ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

দুঃখ ঘোচাতে নিজ উদ্যোগে গ্রামবাসীর রাস্তা নির্মাণ

জেলা প্রতিনিধি | কুড়িগ্রাম | প্রকাশিত: ০৯:২২ এএম, ২৬ মার্চ ২০২৪

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভেরখাষ ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রামের মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয়। অসময়ে বন্যা বৃষ্টিতে বছরের বড় একটি সময় জনপদগুলো হয়ে পড়ে বিচ্ছিন্ন। বল্লভেরখাষ ইউনিয়নের তেমনি একটি এলাকা চর কৃষ্ণপুর। শিক্ষা-চিকিৎসা-ব্যবসাসহ যেকোনো প্রয়োজনেই উপজেলা শহর নাগেশ্বরীই কেবল নয় পাশের কুমুদপুর বাজারে যাতায়াতে শুকনো মৌসুমেও এই চর কৃষ্ণপুরবাসীর পায়ে হাঁটার বিকল্প নেই। আবার বৃষ্টিতে পায়ে হাঁটার সেই রাস্তাটুকু তলিয়ে থাকে বছরের বড় একটি সময়। ফলে একটি সড়কের অভাবে জীবন-জীবিকার গতি থমকে আছে এ এলাকাযর মানুষের।

বহু বছর অপেক্ষার পরও যখন এখানে একটি সড়ক নির্মাণের দাবি পূরণ হয়নি তখন নিজেরায় উদ্যোগ নেন সড়কটি নির্মাণের। মনোবল আর শ্রমকে পুঁজি করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইতোমধ্যে গ্রামবাসী দীর্ঘ এ রাস্তার যতটুকু করেছেন সেটাই এখন বিস্ময়।

জানা যায়, গ্রামবাসী উদ্যোগ নিয়ে রাস্তাটির কাজ শুরুর আগে স্থানীয়দের নিয়ে সড়ক নির্মাণে কমিটি তৈরি করেছেন। এ কমিটিই আস্থার সঙ্গে তত্ত্বাবধান করছে কাজটি। কমিটির সদস্যদের মাঝে বিভিন্ন স্তরে কাজ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সদ্যসের কেউ টাকা তুলছেন আবার কেউ খরচের হিসেব রাখছেন। সড়কটি তৈরি হলে বহুমুখী সুবিধা পাবেন এলাকাবাসী।

দুঃখ ঘোচাতে নিজ উদ্যোগে গ্রামবাসীর বাঁধ নির্মাণ

গ্রামের মানুষ আব্দুল মান্নান জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। এই গ্রামে যাতায়াতে কোনো রাস্তা নেই। বছরের বেশিরভাগ সময় বন্যা আর বৃষ্টিতে কষ্ট করতে হয়। সে সময় যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। শুকনো মৌসুমেও কোনোরকমে ক্ষেতের আইল ধরে প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পাকা সড়কে উঠতে হয়। এ পথে আমাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য কিংবা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা -নেয় বড়ই কষ্টের। এখানকার ছেলে -মেয়রা যোগাযোগের অভাবে লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়েছে। বহুবছর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং উপরমহলের সঙ্গে যোগাযোগ করেও একটি সড়ক নির্মাণের ব্যবস্থা হয়নি। তাই গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে নিজেদের সড়ক নিজেরাই তৈরি করছি।

চরের আরেক বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুব আলী জানান, সড়কটি তৈরির জন্য বহুজনের কাছে গেছি। সবাই কথা দিয়েছেন কিন্তু কাজ করেননি। তাই নিজেরা উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা জানি একটা সড়কের জন্য আমাদের কত কষ্ট করতে হয়। বৃষ্টি মৌসুমে ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। প্রসূতির জরুরি চিকিৎসা করাতে পারি না। সড়কটি নির্মাণ হলে এসব সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া সড়কটি বন্যার সময় বাঁধের কাজ করবে।

খোকন মিয়া জানান, সড়কটি নির্মাণে গ্রামবাসীদের একত্রিত করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। সবাই সাধ্যমতে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। কেউ শ্রম দিচ্ছেন। সড়ক নির্মাণ একটা কমিটি করেছি। এই কমিটি আস্থার সঙ্গে কাজ বাস্তাবায়ন করছে।

দুঃখ ঘোচাতে নিজ উদ্যোগে গ্রামবাসীর বাঁধ নির্মাণ

কমিটির কোষাধ্যক্ষ আব্দুল খালেক জানান, গ্রামেরে বাসিন্দারা সর্বনিম্ন দুই আবার কেউ চার কেউবা বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। তবে এ টাকা খুব নগণ্য। সড়কটি নির্মাণে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা প্রয়োজন।

বল্লভেরখাষ ইউপি চেয়াম্যান এস এম আব্দুর রাজ্জাক জানান, প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি তৈরিতে ইউপির পক্ষে বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই চরের বাসিন্দাদেরা জোটবদ্ধ হয়ে কাজ শুরুর পরামর্শ দিয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ জানান, চর কৃষ্ণপুরবাসী সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নিয়ে একটি সড়ক নির্মাণ করছেন। এটি প্রশংসনীয় কাজ। তাদের কাজে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার উদ্যোগ নিয়েছি। পরিদর্শন করে সহযোগিতা দেওয়া হবে।

ফজলুল করিম ফারাজী/এএইচ/জিকেএস