ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

নেত্রকোনায় হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ সংস্কারে ধীরগতি

জেলা প্রতিনিধি | নেত্রকোনা | প্রকাশিত: ০৪:২০ পিএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

নেত্রকোনার সাত উপজেলার ১৩৪টি হাওরে এবারও হুমকির মুখে রয়েছে বোরো ফসল। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওরের ঝুকিপূর্ণ ফসলরক্ষা বাঁধ সংস্কারের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কোনো কোনো স্থানে এখনো শুরুই হয়নি কার্যক্রম। এদিকে সময়মতো হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় একমাত্র বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে হাওরাঞ্চলের চাষিদের।

তবে স্থানীয় পাউবোর দাবি, জেলার ১৫২টি ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্পের কাজের গড় অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। নির্ধারিত সময়েই শেষ হবে কাজ।

জানা যায়, নিয়মানুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির কাজে সরাসরি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে যুক্ত করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নসহ তদারকিতে জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও নেত্রকোনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে সদস্যসচিব করে জেলা কমিটি করা হয়। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে সভাপতি ও পাউবোর একজন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। মূলত উপজেলা কমিটি প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠন করে জেলা কমিটিতে পাঠায়। পরে জেলা কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য প্রকৃত কৃষক ও স্থানীয় সুবিধাভোগীদের নিয়ে পাঁচ থেকে সাত সদস্যের একটি পিআইসি থাকে। একটি পিআইসি সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করতে পারে।

স্থানীয় পাউবো সূত্র জানায়, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা শেষ করার কথা। এর আগে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন এবং ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণের কাজ চূড়ান্ত হওয়ার কথা। কিন্তু পানি ধীরগতিতে নামায় প্রকল্প নির্ধারণের কাজ চূড়ান্ত করতে দেরি হয়। পিআইসি গঠিত হলেও পানির কারণে সব বাঁধের কাজ এখনো শুরু করা সম্ভব হয়নি।

জেলা পাউবো সূত্রে জানা যায়, জেলায় পাউবোর অধীন প্রায় ৩৬৫ কিলোমিটার ডুবন্ত (অস্থায়ী) বাঁধ রয়েছে। এসব বাঁধের ওপর স্থানীয় কৃষকদের প্রায় ৪২ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল নির্ভর করে। এ ফসলের ওপর ভিত্তি করে কৃষকদের সারা বছরের সংসার খরচ, চিকিৎসা, সন্তানদের লেখাপড়াসহ সবকিছু। জেলার খালিয়াজুরি, মোহনগঞ্জ, মদন, কলমাকান্দা ও বারহাট্টা উপজেলায় রয়েছে ছোট বড় ১৩৪ টি হাওর। এর মধ্যে খালিয়াজুরিতে ৮৯টি হাওর রয়েছে। আর এখানে রয়েছে ১৮০ কিলোমিটার ডুবন্ত অস্থায়ী বাঁধ। এরমধ্যে ১১০ টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৯২ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খালিয়াজুরী উপজেলায় ১০৮ টি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, মদনের ২৫ টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয় চার কোটি ৪৯ লাখ টাকা, মোহনগঞ্জে ২৬ টি পিআইসি প্রকল্পের জন্য চার কোটি ৪১ লাখ টাকা, কলমাকান্দায় সাতটি প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয় এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা, বারহাট্টায় ৯ টি প্রকল্পের জন্য এক কোটি ৭০ লাখ টাকা, পূর্বধলায় দুটি প্রকল্পের জন্য ৪৫ লাখ টাকা, আটপাড়ায় একটি প্রকল্পের জন্য ১১ লাখ টাকা। এরমধ্যে এবছরে বরাদ্দ পাওয়া গেছে ১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

উপজেলার কীর্তনখলা হাওরের কৃষক সবুজ মিয়া, আব্দুর রহমান, কাশেম মিয়াসহ কথা হলে তারা বলেন, ‘আমরা ঋণ করে বোরোর আবাদ করতেছি। বাঁধের কাজ এবছর ঠিক সময়ে শুরু হয়নি। এ কারণে আমরা আতঙ্কে আছি। আগাম বন্যার পানিতে ফসল নষ্ট হলে স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ পোষণ করতে পারবো না।’



খালিয়াজুরী হাওররক্ষা পরিষদের সভাপতি শ্বাগত সরকার শুভ জাগা নিউজকে বলেন, হাওরের পানি নামতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের কারণে এবার স্থানীয় প্রশাসনের তদারকি কম ছিল। ফলে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের তেমন অগ্রগতি হয়নি। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হলে পুরো হাওরের বোরো ফসল হুমকিতে থাকবে।

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান বলেন, সব প্রস্তুতি রয়েছে। পানি শুকানোর সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত কাজ শুরু করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও জানান, গত বছর জেলায় ৩৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০৬টি পিআইসি গঠন করা হয়েছিল। এ বছর বাঁধের ক্ষতি কম হওয়ায় ২৮টি পিআইসি কম করা হয়েছে। ১৫৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে গঠিত ১৭৮টি পিআইসির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। জাতীয় নির্বাচন ও তীব্র শীতের কারণে কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হবে।

এইচ এম কামাল/এনআইবি/এএসএম