বগুড়া
মূল বিএনপি রাজপথে তৃণমূল ভোটে
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মেলাচ্ছে নানা রাজনৈতিক সমীকরণ। তবে এরমধ্যেই বগুড়ার সাতটি আসনে প্রার্থী তালিকা তৈরি করেছে তৃণমূল বিএনপি। দলটির পছন্দের তালিকায় বিএনপির সাবেক দুই এমপি, একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন। তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, শুধু বগুড়ার সাতটি আসনে নয়, তৃণমূল বিএনপি সারাদেশে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে। এজন্য তারা অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। নির্বাচনের আগেই তৃণমূলকে গুছিয়ে মাঠে নামতে চায় দলটি। এক্ষেত্রে বিএনপি থেকে পদবঞ্চিত, বহিষ্কৃতদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বেশি।
বগুড়ার সাতটি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা না হলেও কারা হতে পারেন এর একটি খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সাবেক বিএনপি নেতা শোকরানা ও কর্নেল (অব.) জিল্লুর রহমান, বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী বিউটি বেগম, বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে জাপান প্রবাসী আফজাল হোসেন নয়ন, বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে সাবেক মেয়র ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা কামরুল হাসান, বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে সনাতন ধর্মাবলম্বীর এক ব্যবসায়ী, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল।
তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমাদের সঙ্গে অনেকে যোগাযোগ করছেন। আমরা নির্বাচন করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এ মুহূর্তে সব তথ্য প্রচার করছি না। এটাকে রাজনৈতিক গোপনীয়তা বলতে পারেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ায়। এ কারণে বিএনপির অবস্থান এখানে শক্তিশালী ছিল। তবে ওয়ান-ইলেভেনের পর দলে দেখা দেয় বিভক্তি। দলীয় কোন্দল আর পদ পেতে অনেকেই কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। পরে জেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের কমিটি গঠন করতে গিয়ে বঞ্চিত করা হয়েছে দলের ত্যাগী নেতাদের।
এদিকে ২০২২ সালের নভেম্বরে জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে রেজাউল করিম বাদশা সভাপতি ও আলী আজগর তালুকদার হেনা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলনের প্রায় ১০ মাস পর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম ১২ বছর দায়িত্ব পালনের সময় অসংখ্য ত্যাগী নেতাকর্মী সৃষ্টি করেন। ১৫১ সদস্যের জেলা কমিটিতে সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁনকেও রাখা হয়নি। জেলা বিএনপির যে আহ্বায়ককে ঘিরে দলের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে, সেই আহ্বায়ক সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজও বাদ পড়েন। এখানকার আন্দোলনের অন্যতম নেতা জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার, দেলোয়ার হোসেন পশারী হিরু, শাহ মেহেদী হাসান হিমু, তৌহিদুল ইসলাম বিটুসহ বেশ কয়েকজনের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়নি। স্বাভাবিক কারণেই তারা কমিটিতে নেই। এছাড়া বর্তমানে দল থেকে বহিষ্কার হয়ে আছেন বগুড়া পৌরসভার তিনবারের প্যানেল মেয়র ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস, শহর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাসুদ রানা, ফারুকুল ইসলাম ফারুক, বিএনপি নেতা সরকার বাদলসহ শতাধিক নেতা।
বিএনপির একজন বড় দাতা ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শোকরানা। তাকেও দলের কোথাও রাখা হয়নি। এ কারণে অভিমান করে তিনি দলের সব পদ থেকে ইস্তফা নিয়েছেন। তাকে ফেরাতে কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। দ্বন্দ্বের কারণে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাকে দীর্ঘদিন একসঙ্গে দেখা যায় না। এসব নানা কারণে জেলা বিএনপির অনেক নেতাই গোপনে তৃণমূল বিএনপির ঘরে পা বাড়াতে শুরু করেছেন। যদিও কেউই সরাসরি ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেননি।
২০১৫ সালে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তৃণমূল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দলটি নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়। নাজমুল হুদার মৃত্যুর পর ১৬ মে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তার মেয়ে ব্যারিস্টার অন্তরা হুদা। গত ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলের মাধ্যমে শমসের মবিন চৌধুরীকে দলটির চেয়ারপারসন ও তৈমূর আলম খন্দকারকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ এক্সিকিউটিভ চেয়ারপারসন করা হয় প্রয়াত নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা হুদাকে। এরপর থেকে দলটি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। এর প্রভাব পড়েছে বগুড়ার বঞ্চিত বিএনপির নেতাকর্মীর মাঝে।
বগুড়া পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার জানান, নানা কারণেই দলের অনেক নেতা ভুল করেছেন। তাদের আবার দলেও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার বেলায় শুধু অবহেলা। ভুলত্রুটি ছিল, এখনতো নেই। তবু দল ছেড়ে চলে যাননি। তিনি এখনও আশায় আছেন, বিএনপি তাকে ফিরিয়ে নেবে।
বগুড়ার শাজাহানপুরের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরকার বাদল বলেন, নতুন কিছু করতে চাই। বগুড়া জেলা বিএনপির রাজনীতি করার মতো পরিবেশ নেই। ত্যাগীরা এখানে অবহেলিত। এ কারণে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবো, এটা নিশ্চিত।
বগুড়ার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও ফোরস্টার হোটেল নাজ গার্ডেনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোকরানা বলেন, কোনো দল থেকে নয়, এলাকার মানুষের উন্নয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। এজন্য এলাকার ভোটারদের সঙ্গে আলাপ চলছে।
এফএ/জিকেএস