ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

হবিগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ৪: শোকে স্তব্ধ আগুয়া গ্রাম

জেলা প্রতিনিধি | হবিগঞ্জ | প্রকাশিত: ০৭:৪০ পিএম, ১০ মে ২০২৪

সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের হাওর বেষ্টিত আগুয়া গ্রামে। শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে গ্রামটি। এমন অমানবিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। শুক্রবার (১০ মে) বিকেলে চারজনের মরদেহ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

নিহত অটোরিকশাচালক আব্দুল কাদিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে মুহ্যমান তার মা, স্ত্রীসহ স্বজনরা। বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তারা। তার তিন সন্তান অপরিচিত কাউকে দেখলেই আঁতকে উঠছে। তার বড় ছেলে জিসানের বয়স ৬ বছর, দ্বিতীয় মেয়ে তানহার বয়স ৩ এবং ছোট ছেলে জিহানের বয়স ১ বছর।

একই দৃশ্য দেখা যায় লিলু মিয়ার বাড়িতেও। তার চার সন্তান। বড় ছেলে রনি (৭), দ্বিতীয় জনি (৬), তৃতীয় সানিয়া (৫) ও সবার ছোট বায়জিদ (৩)। তাদের বাড়িতেও শোকের মাতম চলছে। তাদের কান্না দেখে কান্নার রোল পড়েছে সাধারণ মানুষের মানুষের মাঝে।

শোকে স্তব্ধ আগুয়া গ্রাম

নিহত নিলু মিয়ার মা সুন্দর বানু এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, প্রচুর মানুষ লাঠিসোট নিয়ে আসছে দেখে আমার ছেলে শুধু জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিল। সে আর ফিরে এলো না। পাষণ্ডের দল আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলেছে।

আব্দুল কাদিরের মা সেলিনা বেগম বলেন, আমার ছেলে গিয়েছিল বিয়ে খেতে। তাই সে সিএনজি নিয়ে একটু আগে যেতে চেয়েছিল। আগে সিরিয়াল চাওয়াই আমার ছেলের কাল হয়েছে। বদীর লোকজন নিয়ে আমার ছেলেকে বাজারে পানিতে ফেলে মারধর করেছে। কেউ ফেরায়নি। সবাই শুধু দেখেছে। এরপর মিটিং করে তারা লাঠিসোটা নিয়ে এসে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে।

আরও পড়ুন

লিলু মিয়ার মামা রহমত আলী বলেন, তারা পরিকল্পনা করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ পক্ষের কেউই তাদের পরিকল্পনার কথা জানে না। যদি জানতো তবে এত মানুষ মরে না। তারা হয়তো বাড়িঘরে দৌড়ে চলে আসতো পারতো। আমার ভাগনে মাঠে ধান শুকাচ্ছিল। এ সময় বদীর মিয়ার লোকজন এসে তাকে হত্যা করে।

শোকে স্তব্ধ আগুয়া গ্রাম

স্থানীয় বাসিন্দা হারুন মিয়া বলেন, এ ধরনের ঘটনা আগে কখনও দেখিনি। আমাদের গ্রামে বহু মারামারি হয়েছে। একদল মারামারিতে লিপ্ত হলে আরেকদল আটকিয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার কয়েক দল মিটিং করে এসে হামলা করে এতগুলো মানুষকে হত্যা করেছে। লিলু মাঠে কাজ করছিল। তাদের দেখে জিজ্ঞেস করতেই তারা ফিকল (বাঁশের মাথায় লাগানো সূঁচালো অস্ত্র) দিয়ে ঘাই দিয়ে তাকে হত্যা করে।

মন্দরী ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ সোহেল বলেন, আব্দুল কাদির আমার চাচাতো ভাই। আমার ভাইকে মেরে ফেলার পরও আমি বদীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি শান্ত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মিজান ও বদীরের নেতৃত্বে তারা একের পর এক হামলা করে গেছে। মেরেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। বাড়িঘরও ভাংচুর, লুটপাট করেছে।

বানিয়াচং সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ রঞ্জন দে বলেন, মরদেহগুলো তাদের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনও মামলা হয়নি। তবে মরদেহ দাফনের পর মামলা রুজু হবে। হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/আরএইচ/এএসএম