ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা

কপ সম্মেলনে প্রান্তিক কৃষক ও মৎস্যজীবীদের নিয়ে আলোচনা হয় না

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:১০ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জলবায়ুজনিত দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক কৃষক ও মৎস্যজীবীরা। তবে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ) তাদের বিষয়ে আলোচনা হয় না। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে আয়োজিত ‘কপ-৩০: ক্ষুদ্র কৃষক ও মৎস্যজীবীদের অধিকার, জীবিকা ও জলবায়ু সক্ষমতা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

ইংরেজি জাতীয় দৈনিক ‘দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’-এর সম্মেলন কক্ষে কোস্ট ফাউন্ডেশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী।

সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরডি) প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, সব সময় কপ সম্মেলনে প্রান্তিক কৃষক ও মৎস্যজীবীদের বিষয়গুলো উপেক্ষিত ছিল। যদিও তারা জলবায়ু অভিঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। সরাসরি তাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কোনো সহায়তাও থাকে না।

মো. শামসুদ্দোহা বলেন, সেখানে (কপ সম্মেলনে) বিশ্ব নেতাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয় কীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলো টাকা আদায় করবে আর উন্নয়ন সহযোগিরা কীভাবে উচ্চসুদে ঋণ দেবে।

সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী আরও বলেন, আমাদের কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জন্য একটি ন্যাশনাল এডাপটেশন প্লান দরকার। এরপরেও বিদেশ থেকে যেটুকু প্রকল্প আসে, এ দেশে সেটাও ঠিকঠাক ব্যবহার করা হয় না।

উদাহরণ দিয়ে শামসুদ্দোহা বলেন, বাংলাদেশে ২৫ মন্ত্রণালয় যেসব প্রকল্প নেয়, তারমধ্য ৯৯ শতাংশ নন ক্লাইমেট প্রকল্প। আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিঘাত ঠেকাতে অনেক টাকা দরকার। এরমধ্যে যে সামান্য টাকা আসছে সেটার অপচয় হচ্ছে নানাভাবে, সেটা কেউ দেখছে না।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও লেখক গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, এ দেশে কৃষির উন্নতি হয়েছে কিন্তু কৃষকের বারোটা বেজে গেছে। কৃষকরা ভর্তুকির টাকাও পায় না। আবার এ নিয়ে সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম কপে গিয়েও কেউ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জেলা বা কৃষকের দুর্দশার কথা বলে না। আমাদের কপ-৩০-এ এসব বিষয় উপস্থাপন করা উচিত। বাংলাদেশের যে প্রতিনিধিদল তাতে যোগ দেবে, তাদের (কপ প্রতিনিধিদের) এসব বিষয় বোঝাতে হবে।

মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ব্লু ইকোনমি) সাজদার রহমান বলেন, জলবায়ূ পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতির কিছু বিষয়ে আমাদের একাধিক মন্ত্রণালয় জড়িত। কিন্তু সেগুলোর সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সরকার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে কৃষক ও মৎসজীবীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যেমন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইলিশের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবার, তবে সেটা মোকাবিলায় মাছ ধরা বন্ধ করলে মৎসচাষীদের জীবন-জীবিকা ব্যাহত হয়।

সাজদার রহমান আরও বলেন, আমাদের বাড়তি তাপমাত্রা নানাভাবে খাদ্য উৎপাদন কমাচ্ছে। সাইক্লোন-ঘূর্ণিঝড় এখন বেড়ে যাচ্ছে। আবার তার প্রভাবে কৃষক জেলেদের আয় কমছে। অন্যদিকে ভোক্তারাও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সব কিছু মাথায় রেখে জলবায়ূ সম্মেলনে আমাদের প্রত্যাশা নির্ধারণ করা দরকার।

বক্তারা আরও বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত তিনটি রিও কনভেনশন-জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং ভূমি অবক্ষয় মোকাবিলা-বাস্তবায়নে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (NDC), জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (NAP) এবং জীববৈচিত্র্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ক্ষুদ্র কৃষক ও মৎস্যজীবীদের প্রত্যাশা যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। কপ-৩০-এর প্রেক্ষাপটে কৃষি ও মৎস্য খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা দরকার।

কীভাবে ক্ষুদ্র কৃষক ও মৎস্যজীবীদের অধিকার, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও জলবায়ু সক্ষমতা নিশ্চিত করা যায়; প্রকল্প ও নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ; নারী ও যুব কৃষকদের জন্য জমি, সম্পদ, প্রযুক্তি ও বাজার প্রবেশাধিকারের নীতিগত স্বীকৃতি এবং আর্থিক সহায়তা ও মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নে কীভাবে জবাবদিহি বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে প্রান্তিক কৃষকদের মতামত নেন আলোচনা সভায় উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা ।

এ সময় প্রান্তিক চাষিরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবনাক্ততা প্রতিরোধে সহায়তা, শষ্য বীমা ও ভাড়া জমির ক্ষেত্রে একটি সুনিদৃষ্ট নীতিমালা দাবি করেন।

এনএইচ/এমএমকে/জিকেএস