ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবর্তনের দাবি

মা ইলিশ ধরতে চান না জেলেরা

জুয়েল সাহা বিকাশ | ভোলা | প্রকাশিত: ০৪:৩৭ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

গত দুই বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ভোলার জেলেদের জালে ধরে পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা মা ইলিশ। তাই এ বছর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শিকার করতে চান না ভোলার জেলেরা।

ভোলার জেলে ও মৎস্যজীবীদের দাবি, এ বছর নিষেধাজ্ঞা অক্টোবর মাসের শেষে অথবা নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্ধারণ করলে নিষেধাজ্ঞা শেষে তাদের জালে আর ধরা পড়বে না ডিমওয়ালা মা ইলিশ। এতে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি দুঃখও দূর হবে জেলেদের।

আরও পড়ুন: চড়া ইলিশ, নিম্ন-মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে অন্য মাছও

সরেজমিনে জেলেদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ইলিশ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোলার আড়াই লাখ জেলে। এসব জেলের জালে ধরা পড়ছে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ। এদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ ইলিশের পেটেই ডিম নেই। তবে প্রতি বছরই অক্টোবর মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হয় মা ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা। গত দুই বছর জেলেরা ইলিশের নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে গিয়ে ঝাঁকে ঝঁকে ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরেন। এতে ডিম ছাড়তে পারেনি ৩৫ শতাংশ ইলিশও। যার কারণে বছরের বেশিরভাগ সময়ই তাদের জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ।

jagonews24

আরও পড়ুন: ‘ইলিশ তো বিদেশ থেকে আমদানি হয় না, এত দাম বাড়ার কারণ দেখছি না’

ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি গ্রামের জেলে মো. জাকির মাঝি ও মো. জিহাদ হোসেন মাঝি জানান, তারা এক মাস ধরে বিভিন্ন সাইজের ইলিশ শিকার করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত ডিমওয়ালা ইলিশ পাননি। এমনকি সোমবার বিকেলেও তারা পৃথকভাবে চারজন মাঝি নিয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে ১০-১২টি বিভিন্ন সাইজের ইলিশ পেয়েছেন কিন্তু একটিরও পেটে ডিম ছিল না।

রাজাপুর ইউনিয়নের জেলে মো. ইব্রাহীম মাঝি, আব্দুর রহমান মাঝি ও ধনিয়া ইউনিয়নের আব্দুল হান্নান মাঝি জানান, গত বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল সেসময় মা ইলিশ তেমন ডিম ছাড়তে পারেনি। তাই তারা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মেঘনা নদীতে গিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ শিকার করেছেন। এসব কারণে এবছর তারা এখনও নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা পাননি। এজন্য এ বছর নিষেধাজ্ঞার সঠিক তারিখ নির্ধারণের দাবি করেন তারা।

আরও পড়ুন: বাজারে ইলিশের সরবরাহ ভালো, দাম কমছে

কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝের চরের জেলে মো. রাজ্জাক মাঝি ও সবুজ মাঝি জানান, এ বছর ইলিশ মাছের পেটে এখনও ডিম নেই। তাই এ বছর মা ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা অক্টোবর মাসের শেষে অথবা নভেম্বর মাসের প্রথমে দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেন তারা। তাদের দাবি ওই সময় নিষেধাজ্ঞা দিলে এ বছর নিষেধাজ্ঞার শেষে তাদের জালে ডিমওয়ালা মা ইলিশ শতকরা ৫ ভাগেরও কম ধরা পড়বে।

jagonews24

আরও পড়ুন: সাগরের ইলিশে দখল চাঁদপুর মৎস্যঘাট, নদীর স্বাদ পাচ্ছেন না ক্রেতারা

তুলাতুলি মৎস্য ঘাটের ব্যবসায়ী মো. মঞ্জু ইসলাম ও মো. আল আমিন জানান, তারা পৃথক পৃথকভাবে প্রতিদিন ৩-৪শো পিস ইলিশ নিলামে ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন। এরমধ্যে সর্বচ্চো ৫-১০টি মাছের পেটে ডিম পাওয়া যায়। কারণ ডিম ছাড়ার সময় হয়নি ওই মাছগুলোর। তাদের দাবি এ বছর মা ইলিশ শিকারের নিষেধাজ্ঞা যদি অক্টোবর মাসের শেষের দিকে দেওয়া হয় তাহলে সব মাছের পেটে ডিম হবে এবং সময়মতো মাছ ডিম ছাড়তে পারবে। আর মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এতে ভবিষ্যতে জেলেদের পাশাপাশি তারাও লাভবান হবেন।

ভোলা জেলা ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মা ইলিশের নিষেধাজ্ঞার শেষে জেলেরা নদীতে গিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ ধরে আনছে। এটার কারণ হলো দেশের ৩৩ ভাগ ইলিশ ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে উৎপাদন হলেও প্রতি বছর ঢাকায় ইলিশের প্রজনন মৌসুমের তারিখ নির্ধারণের সভায় ভোলার জেলে ও মৎস্যজীবী সমিতির নেতাদের রাখা হয় না। তার দাবি ওই সভায় যদি তাদের রেখে মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে তারাও সঠিক একটি তারিখ প্রস্তাব দিতেন। তাদের বিশ্বাস, এতে করে নিষেধাজ্ঞা শেষে এত মা ইলিশ মারা পড়তো না।

আরও পড়ুন: চড়া দাম, ভরা মৌসুমেও পাতে উঠছে না ইলিশ

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের শীর্ষ মৎস্য বিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিসুল রহমান জেলেদের সঙ্গে একমত পোষণ করে জানান, এ বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা ২৯ অক্টোবর থেকে হলে ব্যাপক সফলতা আসবে ইলিশের ডিম ছাড়ার ক্ষেত্রে।

jagonews24

ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ জানান, তারা গত বছরের চেয়ে ১৫ দিন পিছিয়ে এ বছর ইলিশের প্রজনন মৌসুমের নিষোধাজ্ঞা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। আর প্রজনন মৌসুমে ইলিশ পর্যাপ্ত ডিম ছেড়ে থাকলে নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের জালে মা ইলিশ ধরা পড়লেও ক্ষতি হবে না। এছাড়াও ইলিশের প্রজনন মৌসুমের তারিখ নির্ধারণের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে ভোলার জেলে ও মৎস্যজীবীদের রাখা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন: সারাদিনে ৬ জাটকা নিয়ে ফিরলেন আবুল কালাম

গত বছর ভোলায় ইলিশের প্রজনন মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ভোলা জেলায় ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৬৮৩ মেট্রিক টন। আর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা রয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন।

এফএ/এমএস