বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত করার দাবি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত করার দাবিতে ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভা/ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিত করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। অস্বাভাবিক ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু বে ভিউতে ব্যবসায়ীদের সমন্বয় সভায় বক্তারা এ দাবি করেন। বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আলোচনা না করা পর্যন্ত এ ট্যারিফ স্থগিত করার দাবি জানানো হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের ব্যানারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম, চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এসএম আবু তৈয়বের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এশিয়ান গ্রুপের প্রধান এমএ সালাম।
এতে চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক, বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি সেলিম রহমান, মেট্রোপলিটন চেম্বারের
সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, সাবেক পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, বিজিপিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ চৌধুরী, বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরীসহ, বেপজার সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভিরসহ ব্যবসায়ী নেতারা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি আমির হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ২০০৩ সালে বাফার সঙ্গে গার্মেন্টসের যখন সমস্যা হয়েছিলো তখন আমি চেম্বারের সভাপতি ছিলাম। বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ একসঙ্গে প্রতিরোধ করতে পেরেছিলাম। এবার বন্দরের নতুন ট্যারিফ সাধারণ মানুষকে দিতে হবে। বন্দর নিয়ে যে খেলা শুরু হয়েছে তা খেলতে দেওয়া হবে না। বন্দরে চট্টগ্রাম চেম্বার থেকে একজন প্রতিনিধিকে পরিচালক করতে হবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, বন্দরের মাশুল ব্যবসায়ীরা পেমেন্ট করবে না। এটা জনগণকে পেমেন্ট করতে হবে। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে স্বাধীন পরিচালক আছে, বন্দরে নেই কেন? আমরা কারও গোলাম না। আমার টাকায় আপনারা (বন্দর) চালান। ট্যারিফ বাড়ানো ষড়যন্ত্র। মোংলা, পায়রায় বাড়াননি। আমি ৪০ বছর ব্যবসা করছি। কচি খোকা নই। বন্দরকে বাঁচাতে হবে।
বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, আরএমজি সেক্টরের ব্যবসায়ীরা বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি দুটোই করে। ভিয়েতনাম, ভারত ও মালয়েশিয়ার চেয়ে আমাদের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বেশি। ২৯ বছরের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতায় বন্দরকে লস করতে দেখিনি। তাহলে বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ কেন বাড়াতে হবে?
মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী বলেন, আমরা ট্যারিফ বাড়ানোর বিরুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দর জনগণের টাকায় তৈরি সেবার জন্য। ২০২৩ সালের বন্দর আইনে উপদেষ্টা পরিষদ বাতিল করেছে। স্বাধীনতার সময় বন্দরে কাঁটাতারের বেড়া ছিলো। পৃথিবীতে সাড়ে চার হাজার বন্দর আছে। আড়াই হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। বাড়াতে হলে জাতীয় সংসদ বাড়াবে।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, দেশে প্রধান বন্দর নদীনির্ভর। বন্দরের মাশুল বাড়ানো নিয়ে আমাদের ক্ষোভ আছে। আমরা বলেছি সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বাড়াতে। ১৯৮৬ সালে ডলার ছিলো ৩০ টাকা। এখন ডলারের দাম চারগুণ বেড়েছে। শিপিং এজেন্ট ফ্রেইট বাড়িয়েছে। ৪১ শতাংশের মধ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। ২০ ফুটের কনটেইনারে ১২-১৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে। আমরা ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ চাই, আমরা স্বনির্ভর দেশ গড়ে দেব।
বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিপিং এজেন্ট ফি বাড়াবে। ভিয়েতনামের তিনগুণ খরচ হবে চট্টগ্রাম বন্দরে। আজকের দিনে ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলার কোনো সংগঠন নেই। ব্যবসায়ী সমাজ বিচ্ছিন্ন, হতাশাগ্রস্ত। সরকারি আমলারা এখন চট্টগ্রাম চেম্বার চালাচ্ছেন। দেশের অর্থনীতি, রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বেপজার সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভির বলেন, আমরা সাফার করছি বিভিন্ন কারণে। অনেক সিদ্ধান্ত আসছে যা ব্যবসায়ীদের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য আরএমজি। বায়াররা খরচ কমাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। কস্ট মিনিমাইজ করছে। বাংলাদেশ আরও কস্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা হতাশার। বন্দরের নতুন ট্যারিফ রপ্তানি প্রতিযোগিতায় আমরা পিছিয়ে যাব।
স্বাগত বক্তব্যে এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ সালাম বলেন, সংকট নিয়ে আজকের সভা। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। এটা প্রশংসার দাবি রাখে। বন্দর ব্যবসা করে না, সেবা দেয়। বন্দরের মাশুল এক মাসের জন্য পিছিয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে আমরা ভালো অবস্থানে নেই। আমরা চাই না বন্দর লস করুক। আমরা এটাও চাই না বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানোর ফলে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।
চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব বলেন, যুদ্ধসহ নানা টানাপোড়েনে অর্থনীতিতে ধকল যাচ্ছে। দেশের সেবাখাত ট্যারিফ বাড়িয়ে ব্যবসা দুর্বিসহ করছে। প্রতিবাদ হিসেবে আমাদের এ আয়োজন। নতুন ট্যারিফ কার্যকরের পর এ অঞ্চলের সবচেয়ে কস্টলি (ব্যয়বহুল) বন্দর হবে চট্টগ্রাম। বন্দরে আমদানি বন্ধ হলে রপ্তানিও বন্ধ হয়ে যাবে। তখন বন্দর কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ভাড়া দিতে হবে। ট্যারিফ বাড়িয়ে বন্দরকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এমডিআইএইচ/এমএমকে/জিকেএস