তিন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি: সেই ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার
তিন এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির ঘটনায় ফেনীর সোনাগাজীর বগাদানা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক রবিউল হাসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রোববার (২০ আগস্ট) রাতে ফেনীর ট্রাংক রোডের একটি রেস্তোরাঁর সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার (২১ আগস্ট) তাকে আদালতে হাজির করা হবে।
জানা যায়, মারধর ও শ্লীলতাহানির শিকার সোনাগাজী সরকারি কলেজের তিন ছাত্রী এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার উপজেলার বক্তারমুন্সি শেখ শহীদুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে তারা তিনজন একসঙ্গে পায়ে হেঁটে ডাক বাংলা এলাকায় গিয়ে একটি দোকানে বসে নাশতা খাচ্ছিলেন।
এ সময় ছাত্রলীগ নেতা রবিউল হাসান কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে ওই দোকানে গিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গি দিয়ে উত্ত্যক্ত ও নানা ধরনের কটূক্তিমূলক কথাবার্তা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা রবিউল হাসান তাদের কাছে গিয়ে একজন ছাত্রীকে নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করে বলেন, ‘তোকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইছি দ্রুত অ্যাকসেপ্ট করবি না হয় ভালো হবে না’। ওই ছাত্রী তার কথায় সাড়া না দিয়ে প্রতিবাদ করলে দোকানের ভেতরে তাকে চড়-থাপ্পড় ও লাথি মেরে বোরকা-হিজাবসহ হাত ধরে টানাটানি শুরু করেন।
আরও পড়ুন: ৩ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর শ্লীলতাহানি, ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা
এরপরও ছাত্রীরা কোনো কথা না বলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে বাড়ির দিকে রওয়ানা হন। পরে রবিউলসহ তার সহযোগীরা তাদের পিছু পিছু আরেকটি গাড়ি নিয়ে অনুসরণ করতে থাকেন। পরে ছাত্রীরা উপজেলার কাজীরহাট সংলগ্ন কালিবাড়ির সামনে পৌঁছালে রবিউল আবারও তাদের গতিরোধ করে ওই ছাত্রীকে টেনে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে আবারও মারধর করতে থাকেন। এ সময় অপর দুই ছাত্রী প্রতিবাদ করলে তাদেরও মারধর করে টেনে-হেঁচড়ে বোরকা ও হিজাব খুলে শ্লীলতাহানি করা হয়। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ছাত্রলীগ নেতা রবিউলসহ তার সহযোগীরা পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলার বগাদানা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক রবিউল হাসান, তার বাবা হেলাল উদ্দিন, সহযোগী মো. তুষার, মো. মুরাদ ও মো. ফারুক।
এ ঘটনায় সংবাদ প্রচারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিন মামুনকে হত্যা করে মরদেহ গুমেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: দায়ের কোপ থেকে বাঁচতে ছেলের ধাক্কা, বাবার মৃত্যু
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান ইমাম বলেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক ছিলেন। রোববার রাতে রবিউল ও তার সহযোগীরা এলাকা ছেড়ে ঢাকা-চট্টগ্রামে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ফেনী শহরে যান। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শহরের ট্রাংক রোড থেকে রবিউলকে গ্রেফতার করে। এ সময় অন্যরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করা হবে। পুলিশ অন্য আসামিদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/জেএস/এমএস