ফসলের মাঠে আলোর ফাঁদ
দিনের আলো শেষে যখন চারদিকে অন্ধকার নেমে আসে ঠিক তখনি ফসলের মাঠে জ্বলে উঠে আলো। আর এ আলোর আকর্ষণে উড়ে আসে ক্ষতিকর সব পোকামাকড়। তারপর আলোর নিচে পেতে রাখা ডিটারজেন্ট ভর্তি পানির পাত্রে পড়ে প্রাণ হারায়। এতে দমন হচ্ছে ক্ষতিকর পোকামাকড়। একই সঙ্গে কমেছে কিটনাশকের ব্যবহার।
পরিবেশের ওপর প্রভাব না ফেলে কষ্টের ফসল নিরাপদে ঘরে তোলার জন্য ব্যবহৃত এ ফাঁদকে বলা হয় ‘আলোর ফাঁদ’। কোনো রকম কিটনাশক ব্যবহার করতে হয় না বলে পরিবেশের ওপর পড়ে না বাড়তি চাপ। এতে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হবেন কৃষক। ক্ষতিকর এসব পোকামাকড় দমনে নানান রকম উপকরণ থাকলেও সেগুলো সবসময় কাজে আসে না। কিন্তু ‘আলোর ফাঁদ’ শতভাগ নিরাপদ এবং কার্যকর হওয়ায় কৃষক বেশ লাভবান হবেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বোরো ধান রক্ষায় সব ব্লকেই আলোর ফাঁদ বসিয়ে ক্ষতিকর পোকামাকড় চিহ্নিত করণ কার্যক্রম শুরু করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস।

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরে কৃষক হত্যায় ৪ আসামি গ্রেফতার
দুর্বাটি এলাকার কৃষক মো. আফজাল হোসেন বলেন, আমরা কষ্ট করে ধানের বীজ রোপণ করতাম। নানা রকম কিটনাশক ব্যবহার করেও তেমন কোনো উপকার পাওয়া যেত না। পাশাপাশি অনেক বেশি খরচ হতো। আলোর ফাঁদ ব্যবহার করলে টাকা খরচ হচ্ছে না। তাই এটা ব্যবহার করতে কোনো অসুবিধা নেই। আশা করি ভালো ফলাফল আসবে।
কৃষক মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, প্রতি বছর কিটনাশকের জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হয়। এবার কৃষি অফিস থেকে কিভাবে আলোর ফাঁদের মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকা চিহ্নিত করতে হয় তা শিখিয়ে দিয়েছেন। এ পদ্ধতি ব্যবহারে পোকামাকড় সহজেই ধ্বংস করা যাবে বলে আশা করছি।
বাঙ্গাল হাওলা এলাকার কৃষাণী জসলিন গমেজ বলেন, কৃষি অফিস থেকে আলোর ফাঁদের মাধ্যমে কিভাবে পোকা চিহ্নিত করে তা নিধন করতে হয় তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমি পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি। এভাবে পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষা করে অধিক ফলনের আশা করছি আমরা।

আরও পড়ুন: নিখোঁজের দুদিন পর ধানক্ষেতে মিললো কৃষকের মরদেহ
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, ক্ষতিকর পোকামাকড়ের হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে উপজেলার সবকটি ব্লকের কৃষকদের আমরা হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এ পদ্ধতির সঠিক ব্যবহার করা গেলে কৃষক লাভবান হবে। একই সঙ্গে আমাদের প্রকৃতিও বেঁচে যাবে। কিটনাশক ব্যবহারের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে উপকারী পোকামাকড়গুলো বেঁচে যাবে। আশা করছি এ বছর লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি উৎপাদন হবে।
আব্দুর রহমান আরমান/জেএস/এএসএম