ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নির্মাণের এক যুগেও ছাত্রাবাসে উঠতে পারেনি পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা

জেলা প্রতিনিধি | খাগড়াছড়ি | প্রকাশিত: ০৬:২৩ পিএম, ০৫ জুলাই ২০২৩

খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ৬২ কিলোমিটার দূরের দুর্গম লক্ষীছড়ি উপজেলা। সেখানকার প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষালাভের পথকে সুগম করতে ২০১১ সালে ছাত্রাবাস নির্মাণ করে সরকার। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিডিইপি-২) আওতায় ছাত্রাবাসটির নির্মাণের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তা চালু হয়নি। ফলে সরকারি সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছে দুর্গম জনপদের খুদে শিক্ষার্থীরা। একই প্রকল্পের আওতায় খাগড়াছড়ির পানছড়ি ও মানিকছড়িতেও পৃথক দুটি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হলেও তা চালু করতে পারেনি প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি ছাত্রাবাস নির্মাণের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও তা চালু না হওয়ায় ছাত্রাবাসে থাকা চেয়ার, টেবিল, চৌকিসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। অনেক রুম ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। তালাবদ্ধ থাকায় ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। নষ্ট হচ্ছে লাখ টাকার সোলার প্যানেল। ছাত্রাবাসের শৌচাগারও নষ্ট হয়ে গেছে।

এদিকে, চালু না হলেও লক্ষীছড়ি ও পানছড়ির দুই ছাত্রাবাসের সংস্কারে নতুন করে ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে ছাত্রাবাস পরিচালনার জন্য জনবলও নিয়োগ না হওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।

প্রতিটি ছাত্রাবাসে ৪০ জন ছাত্র ও ৪০ জন ছাত্রীর আবাসিক সুবিধা সম্পন্ন অবকাঠামোর পাশাপাশি চেয়ার, টেবিল, চৌকিসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র রয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে সৌর প্যানেলও। সব ধরনের আয়োজন থাকলেও শুধুমাত্র ছাত্রাবাসে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় তা চালু করা যাচ্ছে না।

নির্মাণের এক যুগেও ছাত্রাবাসে উঠতে পারেনি পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা

লক্ষীছড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার চাকমা জানান, তার বিদ্যালয়ে প্রায় তিনশ শিক্ষার্থীর অনেকেই দুর্গম এলাকার বাসিন্দা। বর্ষাকালে অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে আসে।

২০১৮ সালের বন্যায় ছাত্রাবাসের রান্নাঘর ও সীমানাপ্রাচীর নষ্ট হলেও তা এখনো মেরামত করা হয়নি বলেও জানান তিনি। তার মতে, ছাত্রাবাসাটি চালু হলে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমবে।

আবাসিক সুবিধা থাকলে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হতো জানিয়ে পানছড়ি বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপাশা সরকার বলেন, নির্মাণের পরেও ছাত্রাবাসটি চালু না হওয়ায় দুর্গম জনপদের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে।

নির্মাণের এক যুগেও ছাত্রাবাসে উঠতে পারেনি পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা

দুর্গম এলাকা থেকে আসা অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের আশপাশে বাসা ভাড়া নিয়ে পড়াশোনা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যবহার না হওয়ায় অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে ছাত্রাবাসের সীমানা প্রাচীরও।

মূল স্থাপনা ঠিক থাকলেও ব্যবহার না হওয়ায় ছাত্রাবাসের চৌকি, টেবিল ও চেয়ারসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মানিকছড়ির রাজবাড়ি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্যজ মারমা। তিনি বলেন, ব্যবহার না হওয়ায় ছাত্রাবাসের সোলার প্যানেলের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে ছাত্রাবাসের বর্তমান অবস্থা উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানানো হয়েছে। ছাত্রাবাসটি চালু হলে দুর্গম এলাকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়বে।

নির্মাণের এক যুগেও ছাত্রাবাসে উঠতে পারেনি পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা

ছাত্রাবাসগুলো চালুর বিষয়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হলেও এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি বলে জানিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। তবে ছাত্রাবাসের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে থাকা সহকারী জেলা প্রাথমিক অফিসার মো. মোসাদ্দেক হোসেন।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) টিটন খীসা বলেন, ছাত্রাবাসগুলো চালুর জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। ছাত্রাবাসগুলো চালু করা গেলে দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভের সুযোগ পাবে।

মুজিবুর রহমান ভুইয়া/এমআরআর/জেআইএম