ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

ঝিনাইদহ

সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষকের তালিকায় খুঁড়িয়ে চলা ২ এনজিও

জেলা প্রতিনিধি | ঝিনাইদহ | প্রকাশিত: ০৮:৫০ এএম, ১৩ আগস্ট ২০২৩

ঝিনাইদহে খুঁড়িয়ে চলা দুটি এনজিও জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত প্রাথমিক তালিকায় স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে দিয়া নামের সংস্থার নেই নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কোনো অভিজ্ঞতা, আর এসডাপের কার্যক্রমও বন্ধ বেশ কিছুদিন। এমন অবস্থায় সংস্থা দুটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পেলে কতটুকু সফলতার সঙ্গে কাজ করতে পারবে তা নিয়ে চিন্তিত সচেতন মহল ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন পযবেক্ষণের জন্য নির্বাচন কমিশন গত ৮ আগস্ট প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত ৬৮টি দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নাম প্রকাশ করে। এই তালিকায় রয়েছে ঝিনাইদহের দুটি এনজিও। এর একটি হচ্ছে ডিসঅ্যাবিলিটি ইনকুইজিশন অ্যাক্টিভিটিজ (দিয়া) এবং অন্যটি অ্যাসোসিয়েশন ফর ইনডিকেটেড সোশিও ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট ফর আন্ডারপ্রিভিলেজ (এসডাপ)।

Jhenidah-4.jpg

নির্বাচন কমিশনের তালিকা প্রকাশের পর সরেজমিনে ঘুরে মিলেছে নানা অসঙ্গতির চিত্র। এসডাপ প্রধান কার্যালয় জেলার শৈলকুপা উপজেলার ভাটই কালিবাড়ি মোড়ের টিনশেডের অফিসটি তালাবদ্ধ রয়েছে। পাশের ভাটই মাধ্যমিক বিদ্যালয়পাড়ায় প্রতিষ্ঠান পরিচালকের বাড়িকেই বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রধান কার্যালয় হিসেবে। সেখানে নেই কোনো সাইনবোর্ড, বন্ধ পাওয়া যায় সেটিও। যদিও প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে খোলা হয় অফিস।

এই সংস্থাটি মূলত সরকারের ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের কতটুকু উন্নয়ন হচ্ছে সেটা দেখার পাশাপাশি গ্রামীণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিত। কিন্তু বর্তমানে ফান্ড না থাকায় সেটিও বন্ধ রয়েছে। শুধু অফিশিয়াল কাজ চলছে দাবি কর্তৃপক্ষের। তবে স্থানীয় অনেকেই জানেন না এই সংস্থাটির কথা। কেউ কেউ বলছেন, প্রায় ছয় মাস বন্ধ কার্যক্রম। সংস্থাটির লোকবল সাতজন বলে দাবি মালিকের। তবে বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায় মাত্র দু-জনকে। যদিও এনজিও পরিচালকের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে।

Jhenidah-4.jpg

অন্যদিকে, সদর উপজেলার বিষয়খালী বাজারে অবস্থিত দিয়া এনজিওটিরও নেই পর্যাপ্ত লোকবল। নেই আগের কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা। এখানে ক্ষুদ্র ঋণ, কৃষকদের অরগানিক সবজি উৎপাদনে পরামর্শ দেওয়া হয়। মাত্র ছয় জন স্টাফ দিয়ে চলে তাদের অফিশিয়াল কাজ। সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন পায় ২০০০ সালের ডিসেম্বরে।

দিয়ার মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এসডাপের মিজান ভাই বলেছিলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পেলে সরকারের কাছাকাছি থাকা যায়। তাই আবেদন করেছি। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে তখন দেখা যাবে কি দিয়ে কি করা যায়।

এদিকে, এসডাপের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, লোকবল কম আছে, বাসাতেই বেশি অফিশিয়াল কাজ করি। এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধন হয় ২০০৩ সালে। তবে চূড়ান্তভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচিত হলেও যদি ফান্ড না পাই তাহলে এ দায়িত্ব পালন কষ্টকর হবে। এছাড়া সব অফিসেই কাজ চলে দাবি করেন তিনি।

ভাটই কালীবাড়ি মোড়ের বাসিন্দা পাভেল মিয়া বলেন, আমাদের বাড়িতেই এসডাপের অফিস। আগে কাজ হতো। কিন্তু এখন বেশিরভাগ সময় অফিস তালাবদ্ধ থাকে। মাঝেমধ্যে মালিক মিজানুর রহমান ও অন্য এক নারী এসে অফিস খোলেন। ভাড়াও দেয় দুই/তিন মাস পর পর।

Jhenidah-4.jpg

স্থানীয় বাসিন্দা ওহিদ মোল্লা বলেন, এসডাপের কার্যক্রম আগে দেখতাম। কিন্তু বেশ কিছুদিন চোখে পড়ে না। দেখি পরিচালক বাড়িতেই বেশি থাকে।

সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম বলেন, দিয়া এনজিওর নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। বর্তমানে তারা ক্ষুদ্র ঋণ দেয়। হয়তো কোনো ম্যাকানিজম করে নির্বাচন কমিশনের তালিকায় নাম এনেছে। এই ধরনের সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব দিলে সেটা পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি আমিনুর রহমান টুকু বলেন, এই দুটি সংস্থার বাস্তব চিত্র আর নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া তাদের সক্ষমতা ও অন্য তথ্যচিত্র অবশ্যই পূণর্বিবেচনা করা দরকার। ফান্ড পেলে তারা লোকবল হয়তো জোগাড় করতে পারবে কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতা না থাকলে, বর্তমান কার্যক্রম বা লোকবল না থাকলে হঠাৎ দায়িত্ব পেলে হতভম্ভ হয়ে যাবে। তখন জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন অফিসার মোহা. আ. ছালেক বলেন, আমাদের কাছে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত তালিকা আসেনি। পর্যবেক্ষক সংস্থার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনই দেখে। তারা যদি আমাদের কোনো দায়িত্ব দেয় তখন আমরা দেখবো।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এমআরআর/এমএস