বহুমাত্রিক উন্নয়ন
পদ্মা সেতু মাদারীপুরবাসীর জন্য আশীর্বাদ
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর এক বছর পূর্ণ হলো। এই সেতু হচ্ছে মাদারীপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এই সেতুর জন্য বদলে যাচ্ছে মাদারীপুর জেলাসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চল। জেলাজুড়ে চলছে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। গত বছরের ২৫ জুন মাদারীপুরবাসীর জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে পদ্মা সেতু।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুরে বহুমাত্রিক উন্নয়নে পাল্টে যাচ্ছে দৃশ্যপট। এক সময়ের উত্তাল পদ্মা নদীর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ে মাদারীপুর-শরীয়তপুর আর উত্তর পূর্ব পাড়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা ছিল দুর্গম পারাপার। পদ্মা পারাপারে বহু মানুষকে দিতে হয়েছে প্রাণ। অসংখ্য মানুষ তার প্রিয়জনকে হারিয়েছে। আজ সেই দুর্গম পথ সহজ ও শান্তিময় করেছে পদ্মা সেতু।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতু ঘিরে মাদারীপুরে নির্মাণ করা হয়েছে বহু স্থাপনা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উন্নত দেশের আদলে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে (যাত্রাবাড়ী-শিবচর-ভাঙ্গা), পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প ও আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর রেল সেতু নির্মাণ, ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ট্রমা সেন্টার, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, শেখ হাসিনা সড়ক, চৌধুরী ফাতেমা বেগম পৌর অডিটোরিয়াম, রেজাউল করিম তালুকদার টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পৌর বাসস্ট্যান্ড, চারটি পুলিশ ফাঁড়ি, চৌধুরী ফিরোজা বেগম শিল্পকলা একাডেমি ও মুক্তমঞ্চ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কমপ্লেক্স ভবন, নুর-ই-আলম চৌধুরী অডিটোরিয়াম, ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী পৌর সুপার মার্কেট, ২০টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ৪১টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ইনডোর স্টেডিয়াম, ১৯টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, দাদাভাই উপ-শহর, তিনটি তদন্ত কেন্দ্র, একটি নৌপুলিশ ফাঁড়ি, দুটি পুলিশ ক্যাম্প, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবন, ডাকবাংলো ও শেখ হাসিনা ফ্রন্টিয়াল টেকনোলজি। এরইমধ্যে এ কাজগুলো শেষ হয়েছে। অনেকগুলোর কাজ শুরু হয়েছে। কিছু আছে উদ্বোধনের অপেক্ষায়। শিগগির সেগুলোর কার্যক্রম শুরু হবে।
আরও পড়ুন: ঢাকার যানজটে মাদারীপুর থেকে অফিস করার স্বপ্ন অধরা

এছাড়া জেলাজুড়ে বহু কাজ চলমানের পাশাপাশি প্রণয়ন করা হয়েছে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড হাইটেক পার্ক, ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শেখ হাসিনা টেক্সটাইল কলেজ, শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা নার্সিং ইনস্টিটিউট ও ট্রেনিং সেন্টার, দাদাভাই হাউজিং (উপ-শহর) যার প্লট সংখ্যা ৮৭৮টি, দুটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, চারটি ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, শিবচর উপজেলা মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স, শেখ রাসেল শিশু পার্ক, ইউনিয়ন ভুমি অফিস, সাতটি গুচ্ছগ্রাম, চারটি আধুনিক মার্কেট, ২৭০টি মসজিদ, প্রস্তাবিত ডিজিটাল নার্সারি কেন্দ্র, ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি, বিসিক শিল্প নগরী, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অলিম্পিক ভিলেজ, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন, চারটি মুজিব কেল্লা, তিনটি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, কৃষি ভবন, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, সার্কেল এএসপি অফিস, শেখ রাসেল শিশু পার্ক, গণশিক্ষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বিদ্যুৎকেন্দ্র।
চলমান ও অপেক্ষমাণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে মাদারীপুর প্রবেশ করবে ডিজিটাল যুগে। গড়ে উঠবে বৃহৎ অর্থনৈতিক জোন। এরইমধ্যে পদ্মা সেতুর জন্য মেগা প্রকল্প ছাড়াও অসংখ্য ছোট-বড় প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় জনগণ তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পেতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথে এক বছর ধরে হাজারো মানুষ নানা সুবিধা ভোগ করছে। জেলায় উঁকি দিচ্ছে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত। এতে মাদারীপুরসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে।
আরও পড়ুন: শরীয়তপুরের কৃষিখাতে সুবাতাস
শিবচরের আওয়ামী লীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু ঘিরে শিবচরে ১২০ একর জমির ওপর ১ হাজার ৯১১ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি নির্মাণকাজ। এ প্রকল্পে প্রত্যেক তাঁতির জন্য ৬০০ ফুটের কারখানা ও ৮০০ ফুটের মধ্যে আবাসন সুবিধা থাকবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের শোরুম ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তাঁতিদের ছেলেমেয়েদের জন্য থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, যা হবে দেশের জন্য মডেল।
মাদারীপুরের নেসারউদ্দিন, জসিম মিয়া, আফজাল হোসেন ও আনোয়ার হোসেন জানান, পদ্মা সেতু হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণ। এটা যেমন ঢাকাসহ সারা দেশকে এক সুতোয় বেঁধেছে তেমনি উন্নয়নের দিক থেকেও এগিয়ে যাচ্ছে। বলতে গেলে শিবচর উপজেলা এখন বাংলাদেশের যেকোনো জেলা শহরের চেয়ে উন্নত।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে শিবচরসহ মাদারীপুর জেলাজুড়ে নানা উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। এরইমধ্যে অনেক কাজ শেষ হয়েছে। এখনও বহু কাজ চলমান, যা শেষ হলে এই জেলা উন্নয়নের রোল মডেল হবে। এখানকার অর্থনৈতিক দিকগুলোর অনেক পরির্বতন ঘটবে। পদ্মা সেতুর জন্য শিবচরসহ দক্ষিণাঞ্চলে নতুন ধরনের অর্থনৈতিক পরিবর্তন শুরু হয়েছে।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের পর থেকেই মাদারীপুরে নানা উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়েছে। অনেক মানুষ এই সেতুর জন্যই কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। এই সেতু হচ্ছে মাদারীপুর জেলার মানুষের জন্য আশীর্বাদ।
মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, মাদারীপুরে পদ্মা সেতুর জন্য অনেক নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। বর্তমানে অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এছাড়া পদ্মা সেতুর জন্যই নতুন নতুন প্রকল্প পাস হচ্ছে। এগুলোর কাজ শেষ হলে এই জেলা হবে নানামুখী উন্নয়নের নিদর্শন। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। শেখ হাসিনা আছেন বলেই আজ স্বপ্নের এই পদ্মা সেতুর সুবিধা আমরা ভোগ করতে পারছি।
আরও পড়ুন: জলের ‘পাগলা ঘোড়া’ ডাঙায় ঘুমায়

মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য আজ মাদারীপুরের বহু উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। পদ্মা সেতুর জন্যই দিন দিন মাদারীপুর জেলা উন্নয়নের দ্বার প্রান্তে পৌঁছাচ্ছে।
মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করে শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে সুনাম অর্জন করেছেন। পদ্মা সেতুর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ নানা সুবিধা ভোগ করছেন। এক সময়ের অবহেলিত এই জেলা এখন উন্নয়নের মডেল।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এসএইচএস/জিকেএস