ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

স্কুলমাঠের বুক চিরে বাড়ির রাস্তা বানালেন প্রবাসী

জেলা প্রতিনিধি | ঝালকাঠি | প্রকাশিত: ০৬:৫৫ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০২৩

ঝালকাঠির রাজাপুরে এক প্রবাসীর শখ পূরণে স্কুলমাঠের মাঝ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়ির রাস্তা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ঝালকাঠির রাজাপুরের আরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সোনারগাঁও জে.এ.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের বুক চিরে এ রাস্তা নির্মিত হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা করছে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা মাধ্যমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। ১ আগস্ট সমাধানের জন্য বসার কথা থাকলেও রাস্তা নির্মাণকারীদের অবহেলায় সুরাহা হয়নি এ সংকটের।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজাপুরের বড়ইয়া ইউনিয়নে আরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সোনারগাঁও জে.এ.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র আঙ্গিনা ও খেলার মাঠ এটি। মাঠের দু’প্রান্তের মানুষরা সচারাচর মাঠের মধ্য দিয়েই চলাচল করেন। তবে তাদের এই মাঠ কেটে বা মাঠের মাঝ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের চিন্তা ছিল না কোনো সময়ই।

কিন্তু সম্প্রতি বিদ্যালয় থেকে মাত্র ৩শো মিটার দূরের এক বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী জিয়া হাওলাদার এই মাঠের মাঝ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেন। গত ২২ জুলাই তার রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভোররাতে এই মাঠের মধ্য দিয়ে ইট সলিং করে সিমেন্ট-বালুর রাস্তা নির্মাণ করেন স্থানীয় শাহজাহান গাজী, সোবাহান গাজী ও জিয়ার অনুসারীরা। জিয়ার উপস্থিতিতেই তারা এ কাজ সম্পন্ন করার পরে জিয়া সৌদি আরবে চলে যান। কিন্তু খেলার মাঠে রাস্তা নির্মাণের ১১ দিন পার হলেও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস কেউই অবৈধ এ সড়ক সরাতে কোনো উদ্যোগ নেননি। তাদের এই নীরব ভূমিকায় মর্মাহত এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর দাবি এলাকার স্কুলের একমাত্র খেলার মাঠটি যেন প্রভাবশালীদের দখলে বিলীন হয়ে না যায়।

jagonews24

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম বারী খান বলেন, মাঠের উপর দিয়ে আগে যেভাবে এলাকাবাসী চলাচল করতো সেভাবেই করবে। বর্ষার কারণে মাঠে কাদা হওয়ায় চলাচলের জন্য রাস্তার আদলে বালু ফেলতে পরামর্শ দিয়েছিলাম জিয়া হাওলাদারের স্বজনদের। কিন্তু তারা তা না করে একটি অমানবিক কাজ করেছে। এটা মোটেই কাম্য নয়। তবে যেহেতু বিকল্প সড়ক নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে সেখানে এ রাস্তা রাখার কোনো সুযোগ নেই।

স্কুল প্রতিষ্ঠাতার ভাতিজা কুয়েত প্রবাসী এলাকার বাসিন্দা সারোয়ার খান বলেন, এর আগে একই ব্যক্তি ২০২০ সালে মাঠের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল শুধুমাত্র তার স্বার্থে। কিন্তু স্কুল কমিটির কঠোর অবস্থানের কারণে তা পারেনি। এবার আবার একই উদ্যোগ নিয়ে তিনি এলাকার কিছু বখাটেদের সহায়তায় রাতের আঁধারে রাস্তাটি নির্মাণ করতে সক্ষম হন। খেলার মাঠটি রক্ষায় নিজের অর্থায়নে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করে দিয়েছি গত ২১ জুলাই। ১২ ফুট প্রস্থের এই সড়কটি মাধ্যমিক স্কুলের পেছন থেকে ঘুরিয়ে দুই প্রান্তের পুরোনো রাস্তার সঙ্গে সংযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওইদিন রাতেই লোকজন নিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করেন জিয়া হাওলাদার।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলামিন হাওলাদার বলেন, মাঠের ভেতর দিয়ে সড়ক নির্মাণ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের একযোগে জাতীয় সঙ্গীত এবং খেলাধুলা বাধাগ্রস্ত হবে। তাছাড়া এলাকার সামাজিক অনুষ্ঠান, মাহফিল, জানাজা এসব কাজের বিঘ্ন ঘটবে। তাই মাঠটি রক্ষা করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব।

সোনারগাঁও জে.এ.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইসমাইল সিকদার বলেন, শিক্ষার্থীদের একমাত্র খেলার মাঠে একরাতের মধ্যে রাস্তা নির্মাণ করেছে একটি পক্ষ।

রাস্তা নির্মাণের উদ্যোক্তা জিয়া হাওলাদার দেশে না থাকায় তার পক্ষে কথা হয় এলাকার জাকির সিকদারের সঙ্গে।

তিনি জানান, মাঠের রাস্তাটি অনেক আগে থেকেই চলাচলের জন্য ছিল।

বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠের মাঝে রাস্তা রাখার যৌক্তিকতা আছে কিনা জানতে চাইলে জাকির সিকদার বলেন, এখান থেকে রাস্তা নির্মাণ করতে বলেছেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি নিজেই।

এ প্রসঙ্গে রাজাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফা আলম বলেন, বিষয়টি আমাদের নলেজে আসার পর আমরা উভয় পক্ষকে নিয়ে বসার জন্য ডেকেছি। ১ আগস্ট এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বসার কথা থাকলেও রাস্তা নির্মাণকারীদের দেরিতে আসার কারণে বসা হয়নি। তবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে খেলার মাঠের মধ্যে রাস্তা নির্মাণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এরইমধ্যে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। তারপরও একটা স্কুলের খেলার মাঠ নষ্ট করা হবে এটা কখনো হতে পারে না। তাই আমি এবং প্রাইমারি শিক্ষা কর্মকর্তা উভয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তা নির্মাণকারীদের বিষয়ে পক্ষদেপ নেবো।

এফএ/জিকেএস