সংরক্ষণে প্রস্তুত নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা, বকেয়া পরিশোধের দাবি
চলছে ধোয়ামোছার কাজ
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজার নাটোরের চকবৈদ্যনাথ। কোরবানি ঈদের দিন থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন এখানকার চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাই আড়তগুলো ধুয়েমুছে পরিষ্কার করাসহ চামড়া প্রক্রিয়াজাতের জন্য লবণ ও অন্য সামগ্রী মজুত করেছেন তারা।
তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রপ্তানি বাজার সংকোচন, বিশ্বমন্দা এবং দেশের আভ্যন্তরীণভাবে ট্যানারি মালিকদের বকেয়া পরিশোধ না করায় তারা বিপাকে পড়েছেন। এরপরও তারা আশা করছেন দেশের প্রায় ৪০টি জেলা থেকে প্রায় ১৬ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ হবে নাটোরের বাজারে।
বৃহস্পতিবার সকালে পৌর শহরের চকবৈদ্যনাথ চামড়ার বাজার ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। ঈদুল আজহার দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নাটোরে আনা হবে কাঁচা চামড়া। এ কারণে আড়তগুলোতে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ।
চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম সিদ্দকী জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের পাওনা ট্যানারি মালিকরা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু এখনো বকেয়া আছে ৩৫-৪০ কোটি টাকা। ফলে পুঁজি সংকটে ভুগছেন নাটোরের ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থার মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি নগদ টাকায় চামড়া কিনবো। কারণ নাটোরের চামড়ার আড়তের সুনাম ধরে রাখতে চাই। তবে লবণের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যও বাড়ায় দুশ্চিন্তায় আছি।
তিনি আরও বলেন, গত বছর সরকার ওয়েট ব্লু চামড়া বিদেশে রপ্তানি করেছে। আশা করি সরকার এবারও একই উদ্যোগ নেবে। কারণ ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির মাধ্যমে ন্যায্য দাম কিছুটা হলেও নিশ্চিত হওয়া যায়।
আরেক চামড়া ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, দেশের রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলো যথাসময়ে ট্যানারি মালিকদের ব্যাংক ঋণ দেয়। কিন্তু আড়ত বা চামড়া ব্যবসায়ীদের কোনো ঋণ দেয় না। ফলে পুঁজি সংকট থাকে চামড়া ব্যবসায়ীদের।
তিনি আরও বলেন, এ বছর কোরবানির সময় হঠাৎ করে লবণসহ কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়ার খরচ বেড়ে গেছে। এ কারণে চামড়ার ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছি। ৪০ জেলার চামড়া নাটোরে আসে। এখান থেকেই ট্যানারি মালিক অথবা তাদের প্রতিনিধি চামড়া সংগ্রহ করেন। আমরা চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছি।
চামড়া ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল আলম হিরু বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে গত বছরের পাওনা বকেয়া নেই। তবে পূর্বের পাওনা বকেয়া আছে। এসব টাকা পরিশোধ করা হলে নাটোরের আড়তগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সমস্যা যা-ই হোক চামড়া কেনা-বেচার জন্য প্রস্তুত নাটোরের ব্যবসায়ীরা। এ বছর নাটোরে গুরু ছাগল ও অন্য পশুর ১৬ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের আশা আছে। আশা করছি ট্যানারি মালিকরা আগের বকেয়া পরিশোধে উদ্যোগ নেবেন। তাহলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পুঁজি সংকটে পড়বেন না। তবে যেকোনো মূল্যে নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীদের সুনাম ধরে রাখতে আমরা প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা চামড়া ব্যবসায়ীরা যেন ন্যায্যমূল্য পায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কেনা হবে কি না ট্যানারি মালিক ও সরকারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আসবে। সে অনুযায়ী আমরা চামড়া কিনবো।
রেজাউল করিম রেজা/এসজে/এমএস