ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

মা ইলিশ রক্ষা অভিযান

ধরপাকড় চললেও বন্ধ নেই ইলিশ শিকার

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

চার থেকে পঁচিশ অক্টোবর, ২২ দিনব্যাপী চলছে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান। এরইমধ্যে কেটে গেছে দুই সপ্তাহের বেশি সময়। এ সময়ে দেখা গেছে, ধরপাকড় চললেও বন্ধ নেই ইলিশ শিকার। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ ধরেছে জেলেরা, বাধা দিলে বেপরোয়া হামলার ঘটনাও ঘটেছে। প্রশাসনের ঢিলেঢালা নরজদারিতে মা ইলিশ রক্ষার অভিযান কতটা সফল তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

মা ইলিশ রক্ষার অভিযান নিয়ে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। এতে বলা হয়েছে, বরিশালের তিনটি নদী ঘুরে দেখা গেছে, অবৈধ জাল পেতে মাছ ধরা থেমে নেই। প্রশাসনের নজরদারি এবং উপস্থিতি টের পেলে একদিকে জেলেরা পালিয়ে যায়, আবার সংঘবদ্ধ হয়ে বেপরোয়া হামলার প্রস্তুতিও নেয়। বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় বিবিসি বাংলার প্রতিনিধিকেও।

বরিশালের কীর্তনখোলা ও কালাবদর নদীতে দেখা গেছে অসংখ্য নৌকা। জেলেরা গোপনে জাল পেতে আড়ালে লুকিয়ে থাকে। প্রশাসনের অভিযানের সময় তাদের কেউ কেউ পালিয়ে যায়। আবার কোথাও কোথাও নৌকা থেকেই ইট পাথর ছুড়ে হামলা করার ঘটনাও ঘটে।

ধরপাকড় চললেও বন্ধ নেই ইলিশ শিকার

বিবিসি বাংলার ভাড়া করা স্পিডবোট কীর্তনখোলা নদীতে গেলে জেলে নৌকাগুলো প্রশাসনের লোক ভেবে পালানোর চেষ্টা করে। তবে কালাবদর নদী এবং মেঘনার মোহনায় দেখা যায় জেলেরা বেশ আক্রমণাত্মক। সেখানে জেলেদের সংঘবদ্ধ দলকে ঘেরাও করে আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিতেও দেখা গেছে।

একটি জেলে নৌকা ইট-পাটকেল ছুড়ে আক্রমণ শুরু করলে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলেও হামলার মুখে নিরাপদে সরে আসতে বাধ্য হয় বিবিসির টিম। কারণ নৌকা থেকেই অনবরত ঢিল ছুড়ে স্পিডবোট তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:
৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের ইলিশ রক্ষা অভিযান শুরু
২২ দিন ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ, নদী-সমুদ্রে কঠোর নজরদারিতে কোস্টগার্ড
৪ বছরের ব্যবধানে ইলিশ উৎপাদন কমেছে ৯ শতাংশ

এবার নদীতে মাছ ধরতে বাধা দিতে গেলে জেলেরা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি আক্রমণাত্মক এবং ক্রমাগত হামলা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।

নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও সংঘবদ্ধ হামলা

অভিযানের ১১ দিনে অন্তত পাঁচদিন জেলেদের ধাওয়ার মুখে পড়েছেন বলে জানান ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসার মেহেদী হাসান ভূঁইয়া।

তিনি জানান, শ্রীপুর এলাকায় নদীতে অবৈধ মাছ শিকারিদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিয়ে জাল তোলার সময় ৩০-৪০টি বোট একত্র হয়ে তাদের আক্রমণ করতে আসে। এরপর নিরাপত্তার জন্য সরে আসতে বাধ্য হয় প্রশাসনের আভিযানিক দলটি।

ধরপাকড় চললেও বন্ধ নেই ইলিশ শিকার

প্রথম অভিযানেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ওরা আপনাকে ধরতে পারলে মেরে ফেলবে। আমি মাত্র ১১ দিনের অভিযানে পাঁচ দিন ধাওয়া খেয়েছি জাস্ট একটা এগজাম্পল দিলাম আপনাকে। ওদের নৌকাতে প্রচুর ইটের টুকরা থাকে, বাঁশ থাকে, হাতিয়ার থাকে। অনেক সময় দা থাকে, তারপর ট্যাঁটা থাকে। ওরা সবকিছু ব্যবহার করে।’

‘ওরা যখন ঢিল মারে, সবগুলো বোটে প্রবেশ করে। ঢিলের কারণে আমার বোটের তিনজন আহত হয়েছে। এর মধ্যে এনডিসির (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) মাথা ফেটে যায়।’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করা একজন কর্মকর্তা বলেন, জেলেদের যতটা সম্ভব থামিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন তারা।

‘তবে লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকলে অভিযান সফল করা সম্ভব নয়। বড় স্পিডবোট না থাকায় ভোলায় যথাযথ কার্যকর অভিযান সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ছোট বোট নিয়ে গেলে আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ এলাকায় আক্রমণ হয়েছে বেশ কয়েকবার, প্রশাসন বলছে তারা ছাড় দিচ্ছে না। প্রাণ রক্ষার জন্য গুলি করার আইন রয়েছে, কিন্তু এখনো সে পর্যায়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। ‘এটা আমার দ্বিতীয় অভিযান। এতটা অ্যাগ্রেসিভ জেলেদের কখনোই দেখিনি। এবার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। গতবার যেখানে কোনো ঝামেলা হয়নি, এবার আমরা সেখান থেকে ধাওয়া খেয়ে ফিরে আসছি,’ বলেন ভোলার সহকারী কমিশনার ভূমি এস এম মশিউর রহমান।

ধরপাকড় চললেও বন্ধ নেই ইলিশ শিকার

জেলেদের কাছে একটা ম্যাসেজ গেছে যে, প্রশাসনের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে জেলেরা দাঁড়াতে পারলে প্রশাসন চলে যেতে বাধ্য হয়। এই ম্যাসেজটা যখনই যায় তখনই আসলে কন্ট্রোল করা কঠিন, জানান তিনি।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ জানান, এবার শুরু থেকেই আক্রমণের শিকার হচ্ছে প্রশাসনের অভিযানের দল।

‘তারা উল্টো আমাদের পাকড়াও করতে চায়-এবার এই প্রবণতাটা আমরা প্রথমদিক থেকে লক্ষ্য করছি। বরিশালে বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। হিজলায় বড় ধরনের হামলা হয়েছে। দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট আহত হয়েছেন এবং মৎস্য বিভাগের একজন ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর আহত হয়েছেন। বরিশালে একটা হামলায় একটা স্পিডবোট ডুবে গেছে এবং আনসারের একটি অস্ত্র খোয়া গেছে।’

মৎস্যজীবীদের মধ্যে প্রতি বছরই আক্রমণাত্মক একটা মনোভাব থাকলেও এবার সেটা বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণত দশ-বারোদিন পর থেকে হামলার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু এবার প্রথম দিন থেকেই আমরা হামলার ঘটনা দেখছি।’

জেলেরা কী বলছেন?

মৎস্য অধিদফতরের হিসাবে, বাংলাদেশে ৩৮টি জেলার নদনদীতে সাত লাখ ৪৩ হাজার জেলে ইলিশ শিকারের সঙ্গে জড়িত। এসব জেলের মধ্য ছয় লাখ ২০ হাজার জেলে এ বছর ভিজিএফ কার্ডের আওতায় সরকারি সহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ পেয়েছেন।

অধিদপ্তরের হিসাবে, এক লাখ ২০ হাজার জেলে সরকারি সহায়তার বাইরে রয়েছেন।

আরও পড়ুন:
মা ইলিশ রক্ষায় দেশব্যাপী অভিযান
ট্রাকবোঝাই বরফ এনে ইলিশ ধরার প্রস্তুতি, অভিযানে জব্দ
মা ইলিশ রক্ষায় আকাশে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার টহল

কীর্তনখোলা নদীতে জাল ফেলে লুকিয়ে থাকা একজন জেলে পলাশ হাওলাদার বলেন, বাধ্য হয়েই তারা নদীতে মাছ ধরছেন। কোনো সরকারি সহায়তা পাননি বলেও দাবি করেন তিনি।

‘আমরা যে জাল কিনছি কিস্তির মাধ্যমে, কিস্তির টাকা তো আমাদের দেতে হবে। কীভাবে দেব আমরা? কারণ আমাদের সবকিছু্র এইটার (মাছধরার) উপরে। কয়দিন আগে ২৫ কেজি চাউল দেছে, কিন্তু আমিতো পাই নাই। আর তারা যে পরিমাণ দেয় এতে তো জেলেদের হয় না।’

ধরপাকড় চললেও বন্ধ নেই ইলিশ শিকার

জেলেরা নদীতে নিষেধাজ্ঞা মানবে কী করলে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে জেলেদের নদীতে নামার প্রয়োজন না হয়।

‘জাল বাওয়া বন্ধ রেখে তারা চলতে পারে খাইতে পারে এমন একটা ব্যবস্থা সরকার যেন করে দেয় জেলেদেরকে। তাইলে অবশ্যই জেলেরা কখনো নামবে না নদীতে।’

বরিশালের ভাসানচর এলাকায় গিয়ে ৬০টির মতো নৌকায় জেলেদের পরিবারকে তীরে বসে থাকতে দেখা যায়। এসব জেলে অভিযোগ করেন, নৌকায় থাকা তাদের অধিকাংশ পরিবারের সরকারি নিবন্ধন নেই। অথচ জন্ম থেকেই এই পরিবারগুলো ইলিশসহ মাছ ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। তাদের মধ্যে সিংহভাগই সরকারি সহায়তা এবং নিবন্ধনের বাইরে।

এই জেলেদের একজন শাহাবুদ্দিন সর্দার বলেন, অতীতে তারা সরকারি সহায়তা পেতেন, কিন্তু এখন পান না।

‘গত ১৭ বছর পাই না। আগে সবারই কার্ড ছিল। বলে তোমাদের কার্ড বাদ হইয়া গেছে। আমরা যদি মাছ না ধরতে পারি তাইলে আমাগো না খাইয়া থাহা লাগবে। যেডা সত্য কথা।’

ইলিশ কীভাবে বাড়বে

ভোলার একজন জেলে ইব্রাহিম খলিল বলেন, সরকারের ২৫ কেজি চাল তিনি পেয়েছেন। তার দৃষ্টিতে নিষেধাজ্ঞা সব জায়গায় মানা হচ্ছে না।

ভোলায় যতটা কড়াকড়ি মেঘনা চাঁদপুর অংশে সেরকম নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার অভিজ্ঞতা হলো ইলিশের উৎপাদন কমছে, কারণ অবৈধ মাছ শিকার থেমে নেই। অবৈধ জালের কারেন্ট জাল হিসেবে পরিচিত যেটি সেটিও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে।

‘সব জায়গায় তো অভিযান পালন করতে হইবো। এছাড়া তো মাছ বাড়ার সুযোগ নাই। আর এই কারেন্ট জালের ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে হবে। যে ঘন জাল। জাল ছোড দেইক্কাইতো মাছ ছোড থাকতেই ধরা খায়। এইডা ছাড়া উপায় নাই।’, যোগ করেন তিনি।

অবৈধ কারেন্ট জাল উৎপাদন বন্ধ না হলে ইলিশ উৎপাদনে সুফল মিলবে না বলেই মত দেন ভোলার দুজন জেলে। জেলেদের বক্তব্য হলো সেই সঙ্গে জাটকা নিধন বন্ধ করা জরুরি, কারণ ইলিশ বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

‘এই অভিযানে লাভ হইব না। ফ্যাক্টরিতে যদি কারেন্ট জালের উৎপাদন বন্ধ হয় তাইলে সে না লাভ হইবো। এয়ানতন সরকারি লোক জাল পুড়বো আর আমরা ঋণ করুম, সমিতি করুম যেমনে পারুম জাল হালামু। ছোড মাছতো ধরুমই। বড় হওয়ার তো সুযোগ নাই।’

ধরপাকড় চললেও বন্ধ নেই ইলিশ শিকার

আরেকজন জেলে আব্দুর রহিমও বলছিলেন যে জাটকা নিধন বন্ধ করলে উৎপাদন বাড়বে।

‘সুতার জালে মাছ ধরতে হবে। শীতে একটা মাছ ধরা হয়। এই ২২ দিনের অভিযানডা দিছে ডিম ছাড়ার জইন্যে। এইডার পরে দিয়ে পৌষ অগ্রান মাসের দিকে একটা মাছ হয় পাঁচ-ছয় ইঞ্চি সাইজের। ওই মাছটা যদি রক্ষা করতে পারে তাইলে উৎপাদন। মাছ উৎপাদনের মেইন মেরুদণ্ড হইলো ওইটা।’

ইলিশ উৎপাদন গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল পাঁচ লাখ ৭১ হাজার টন। ২৩-২৪ অর্থবছরে সেটি কমেছে। ওই বছর উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ ২৯ হাজার টন। প্রাথমিক হিসেবে মাছ উৎপাদন গত বছরেও আরও কমার ইঙ্গিত দিচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তর।

ভোলা মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ১০ ইঞ্চির নিচে যেটা ইলিশ সেটাই জাটকা। জাটকা নিধনকে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

সরকার ছয়টা ইলিশের অভয়ারণ্য করেছে যার মধ্যে ভোলার তেতুলিয়া নদী অন্যতম। এসব অভয়াশ্রমে জাটকা ধরা বিক্রয় পরিবহন নিষিদ্ধ। ১ নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত জাটকা নিধন অভিযান চলে।

তিনি বলেন, ‘জেলেরা আমাদেরকে বলে যেখানে আপনাদের ফ্যাক্টরি সেখানে আপনারা ব্যবস্থা নেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি বিশেষ করে মুন্সীগঞ্জ এলাকায় কারেন্ট জালটা বেশি ব্যবহার হয়। আমরা সরকারের কাছে বরাবরই আবেদন করি যে এই ফ্যাক্টরিগুলো যদি বন্ধ করা যায় তাহলে কিন্তু জালের ব্যবহারটা কমবে।’

নিয়মিত কারেন্ট জাল ধরার পরও সমাধান হচ্ছে না কারণ, ‘এত পরিমাণ প্রোডাকশন হচ্ছে যে এইটা শেষ হচ্ছে না। এই জাল জেলেদের কাছে খুবই সহজলভ্য, দামও কম’, বলেন ওই কর্মকর্তা।

ভারতের সঙ্গে সমন্বয় কতটা

বাংলাদেশে নদনদী ও সাগরে ২২দিনের মা ইলিশ রক্ষার অভিযান চললেও ভারতের সঙ্গে এই অভিযান সমন্বিতভাবে হচ্ছে না। উপকূলীয় এলাকায় বাংলাদেশ যখন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছে ভারতীয় জেলেদের জন্য নিষেধাজ্ঞা নেই।

ধরপাকড় চললেও বন্ধ নেই ইলিশ শিকার

মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের সঙ্গে এপ্রিল মাসে সাগরে ৫৮ দিনের যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় সেটি সমন্বিতভাবে করা হয়েছে। মা ইলিশ রক্ষায় ভারতের সঙ্গে সমন্বয় হয় না। ভারত মা ইলিশ রক্ষায় বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কোনো মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয় না।

আরও পড়ুন:
মা ইলিশ সংরক্ষণে সমুদ্র ও নদীতে নৌবাহিনীর কড়া নজরদারি
মা ইলিশ রক্ষায় দেশব্যাপী অভিযান
শেষ সময়েও ইলিশের দামে হতাশ ক্রেতারা

বাংলাদেশের জেলেদের অভিযোগ, ভারত থেকে অনেকে এসে মাছ শিকার করে। অতীতে বিভিন্ন সময় ভারতীয় জেলেদের অনুপ্রবেশ এবং জেলেও নৌকা আটকের নজির রয়েছে।

তবে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড দাবি করছে, এবছর এখন পর্যন্ত কোনো ভারতীয় মাছ ধরার নৌকার অনুপ্রবেশ ঘটেনি।

কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের স্টাফ অফিসার অপারেশন লেফটেন্যান্ট মো. মুত্তাকিন সিদ্দিকী বলেন, নৌবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে তারা যেকোনো অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তৎপর রয়েছেন।

‘দেশের জলসীমায় যেকোনো ধরনের বিদেশি ফিশিং ট্রলার বা বোট মৎস আহরণ করছে এ ধরনের কোনো তথ্য আপাতত পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এবং নৌবাহিনী যৌথ অভিযানের মাধ্যমে এবং গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে আমরা এটা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি।’

বাংলাদেশে ইলিশ রক্ষায় বছরে তিনটি অভিযান হয়, কিন্তু গত কয়েক বছর ক্রমাগত ইলিশের উৎপাদন কমছে।

ধরপাকড় চললেও বন্ধ নেই ইলিশ শিকার

জেলেদের বক্তব্য হলো প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশের পাশাপাশি জাটকা মাছও রক্ষা করতে হবে। তাদের মতে, নিষেধাজ্ঞা কঠোর বাস্তবায়ন এবং জাটকা নিধন বন্ধে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের উৎপাদন, বিপনন বন্ধ না করতে পারলে বাংলাদেশে ইলিশ বাড়ানো অসম্ভব।

চলতি অভিযানের প্রথম ১০দিনে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে চার হাজার ২৫৪টি অভিযান ও ৯৭৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয় এবং ৫৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ করা হয়। ১০৭৬টি মামলায় ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৮৬৪টি জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া অবৈধ মাছ শিকারে ব্যবহৃত নৌকা জালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিলামে ২৪ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসএনআর/এএসএম