জন্মবার্ষিকী ঘিরে মধুমেলায় বর্ণিল আয়োজন
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্মরণে যশোরের সাগরদাঁড়িতে শুরু হয়েছে স্মরণানুষ্ঠান ও সপ্তাহব্যাপী মেলা। মেলায় ভক্ত ও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতায় মারা যান মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। এরপর কবির ভাইয়ের মেয়ে কবি মানকুমারি বসু ১৮৯০ সালে সাগরদাঁড়িতে কবির প্রথম স্মরণসভার আয়োজন করেন। সেই থেকে সাগরদাঁড়িতে মধুসূদনের জন্মদিন উপলক্ষে স্মরণোৎসবের আয়োজন হয়ে আসছে।
এ বছর ২৪ জানুয়ারি শুরু হওয়া সাত দিনব্যাপী স্মরণোৎসব ও মেলা শুরু হয়েছে। স্মরণ ও মেলা ঘিরে কপোতাক্ষ পাড়ের সাগরদাঁড়ি গ্রামে হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে।

সাতক্ষীরা থেকে আসা কাজমির হোসেন বলেন, ‘পরিবার নিয়ে কবির বাড়ি ঘুরতে এসেছি। তার নানা স্মৃতি ও স্মারক দেখছি। তার কবিতা বইয়ে পড়েছি। এখানে এসে আরও বিস্তারিত জানতে পারছি। সঙ্গে মেলার আয়োজন। সবমিলিয়ে খুবই ভালো লাগছে।’
আরেক দর্শনার্থী কেশবপুরের জাকির হোসেন বলেন, আধুনিক কবিতার জনক মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তার স্মরণে জন্মভূমিতে একটি সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু সেই দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। মধুপল্লীরও উন্নয়ন হয়নি। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া উচিত।

চার দশকের বেশি সময় ধরে সাগরদাঁড়িতে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম উৎসব ঘিরে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা বসছে। নাগরদোলা, সার্কাস, পুতুল নাচ, যাত্রাপালা, মোটরসাইকেল ও কার রেসের মতো আয়োজন ঘিরে মানুষের আকর্ষণ বেড়েছে। সেইসঙ্গে মেলার অন্যতম অনুষঙ্গ হরেক রকমের মিষ্টি, প্রসাধন সামগ্রী, খেলনা, নিত্যপণ্যের পসরা সাজিয়েছেন বিক্রেতারা।
খেলনার স্টলের মালিক ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার রাশেদ শেখ বলেন, ‘২০ বছর ধরে মেলায় দোকান দিচ্ছি। এবারও এসেছি। মেলার জায়গা বরাদ্দ পেতে বেশি টাকা গুনতে হবে। বেচাকেনা শুরু হয়েছে ভালো। আশা করছি আরও ভালো হবে।’

আরেক দোকানি শরিফ মোল্লা বলেন, ‘মেলায় মানুষের ভিড় বাড়ছে। দিনের চেয়ে সন্ধ্যার পর বেশি লোক সমাগম হচ্ছে।’
এদিকে, জুলাই বিপ্লবের গৌরবময় চিত্র তুলে ধরে একটি কর্নার করা হয়েছে মেলায়। সেখানে স্থান পেয়েছে জুলাই বিপ্লবের বীর শহীদদের গৌরবাগাঁথা। স্মরণ করা হয়েছে বিপ্লবের শহীদ আবু সাঈদসহ নিহত ও আহতদের। জুলাই বিপ্লবে নিহত যশোরের কেশবপুরের ভালুকঘরের ছেলে তৌহিদুর রহমানের ছবি ও সংক্ষিপ্ত সংগ্রামের ইতিহাস স্থান পেয়েছে এই কর্নারে। ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি।

মেলার সার্বিক আয়োজন বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে মেলা চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ভালোভাবে শেষ হবে বলে আশাবাদী তিনি।
১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ, বাংলায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, সনেট রচয়িতা মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
মিলন রহমান/এসআর/এএসএম