ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

টিসিবির ‘এক পণ্যে দুই দাম’, খালি হাতে ফিরছেন অনেকে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৫৮ পিএম, ২৭ মে ২০২৫

দুপুর একটায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের পাশের রাস্তায় পণ্য বিক্রি করছিল সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর ভ্রাম্যমাণ ট্রাক। সংস্থাটি আগেই জানিয়েছিল, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ফ্যামিলি কার্ডধারীদের পাশাপাশি যেকোনো সাধারণ ভোক্তাও টিসিবির বিশেষ এই ট্রাকসেল থেকে পণ্য কিনতে পারবেন।

স্বাভাবিকভাবে ঈদ সামনে রেখে এই সুযোগ লুফে নেওয়ার কথা ছিল সাধারণ ক্রেতাদের। কিন্তু দৃশ্যপটের বাস্তবতা ভিন্ন। প্রেস ক্লাবের পাশের রাস্তার ওই ট্রাকসেলের কাছে গিয়ে ক্রেতাদের তেমন চাপ দেখা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এর আগে বিভিন্ন সময় দেখা যেতো, ওই এলাকায় টিসিবির ট্রাকসেলে পণ্য বিক্রি শুরু হলে কয়েকশো ক্রেতা লাইনে দাঁড়িয়ে যেতেন। আজ নারী-পুরুষ মিলিয়ে সেই সংখ্যা পঞ্চাশ জনের বেশি হবে না। নেই আগের মতো ভিড় কিংবা হুড়োহুড়িও। ক্রেতারা অনেকটা নির্ঝঞ্ঝাটভাবে পণ্য কিনতে পারছেন।

তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রির এই ট্রাকসেলে হঠাৎ ক্রেতার চাপ কম কেন, জানা গেছে সেই কারণও। ক্রেতাদের অনেকে জানিয়েছেন, টিসিবি পণ্যের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। দাম বাড়ার কারণে আগ্রহ হারিয়েছেন ক্রেতাদের অনেকে।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সেখানে লাইনে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ক্রেতার চাপ কমার আরও একটি বিশেষ কারণ জানা গেছে। তারা জানিয়েছেন, টিসিবির ট্রাকে ‘এক পণ্যে দুই দাম’ রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ, একই পণ্য কার্ডধারীরা যে দামে পাচ্ছেন, যাদের কাছে কার্ড নেই তাদের কিনতে হচ্ছে তার চেয়ে বাড়তি দামে।

টিসিবির ‘এক পণ্যে দুই দাম’, খালি হাতে ফিরছেন অনেকে

বিজ্ঞাপন

সেখানকার ট্রাকসেলে তেল, চিনি ও ডাল মিলিয়ে কার্ডধারীরা যে প্যাকেজটি ৩৯০ টাকায় কিনছেন, অন্যদের তা কিনতে গুনতে হচ্ছে ৫১৫ টাকা।

পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে আকলিমা বেগম নামের একজন ক্রেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগের চেয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছু করার নেই আমাদের। সবাই চায় কমে কিনতে। আমরা গরিব মানুষ, কিন্তু এখন টিসিবিতেও কম দামে পণ্য পাচ্ছি না।’

ওসমান গনি নামের একজন বলেন, ‘আমরা নিরুপায়। কেন দাম বাড়ালো সেটা ওরা (টিসিবি) জানে। কিন্তু এটা ঠিক হয়নি।’

বিজ্ঞাপন

ওই ট্রাকসেল থেকে পণ্য কিনতে আসা বিজয় দাস বলেন, ‘টিসিবির কার্ডধারীদের চেয়ে আমরা কেন বেশি দামে পণ্য কিনবো? এটি আমাদের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। সরকারের কাছে এর সুষ্ঠু সমাধান চাই। এক দেশে দুই নীতি কেন? এ বৈষম্য কেন?’

ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারাদেশে প্রতিদিন ৬৯০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে সাধারণ ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। গত ২২ মে থেকে শুরু হওয়া এই ট্রাকসেলে মিলছে ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডাল। ফ্যামিলি কার্ডধারী ছাড়াও যেকোনো ভোক্তা ট্রাকসেল থেকে এসব পণ্য কিনতে পারছেন।

৬৯০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৫০টি, চট্টগ্রামে ২০টি, ৬টি বিভাগীয় শহরে ১০টি করে এবং অবশিষ্ট ৫৬টি জেলা শহরে ১০টি করে ট্রাকে সাশ্রয়ী মূল্যে ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডাল বিক্রি করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফ্যামিলি কার্ড নেই- এমন ভোক্তাদের কাছে ১৩৫ টাকা লিটার দরে সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, ৮৫ টাকা কেজি দরে এক কেজি চিনি ও ৮০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল বিক্রি করছে টিসিবি।

অন্যদিকে, কার্ডধারী ক্রেতার কাছে প্রতি লিটার তেল ১০০ টাকা দরে, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা ও চিনির কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ, সাধারণ ক্রেতাদের দুই লিটার তেলে ৭০ টাকা, দুই কেজি ডালে ৪০ টাকা এবং এক কেজি চিনিতে ১৫ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।

২২ মে শুরু হওয়া টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের এ বিক্রয় কার্যক্রম চলবে আগামী ৩ জুন পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

টিসিবির ‘এক পণ্যে দুই দাম’, খালি হাতে ফিরছেন অনেকে

ক্রেতারা বলছেন, টিসিবির কার্ডধারীদের চেয়ে অন্য ক্রেতাদের কাছে পণ্যের দাম অনেকটাই বেশি রাখা হচ্ছে। কার্ডধারীরা যেখানে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল পাচ্ছেন ১০০ টাকায়, সেখানে দুই লিটার তেল কিনতে একজন সাধারণ ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ২৭০ টাকা। অর্থাৎ কার্ডবিহীন ক্রেতার কাছ থেকে প্রতি লিটার তেলে ৩৫ টাকা বেশি দাম রাখা হচ্ছে।

প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কের ওই ট্রাকসেলে পণ্য বিক্রি করছিল ডিলার নেজারাক ইন্টারপ্রাইজ। ডিলারের প্রতিনিধি বলেন, কার্ডবিহীন প্রতিটি প্যাকেজের দাম পড়ছে ৫১৫ টাকা।

বিজ্ঞাপন

মশিউর রহমান নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘এ দামের ব্যবধানের কারণে সাধারণ মানুষদের ১২৫ টাকা বেশি দিয়ে একই প্যাকেজ কিনতে হচ্ছে। অনেকে বাড়তি দামের কারণে পণ্য নিতে পারছেন না। খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। যে কারণে ট্রাকসেলে এখন ক্রেতা কম।’

এনএইচ/এমকেআর/এএসএম

বিজ্ঞাপন