নরসিংদীতে বেতন-বোনাসের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
নরসিংদীতে বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে কারখানার সামনে মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। এর ফলে পাঁচদোনা-ঘোড়াশাল ও টঙ্গি মহাসড়কে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বেতন দেওয়ার আশ্বাসে দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা।
সোমবার (১৯ জুন) নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনা এলাকায় পাকিজা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মমটেক্স হোম ফ্যাশন ও মমটেক্স এক্সপো লিমিটেডের সহস্রাধিক শ্রমিক এই আন্দোলন করেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, পাকিজা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস বেডশিটসহ বিভিন্ন বস্ত্র তৈরি হয়। এখানে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গত কয়েক মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো পরিশোধ করছে না। তাদের দুই থেকে চারমাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। এখন তাদের পুরো মাসের বেতন একসঙ্গে না দিয়ে কিস্তি আকারে দেওয়া হয়। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বেলা ১১টার দিকে মমটেক্স হোম ফ্যাশন ও মমটেক্স এক্সপোর শ্রমিকরা কারখানা গেটের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে কারখানার অন্য শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ দেন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা পাঁচদোনা-ঘোড়াশাল ও টঙ্গি মহাসড়ক অবরোধ করেন। এর ফলে পাঁচদোনা থেকে ঘোড়াশাল শহীদ ময়েজ উদ্দিন সেতু পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে পাঁচদোনা ফাঁড়ি, নরসিংদী সদর থানা পুলিশ, শিল্পাঞ্চল পুলিশ, নরসিংদী সদর এসিল্যান্ড মেহেদী হাসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো আশ্বাসেই শ্রমিকদের নিবৃত করা যাচ্ছিল না। পরে তাৎক্ষণিক বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে দুপুর আড়াইটার দিকে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেন।
আন্দোলনরত শ্রমিক রকিব মিয়া বলে, বিভিন্ন সেকশনের শ্রমিকদের প্রায় দুই থেকে চার মাসের বেতন আটকে দিয়েছে মালিকপক্ষ। যার ফলে শ্রমিকরা বাড়ি ভাড়া, থাকা-খাওয়াসহ নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন। কোরবানি ঈদ সামনে রেখেও বোনাস দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তাই আন্দোলনে নেমেছি।

আন্দোলনরত অপর শ্রমিক বিলকিস বেগম বলেন, বেতন ঠিক মতো পাচ্ছি না। বোনাস দিচ্ছে না। প্রতিমাসে ২০ থেকে ২২ তারিখের আগে টাকা পাই না। আমরা কীভাবে চলি? আমরা প্রতিমাসের ৫ তারিখের মধ্যে বেতন চাই।
মমটেক্স এক্সপোর জিএম আবুল বাশার বলেন, শ্রমিকরা ঈদ উপলক্ষে ১৫ দিনের অগ্রিম বেতন দেওয়ার দাবি করেছে, যা আমাদের কারখানার ইতিহাসে নেই। তারপরও আমরা আমাদের এমডির সঙ্গে কথা বলে তাদের সব দাবি মেনে নিয়েছি। আমরা তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজকেই দেড় মাসের বেতন দিয়ে দিয়েছি। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঈদের বোনাস দিয়ে দেওয়া হবে। যেসব শ্রমিকের ছুটির বেতন বকেয়া তা আগামী ২৭ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধুরী বলেন, মূলত বেতন-ভাতা নিয়ে অসন্তোষের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি শিল্পাঞ্চল পুলিশ দেখছে। তারপরও নরসিংদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সমাধানের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আপাতত সড়কে কোনো সমস্যা নেই।
সঞ্জিত সাহা/এমআরআর/এমএস