ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় গতি পাচ্ছে পাচার অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া

ইব্রাহীম হুসাইন অভি | ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে | প্রকাশিত: ০৮:১৯ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সম্মেলন চলাকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলাপে বুধবার (১৫ অক্টোবর) এ তথ্য জানান তিনি।

আমরা ব্যাংকগুলোকে বলেছি, তারা যেন এসব আইন সংস্থার সঙ্গে কাজ করে। তারা সফলভাবে টাকা উদ্ধার করতে পারলে, পুনরুদ্ধার অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ—যেমন ২০ শতাংশ তাদের ফি হিসেবে রাখা হতে পারে, বাকি অংশ ফেরত আসবে বাংলাদেশে

গভর্নর বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গঠিত স্টার গ্রুপ গত বছর থেকেই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে। স্টার গ্রুপের প্রধান কর্মকর্তাসহ তাদের প্রতিনিধিরা গত এক বছরে পাঁচ-ছয়বার ঢাকায় এসেছেন। তারা আমাদের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছেন।’

এক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে, কারণ এত বড় পরিসরে বিদেশ থেকে অর্থ উদ্ধারের অভিজ্ঞতা আমাদের আগে ছিল না বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন
রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি 
সেবার মান উন্নয়নেই চট্টগ্রাম বন্দরের শুল্ক বৃদ্ধি 
কর্মসংস্থানের অভাব অস্থিরতা ও অভিবাসন ঝুঁকি বাড়াবে: অজয় বাঙ্গা
আইএমএফের কঠিন শর্তে ঋণ নেবে না বাংলাদেশ 

ড. মনসুর বলেন, ‘সরকার এরই মধ্যে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করেছে। এই টিম বারোটি মামলার ভিত্তিতে তদন্ত করছে। দুদক, সিআইডি—এসব সংস্থাকে এখন সমন্বিত একটি কো-অর্ডিনেশন টিমে আনা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের কাজ শেষ পর্যায়ে, যাতে দেশি-বিদেশি আদালতে এগুলো উপস্থাপন করা যায়।’

‘বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়া জোরদারে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইন সংস্থাকে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যুক্ত করেছে। এসব সংস্থা সংশ্লিষ্ট বিদেশি ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে, যেখানে পাচার হওয়া অর্থ জমা রয়েছে।’

গভর্নর বলেন, ‘আমরা ব্যাংকগুলোকে বলেছি, তারা যেন এসব আইন সংস্থার সঙ্গে কাজ করে। তারা সফলভাবে টাকা উদ্ধার করতে পারলে, পুনরুদ্ধার অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ—যেমন ২০ শতাংশ তাদের ফি হিসেবে রাখা হতে পারে, বাকি অংশ ফেরত আসবে বাংলাদেশে।’

ড. মনসুর উদাহরণ হিসেবে বলেন, ‘সাইফুজ্জামানের লন্ডনে থাকা ৩৫০টি বাড়ির মধ্যে কয়েকটি এরই মধ্যেই নিলাম প্রক্রিয়ায় গেছে। আমরা ইউসিবিএল ব্যাংকের পক্ষে আইনজীবী সরবরাহ করেছি। ইউসিবিএল ওই আইনজীবীর সঙ্গে চুক্তি করে লন্ডনে সফলভাবে দাবি (claim) দাখিল করেছেন। অকশন শেষে মর্টগেজ বাদ দিয়ে বাকি অর্থ বাংলাদেশে ফেরত আসবে।’

তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি ধীরে হলেও তা বাস্তবসম্মত। লন্ডনে এখনো অনেক সম্পদ আইনি প্রক্রিয়ায় রয়েছে। একবার সফলভাবে নিষ্পত্তি হলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সিঙ্গাপুর, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক সহযোগিতা চুক্তির (Mutual Legal Assistance Treaty) আওতায় অন্য দেশে থাকা সম্পদ উদ্ধারের পথও খুলে যাবে।’

পাচার অর্থ উদ্ধারের অগ্রগতি নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন বাস্তবে অগ্রগতি নেই—কিন্তু এটি একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। অনেক দেশে এমন মামলার নিষ্পত্তিতে ১০-১২ বছর লেগেছে। আমরা এক বছরেই অনেক দূর এগিয়েছি। তাই অধৈর্য হওয়ার কিছু নেই।’

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ব্যাংকিং খাতকে টেকসইভাবে স্থিতিশীল করা। অর্থ ফেরত এলে সেটি হবে আমাদের জন্য ‘আইসিং অন দ্য কেক’। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলো শক্ত অবস্থানে ফিরে আসবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে নতুন স্বস্তি আনবে।’

আইএইচও/এএসএ/এমএফএ/জিকেএস