৩ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর শ্লীলতাহানি, ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা
পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে তিন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে ফেনীর সোনাগাজীর এক ছাত্রলীগ নেতাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।
শনিবার (১৯ আগস্ট) রাতে ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলাটি করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- উপজেলার বগাদানা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক রবিউল হাসান, তার পিতা হেলাল উদ্দিন, সহযোগী মো. তুষার, মো. মুরাদ, মো. ফারুক।
বৃহস্পতিবার দুপরে উপজেলার ডাক বাংলা এলাকায় একটি দোকানের ভেতরে ও কাজীরহাট সংলগ্ন কালি বাড়ির সামনে সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, মারধর ও শ্লীলতাহানির শিকার তিন ছাত্রী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া সোনাগাজী সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার উপজেলার বক্তারমুন্সি শেখ শহীদুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজে বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে তারা তিনজন একসঙ্গে পায়ে হেঁটে ডাক বাংলা এলাকায় গিয়ে একটি দোকানে বসে নাস্তা খায়।
এ সময় তাদের পিছু নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা রবিউল হাসান কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে ওই দোকানে গিয়ে তাদেরকে উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গাত্মক অঙ্গভঙ্গি দিয়ে উত্ত্যক্ত ও নানা ধরনের কটূক্তিমূলক কথাবার্তা বলতে থাকে।
একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা রবিউল হাসান তাদের কাছে গিয়ে একজন ছাত্রীকে নাম-পরিচয় জিজ্ঞেস করে বলে, ‘তোকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইছি দ্রুত একসেপ্ট করবি না হয় ভালো হবে না’। ওই ছাত্রী তার কথায় সাড়া না দিয়ে প্রতিবাদ করলে দোকানের ভেতরে তাকে চড়-থাপ্পড় ও লাথি মেরে বোরকা-হিজাবসহ হাত ধরে টানাটানি শুরু করে।
এরপরও ছাত্রীরা কোনো কথা না বলে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পরে রবিউলসহ তার সহযোগীরা তাদের পিছু পিছু আরেকটি গাড়ি নিয়ে অনুসরণ করতে থাকে। পরে ছাত্রীরা উপজেলার কাজীরহাট সংলগ্ন কালি বাড়ির সামনে পৌঁছালে আবারো রবিউল তাদের গতিরোধ করে ওই ছাত্রীকে টেনে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে আবারও মারধর করতে থাকে। এ সময় অপর দুই ছাত্রী প্রতিবাদ করলে তাদের দুজনকেও রবিউলসহ তার সহযোগীরা মারধর করে টেনে-হেঁচড়ে বোরকা ও হিজাব খুলে শ্লীলতাহানি করে।
চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ছাত্রলীগ নেতা রবিউলসহ তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
মারধর ও শ্লীলতাহানির শিকার তিন ছাত্রী বখাটে রবিউলসহ তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। একইসঙ্গে তাদের নির্বিঘ্নে পরীক্ষা কেন্দ্রে আস-যাওয়া করতে নিরাপত্তা দাবি করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এসএম অনীক চৌধুরী বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকবে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ওই তিন পরীক্ষার্থী নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে এসে পরীক্ষায় অংশ নেবে। ছাত্রীদের কেউ বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান ইমাম থানায় মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক আছেন। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, রবিউল উপজেলার বগাদানা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে থানায় তিন ছাত্রীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় মামলার বিষয়টি শুনে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে জানিয়েছেন। দ্রুত তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসজে/এমএস