১৩ ডিসেম্বর বহলা ট্র্যাজেডি দিবস
আজ ১৩ ডিসেম্বর। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বহলা ট্র্যাজেডি দিবস। আজকের দিনে ঝড়ে গিয়েছিল ৩২টি তাজা প্রাণ। পরে তাদের একত্রে গণকবর দেয়া হয়েছিল। গত বছর গণকবরটিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছরও সেদিনের ওই শহীদদের রাষ্ট্রীয়ভাবে আজও স্বীকৃতি মেলেনি।
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাঙালি সংঘবদ্ধ মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পাক সেনারা পিছু হাঁটতে থাকে। এই দিনে উপজেলার ভান্ডারা কিংবা রাণীপুকুর ইউপি থেকে পাকসেনারা পিছু হেঁটে দিনাজপুর শহরের দিকে আসতে থাকে। সন্ধ্যার আগ মূহুর্তে কাঞ্চন জংশন এবং রেল ব্রিজ সংলগ্ন বিজোড়া ইউপির বহলা গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে পথিমধ্যে নিরীহ গ্রামবাসীর কাছে মুক্তিবাহিনীর সংবাদ জানতে চায় পাক সেনারা। কারণ এ গ্রামের সন্নিকটে সারাঙ্গাই-পলাশবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ছিল, যা আশপাশেই হবে মর্মে অনুমান করেছিল তারা। কিন্তু গ্রামবাসীর কেউ সেদিন মুখ খুলেনি। ফলে প্রথমে তাদের গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। পরবর্তিতে আবার একত্র হয়ে পুরুষদের সারিবদ্ধ ভাবে দাড়াতে বলে পাকসেনারা। কিছুক্ষণের মধ্যে মাগরিবের নামাজ হবে জানিয়ে গ্রামবাসী নামাজ আদায় করতে চাইলে নামাজের অনুমতি পায়। নামাজ শেষ হওয়ার মুহুর্তে আবারো সারিবদ্ধ হতে বলেই নির্মম ফায়ারিং শুরু হয়। নিমেষেই ৩২টি তাজা প্রাণ হারিয়ে যায়। দুজন বাদে এদের সবাইকে একত্রে সেদিন গণকবর দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছরেও এরা শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতি পাননি। তাদের অনেকের পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটালেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রকমের সহযোগিতা পায়নি তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার রহমান আলী জানান, আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শহীদ ও আহতদের তালিকা প্রেরণ করেছি। এছাড়াও সেদিন আহত অবস্থায় বেঁচে যান ৫ জন। পরের দিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ১৪ ডিসেম্বর বিরলসহ দিনাজপুর শত্রু মুক্ত হয়।
প্রতি বছর দিনটিকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে। এবারেও অন্যান্য সংগঠনের ন্যায়, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিরল প্রেসক্লাব ও রাজনৈতিক, সামজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের উদ্যোগে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।