ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

গাইবান্ধায় কমছে তিস্তার পানি, বাড়ছে ভাঙন আতঙ্ক

জেলা প্রতিনিধি | গাইবান্ধা | প্রকাশিত: ০৮:৫৪ এএম, ০৬ অক্টোবর ২০২৩

উজানের ঢল ও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির প্রভাবে উত্তরের জেলা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হু হু করে বাড়তে থাকে তিস্তা নদীর পানি। এতে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের আবাদি জমি ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। তবে রাতারাতি বাড়লেও বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরের পর থেকে কমতে শুরু করে পানি। এতে বন্যার শঙ্কা কাটলেও নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে ভাঙন নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, বুধবার বিকেল থেকে সুন্দরগঞ্জে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করে। বৃহস্পতিবার ভোরে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টায় ৩৫ সেন্টিমিটার কমে তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জে (কাউনিয়া পয়েন্ট) বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

gaib-(5).jpg

ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং বৃষ্টির প্রভাবে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীতে পানি বাড়ে। বুধবার থেকে পানি বাড়তে থাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের তালুক বেলকা, জিগাবাড়ি, পঞ্চানন্দ পলাশতলা, বেলকা নবাবগঞ্জ ও কিশামত সদর, হরিপুর ইউনিয়নের চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, পাড়া সাদুয়া, কানিচরিতা বাড়ি, রাঘব, কারেন্ট বাজার, কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামেরচর, কাজিয়ারচর, পোড়ার চর, কেরানির চর, রাজার চর, মিন্টু মিয়ার চরসহ তারাপুর, চন্ডিপুর ও কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তবে দুপুরের পর থেকেই পানি কমতে শুরু করে।

আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, বন্যা আতঙ্ক

কৃষকরা জানান, হঠাৎ করে তিস্তায় পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের আমন ধান, মরিচ, বেগুন, বাদাম, পাটের বীজতলাসহ বিভিন্ন সবজিক্ষেত পানিতে ডুবে যায়। তবে বিকেল থেকে পানি কমতে শুরু করায় স্বস্তি ফিরেছে।

gaib-(5).jpg

নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, আকস্মিকভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। চলতি মৌসুমে কয়েক দফায় বন্যা হলেও তা বেশি সময় স্থায়ী ছিল না। এবারও পানি কমতে শুরু করেছে। তবে তিস্তার ভাঙন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিস্তাপাড়ের কয়েক লাখ মানুষ।

উপজেলার তালুক বেলকা গ্রামের জিয়াউর রহমান সরকার রয়েল জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তায় আকস্মিকভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় আমার ছয় একর ধানী জমি ও এক একর বিভিন্ন সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া পাটের বীজতলায় পানি প্রবেশ করেছে। তবে রাতারাতি যদি ফসলি জমি থেকে পানি না নেমে যায় তাহলে ফসলের অনেক ক্ষতি হবে।

কাপাসিয়া ইউনিয়নের বোচাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা বাবলু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তার পানি কমার পর থেকে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।

হরিপুর ইউনিয়নের চরিতাবাড়ী গ্রামের আলন মিয়া বলেন, ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ভাঙন শুরু দেখা দিয়েছে। থেমে থেমে ভাঙছে। আমার ধানের জমি কিছুটা নদীতে বিলীন হয়েছে।

কাপাসিয়া ইউনিয়নের রেজাউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি কিছুটা কমলেও টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এর সঙ্গে ভাঙন তো আছেই। কয়েকদিন আগেই কয়েকটি গ্রাম তিস্তার পেটে চলে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাশিদুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, নদীতে পানি বাড়ার কারণে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করছে। এখন পর্যন্ত ফসলের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। বিকেল থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। রাতারাতি পানি নেমে গেলে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না।

gaib-(5).jpg

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, তিস্তায় পানি এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারত থেকে পানি আসার খবরে উপজেলার সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সচেতনমহল, সুধীজন ও প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিটকে নিয়ে জরুরি সভা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষদের সতর্ক করতে মাইকিং করা হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। জরুরি যোগাযোগে নৌকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চারজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে উপজেলা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। তারা সেখানে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, এখন তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচে। এতে এই এলাকায় আপাতত বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।

শামীম সরকার শাহীন/এসজে/এমএস