‘ছুটির পর আইসো একসঙ্গে দোল খাবো বলা ফুলগুলো হারিয়ে গেছে’
কলেজে এলেই ছোট ভাই-বোনদের মুখগুলো ভেসে ওঠে ফাইরুজের/ ছবি: জাগো নিউজ
যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের পর প্রায় দুই সপ্তাহ পর খুলেছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এদিন নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছিল। সকালে দোয়া মাহফিলে অংশ নেন তারা। এরপর কিছু সময় ক্লাসে বসেন। শিক্ষকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তারা। ক্লাস থেকে বেরিয়ে ক্যাম্পাসে কিছুক্ষণ ঘুরে-ফিরে বাসায় ফিরেছেন।
দোয়া মাহফিল, ক্লাসে যাওয়া এবং ঘোরাঘুরির ফাঁকে সবাই থমকে যান বিমানবিধ্বস্ত হওয়া হায়দার আলী ভবনের সামনে। সেখানে এলেই যেন ২১ জুলাইয়ের ভয়াল সেই স্মৃতি তাড়া করে ফিরছে তাদের। অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছেন। অনেকে আবার ভবনের সামনের রাস্তায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে দেখছেন পোড়া ভবনটি।

তেমনি একজন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাইরুজ ইসলাম। দুপুর ২টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বেরোনোর আগে আবারও থমকে দাঁড়ান বিধ্বস্ত হায়দার আলী ভবনের সামনে। সেখানে কথা হয় ফাইরুজের সঙ্গে। তার ভাষ্য, ‘সেদিনের কথা মনে করতে চাই না, খুব খারাপ লাগে। অনেক বর্ণনা দিই, অনেক কিছু আমরা বলি...কিন্তু কতটা ভয়াবহ ঘটনা, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’
আরও পড়ুন
- ১২ দিন পর খুললো মাইলস্টোন, নেই শিক্ষার্থীদের হৈ-হুল্লোড়
- অনেক অভিভাবক আগুনে ঝাঁপিয়ে বাচ্চা উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন
- মাইলস্টোন দুর্ঘটনার পর অনেক বাচ্চা অস্বাভাবিক আচরণ করছে
ফাইরুজ বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বেশি যেটা খারাপ লাগে; ২১ জুলাই সকালে আমি যখন কলেজে এসেছিলাম, এখানে (হায়দার আলী ভবনের সামনে) আমার ছোট ভাই-বোনেরা খেলছিল। ওরা দোলনায় দোল খাচ্ছিল। আমাকে বলেছিল, আপু ছুটির সময় আইসো, একসঙ্গে দোল খাবো।’

‘কিন্তু আজকে ওদের কেউ নেই। ছোট ভাই-বোনগুলোর অনেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। অনেকে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। ফুলগুলো সব ফোটার আগেই ঝরে গেছে।’
ফাইরুজ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এ ক্যাম্পাস ওদের কিচিরমিচিরে প্রাণবন্ত ছিল। কিন্তু আজ এ ক্যাম্পাস প্রাণ হারিয়ে ফেলেছে। আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এদিক দিয়ে গেলেই বুকটা কেমন হাহাকার করছে।’
পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে একাদশে পড়ুয়া এ ছাত্রী বলেন, ‘কিন্তু আমাদের সবাইকে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে আবার ফিরে যেতেই হবে। আমাদের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, উপদেষ্টাসহ শিক্ষকরা সবসময় আমাদের খোঁজ-খবর রেখেছেন। মানসিকভাবে সমর্থন দিয়েছেন। আশা করছি, আমরা ধীরে ধীরে ট্রমা কাটিয়ে স্বাভাবিক পড়ালেখায় ফিরতে পারবো।’

নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিলেও ফাইরুজের কণ্ঠে আবারও আকুতি। তিনি বলেন, ‘জন্ম নিয়েছি আমরা, মৃত্যুও হবে। আমরা কেউ বেঁচে থাকবো না। এটাই সত্য ও চিরন্তন। কিন্তু ওদের মৃত্যুটা যে এত ছোট বয়সে হলো, এভাবে দুর্ঘটনায়...মর্মান্তিকভাবে হলো সেটাই সারাটা জীবন মনে দাগ কেটে থাকবে।’
এএএইচ/ইএ
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ প্রাথমিক শিক্ষকদের শাটডাউন স্থগিত, রোববার থেকে পরীক্ষা
- ২ আন্দোলন করা অসংখ্য প্রাথমিক শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় বদলি
- ৩ পরীক্ষা না নেওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষকের মাথা ফাটালেন অভিভাবকরা
- ৪ অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষক নিয়োগে নতুন শর্ত, তৃতীয় বিভাগ থাকলেই অযোগ্য
- ৫ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার ফেয়ার, অংশ নিলো ৬০ প্রতিষ্ঠান