন কোনো পুরুষ না থাকার সুযোগ নিয়ে ফারুককে সহায়তা করতে পরিবারটির বিরুদ্ধে নানাধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন আবু তাহের আর তার বাবা মোহাম্মদ। এরই জেরে বৃদ্ধা খুকির ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আবু তাহের এবং তার বাবা মোহাম্মদ গ্রামের প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে বা তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।

লোহার বালতি দিয়ে বৃদ্ধা খুকিকে আঘাত করার কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত মোহাম্মদ। তিনি বলেন, খুকি বারবার আমাকে জমির খুঁটি তুলে ফেলার জন্য দায়ী করছিল। এ কারণে আমার রাগ উঠে যায়। আমি খুকিকে বালতি দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করি। সেসময় হঠাৎ বালতিটি খুকির কপালে লেগে কেটে যায়।

এদিকে, কর্তৃপক্ষের অনুমতির দোহায় দিয়ে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন টাঙ্গাইল নারী ও শিশু আদালতের স্টেনো আবু তাহের।

তবে অভিযোগের বিষয়ে মেহেদী হাসান ফারুক বলেন, প্যারালাইসিস রোগী শাহজাহান আমার চাচা আর খুকি আমার চাচি। মারধরের ঘটনায় আমি ছিলাম না। কেন আমার নাম বলা হয়েছে, সেটিও আমি জানি না।

স্থানীয় মাতব্বর আবু সামা বলেন, বৃদ্ধা খুকিকে মারার ঘটনাটি দুঃখজনক। উভয়ের বাড়িতে গিয়ে আমি ঘটনার কারণ জেনেছি। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করতে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি।

ফুলকী ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বাবুল মিয়া বলেন, খুকির পরিবারটি নানাভাবে অত্যাচারিত। মারধরের বিষয়টি খুকির পরিবার থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। তবে মোহাম্মদ বা আবু তাহের এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি। উভয়পক্ষ সম্মতি দিলে এ বিষয়টি সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. ওয়ারেজ আলী মিয়া (নান্নু) বলেন, মারধরের ঘটনায় বুধবার বৃদ্ধা হামিদা বেগম ওরফে খুকি বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত।

আদালত প্রাঙ্গণেও নানাভাবে বিতর্কিত টাঙ্গাইল নারী ও শিশু আদালতের স্টেনো আবু তাহের। সম্প্রতি আইনজীবীর মৃত্যুজনিত কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধের ওইদিনই অবৈধ প্রক্রিয়ায় একটি মামলার আসামিকে জামিন করার অপরাধে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছিল। আবু তাহের সেখানে কিছুদিন চাকরি করে আবার টাঙ্গাইল নারী ও শিশু আদালতের স্টেনো হিসেবে যোগদান করেছেন।

আরিফ উর রহমান টগর/এমআরআর/এএসএম