ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ফেসবুক ফলোয়ার সাড়ে ৩ লাখ

মিমিক্রি করে ভাইরাল মাদারীপুরের ঐতিহ্য

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী | মাদারীপুর | প্রকাশিত: ০৫:১৭ পিএম, ২০ জুলাই ২০২৩

মীনা কার্টুনের চরিত্র, ডোরেমন, সিসিমপুর, হ্যারি পটারের হারমায়নি গ্রেঞ্জার, মোটু-পাতলুর চা ওয়ালা কিংবা যেকোনো গান সবকিছুই হুবহু কণ্ঠে গাইতে পারেন ঐতিহ্য রায় অথৈ। অল্পদিনেই মিমিক্রি করে ভাইরাল তিনি। ফেসবুকে তার ফলোয়ার ৩ লাখ ৩৭ হাজার।

মাদারীপুরের শিবচরের গুয়াতলা এলাকার বাসিন্দা ঐতিহ্য রায় অথৈ। মা ঝর্ণা মজুমদার মাদারীপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক। বাবা ডা. তরুণ কুমার রায় শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাটের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। দুই ভাই-বোনের মধ্যে অথৈ বড়। ছোট ভাই ঐহিক অনাবিল রায়।

বাবার চাকরির সুবাদে ঐতিহ্য ছোটবেলা থেকেই মাদারীপুর শহরে। বর্তমানে তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলা শহরের ১নং শকুনি (কলেজ রোড) এলাকার সরকারি কলেজের পেছনে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন। পড়েন মাদারীপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে।

ছোটবেলা থেকেই মিমিক্রি করলেও ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের সময় নিজেকে প্রকাশ করেন বহু গুণের অধিকারী ঐতিহ্য অথৈ। তিনি শুধু মিমিক্রিই নয়, ভালো গান ও কবিতাও আবৃত্তি করেন। গানের জন্য তিনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। ভালো ফলাফল করে বিভিন্ন বৃত্তিসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন মেধাবী ঐতিহ্য অথৈ।

অথৈর বেশ কিছু পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ২০২১ সালে মাদারীপুর পৌরসভার আয়োজনে ‘গানে গানে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা’ শীর্ষক সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি এবং উচ্চাঙ্গ সংগীতে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি, ২০১৯ ও ২০২০ সালে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি ও উচ্চাঙ্গ সংগীতে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম, ২০১৭ সালে রবীন্দ্র সংগীত ও উচ্চাঙ্গ সংগীতে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে উচ্চাঙ্গ সংগীতে আঞ্চলিক পর্যায়ে দ্বিতীয়, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলন পরিষদ, মাদারীপুর শাখা আয়োজিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৬তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে রবীন্দ্র সংগীত প্রতিযোগিতায় প্রথম, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় রবীন্দ্র সংগীতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার। এছাড়াও সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ২০১৯ এবং ২০২৩ সালে ভাষা ও সাহিত্য (বাংলা, ইংরেজি) বিষয়ে গ্রুপ ‘ক’ এবং পরবর্তীতে গ্রুপ ‘গ’ এ মাদারীপুর জেলায় শ্রেষ্ঠ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। এছাড়াও ঐতিহ্য অথৈকে নিয়ে বিবিসিসহ নানা মিডিয়াতে সংবাদ প্রচার হয়েছে।

মিমিক্রি করে ভাইরাল মাদারীপুরের ঐতিহ্য

ঐতিহ্য রায় অথৈ বলেন, মাদারীপুর পৌরসভা সংলগ্ন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মিমিক্রি শুরু করি। প্রথম দিকে আমি আমার কাজিনদের কণ্ঠ নকল করতাম। মাকে শোনাতাম। মা শুনে মুগ্ধ হতেন এবং বার বার আমার কাছ থেকে শুনতে চাইতেন। এরপর স্কুলের বন্ধুদের শোনাতাম। তাদের কণ্ঠ নকল করতাম। তারাও আমাকে দেখে চেষ্টা করতো। কিন্তু আমার বন্ধুদেরটা ভালো হতো না। তখন আমার মনে হতো, তাহলে মিমিক্রি বিষয়টি অনেক কঠিন। আমি ঘরে বসে বসেই নানা আত্মীয়-স্বজন আর পছন্দের কার্টুনের চরিত্র মিমিক্রি করতে থাকি। তখন শুধু আমার মা, পরিবার ও বন্ধুরাই জানতো মিমিক্রির বিষয়টি।

২০২০ সালে মহামারি করোনা ভাইরাসের সময় লকডাউনে ঘরবন্দি হয়ে পড়ি। স্কুল বন্ধ। সারাদিন বাসায় থাকতে হয়েছে। তাছাড়া অনলাইনে পড়াশুনার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে হয়েছে। ঘরে বসে বসে অলস সময় কাটাতে থাকি। আসলে আমি পড়াশুনার পাশাপাশি নানা প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করি। লকডাউনের কারণে সব ধরনের প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। তখন অনলাইনে একটি গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। সেই গান মোটামুটি ভাইরাল হয়।

এরপর আমি ফেসবুকে ‘ঐতিহ্য অথৈ’ নামে একটি পেজ খুলি। প্রথমে মীনা কার্টুনের একটি চরিত্র মিমিক্রি করি। সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়। তখন অনেকেই আমাকে মীনা বলে ডাকতেন। এরপর বিবিসিতে একটি ইন্টারভিউ দিই। এরপর থেকে আমার পরিচিতি বাড়তে থাকে। আমার পেজে মিমিক্রি ভিডিও দিতে থাকি। অল্প ক’দিনের মধ্যে তা ভাইরাল হয়ে যায়। বর্তমানে আমার ফেসবুক ফলোয়ার ৩ লাখ ৩৭ হাজার। আসলে আমি জানতামই না মিমিক্রি যে একটি শিল্প। এটাকে নিয়ে অনেকদূর যাওয়া যায়।

মিমিক্রি করে ভাইরাল মাদারীপুরের ঐতিহ্য

তাছাড়া সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত আবু ইসহাকের উপন্যাস ‘ময়না কেন কয়না কথা’ অবলম্বনে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক শর্টফিল্ম ‘ময়না’য় নাম ভূমিকায় আমি কণ্ঠ দিয়েছি। ভবিষ্যতে ভয়েস আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করার ইচ্ছা আমার।

ঐতিহ্য অথৈর মা ঝর্ণা মজুমদার বলেন, আসলে ঐতিহ্য ঘরে বসে নিজে একা একা মিমিক্রি করতো, প্রাইমারি স্কুলে পড়া অবস্থায় ওর কাজিনদের কণ্ঠ মিমিক্রি করতো। তখন আমার ভালো লাগতো। পরে বিভিন্ন কার্টুনের চরিত্র মিমিক্রি করতো। আসলে ও ঘরে বসে নিজে একা একাই এতদূর এগিয়ে আসতে পেরেছে। তবে পড়াশুনার চাপ থাকায় অনেক সময় মিমিক্রিতে বেশি সময় দিতে পারে না।

মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, যে কেউ ইচ্ছা করলেই মিমিক্রি করতে পারবে না। আমাদের দেশে এর চর্চাও তেমন নেই। আমাদের মাদারীপুরের মেয়ে ঐতিহ্য এই মিমিক্রি নিয়ে অনেকদূর এগিয়েছে, এটা আমাদের জন্য গৌরব। ওর পরিচিতি শুধু দেশে নয় বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ুক, এই কামনা করি।

এফএ/জেআইএম