পাঠ ছেড়ে মাঠে শিক্ষকরা, ‘নির্লিপ্ত’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
সরকার দাবি-দাওয়া সুরাহা না করায় বারবার আন্দোলনে নামতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা/ছবি: মাহবুব আলম
• এমপিও শিক্ষকদের ডাকে ৩০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অচল
• সরকারি কলেজেও শিক্ষকদের কর্মবিরতির ডাক, ক্লাস বন্ধ
• ১৭ অক্টোবর থেকে আমরণ অনশনে প্রাথমিকের শিক্ষকরা
• শিক্ষকদের কোমর সোজা করতে বাধা ‘স্বল্প বেতন-ভাতা’!
বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক। ঢাকার রাজপথে দিন-রাত কাটছে তাদের। শিক্ষা ক্যাডারেও দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। সব সরকারি কলেজে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন তারাও। আর দেশের সাড়ে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ১১তম গ্রেডের দাবিতে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে ঢাকায় আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন।
বেতন-ভাতা ও মান-মর্যাদা বাড়ানোর দাবিতে ক্লাস ছেড়ে এখন পুরোদমে রাজপথে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজের শিক্ষকরা। এতে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। অথচ আগামী মাসেই শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা। এমন সময়ে ক্লাস না হওয়ায় সিলেবাসের পাঠ শেষ করতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া সুরাহা না করায় বারবার আন্দোলনে নামতে হচ্ছে তাদের। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা সিলেবাস শেষ না করেই পরবর্তী ক্লাসে উঠে যাচ্ছে, যা শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে অশনিসংকেত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারকে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তারা শিক্ষকদের আন্দোলন ও অসন্তোষ নিয়ে কোনো কথা বলছেন না। দেখা যাচ্ছে না দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপও। ফলে পরিস্থিতি ক্রমে আরও জটিল হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাড়িভাড়া বাড়ার আশায় ঘরছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা
দেশের ৩০ হাজারের বেশি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক রয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ। আর কর্মচারী দেড় লাখেরও বেশি। সবমিলিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। বিরাট সংখ্যক এ শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসে মাত্র এক হাজার টাকা বাড়িভাড়া পান। আর চিকিৎসা ভাতা পান ৫০০ টাকা।
সরকার ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে বহুবার বৈঠকে বসেছেন। তারা প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেন না। এবার আমরা দাবি আদায় না করে ফিরতে চাই না।- মোহাম্মদ শামছুদ্দীন
বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা (বোনাস) বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। বারবার তাদের ডেকে প্রতিশ্রুতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে তা পূরণ করা হয় না।
সবশেষ গত আগস্টে শিক্ষকরা সরকারি চাকরিজীবীদের মতো শতাংশ হারে বাড়িভাড়ার দাবি তোলেন। তাদের দাবি—মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা দিতে হবে। এ দাবি উপেক্ষা করে গত ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসে মাত্র ৫০০ টাকা বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতেই মূলত ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষকরা।
আরও পড়ুন
তীব্র রোদ উপেক্ষা করে শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অবস্থান
বাড়িভাড়ার দাবিতে ঘরছাড়া শিক্ষকরা, রাত কাটছে খোলা আকাশের নিচে
ক্লাস বর্জন করে প্রতিবাদ জানাবেন সরকারি কলেজের শিক্ষকরা
শিক্ষকদের ‘লং মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি ঘোষণা, চলবে কর্মবিরতিও
জানা যায়, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী—রোববার (১২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সারাদেশ থেকে আসা কয়েক হাজার শিক্ষক অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এদিন দুপুরে তাদের ডাক পড়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। সেখানে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়ায় শিক্ষকরা ফিরে এসে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা দেন।

এরমধ্যেই প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। রাস্তায় ফেলে শিক্ষকদের লাঠিপেটা করা হয়। গুরুতর আহত হন তিনজন। আটক হন ছয়জন। এ ঘটনায় আরও ফুঁসে ওঠেন শিক্ষকরা। সোমবার (১৩ অক্টোবর) থেকে সারাদেশের সব বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেন। পাশাপাশি শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান তারা।
বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর দাবিতে চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণপ্রত্যাশী জোট। এ জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী জাগো নিউজকে বলেন, ‘টানা দুদিন শিক্ষকরা ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি করছেন। শিক্ষা উপদেষ্টা, সচিব বা সরকারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো খোঁজখবর নেননি। তাদের শিক্ষকদের এ সীমাহীন দুর্ভোগ-কষ্টে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বারবার আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এবার আর সেই সুযোগ দেওয়া হবে না। আগামীকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে আমরা ‘মার্চ টু সচিবালয়’ কর্মসূচি করবো। তার আগেই সরকারকে শিক্ষকদের দাবি মেনে ২০ শতাংশ বাড়িভাড়ার প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষকরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’
শিক্ষকদের যেভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সাত কলেজের শিক্ষকদের যে দাবি, তা বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষকদের দাবি উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত (অধ্যাদেশ জারি) নেওয়া হলে, তা কিন্তু হিতে-বিপরীত হতে পারে।- অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল
বিষয়টি নিয়ে জানতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহেনা পারভীনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

পরে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা খালিদ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সহানুভূতিশীল। তিনি তার দায়িত্বের জায়গা থেকে যেটুকু করার, সেটা করেছেন। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সেখানে ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া দিতে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। এরপর বাকি কাজটা অর্থ মন্ত্রণালয়ের।’
শিক্ষা ক্যাডারদের কর্মবিরতি, সরকারি কলেজে ক্লাস বন্ধ
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ভেঙে দুটি পৃথক অধিদপ্তর করার উদ্যোগ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষা ক্যাডাররা। তাতে নতুন উত্তেজনা ছড়িয়েছে সরকারি সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ ও কাঠামো নিয়ে। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা চান সাত কলেজ পৃথক রেখে একটি কাঠামোর অধীনে পরিচালনা করা হোক। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি।

সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ জারির চেষ্টার প্রতিবাদে সোমবার ঢাকা কলেজে শিক্ষকরা কর্মসূচি করার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করে অধ্যাদেশ জারির দাবিতে শিক্ষকরা শিক্ষা ভবন অভিমুখে পদযাত্রা করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার জেরে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে দেশের সব সরকারি কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন শিক্ষকরা। এতে সরকারি কলেজগুলোতেও ক্লাস বন্ধ থাকবে। আর শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি করবেন।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষকদের আজকে যেভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি সাত কলেজের শিক্ষকদের যে দাবি, তা বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষকদের দাবি উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত (অধ্যাদেশ জারি) নেওয়া হলে, তা কিন্তু হিতে-বিপরীত হতে পারে।’
প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ নিয়ে কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ জাগো নিউজক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সাত কলেজ নিয়ে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রস্তাবনা অনুমোদন করেছিল সরকার। আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়টি কীভাবে পরিচালনা করা যায়, তা নিয়ে সরকারকে কিছু পরামর্শ দিয়েছি। এখন সিদ্ধান্ত সরকারের।’
১৭ অক্টোবর থেকে আমরণ অনশনে প্রাথমিক শিক্ষকরা
দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৫ হাজারের বেশি। এসব বিদ্যালয়ে পৌনে ৪ লাখেরও বেশি শিক্ষক কর্মরত। তার মধ্যে সাড়ে তিন লাখই সহকারী শিক্ষক। তারা ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডের দাবিতে কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
আর্থিক দুর্দশায় মানুষ আত্মহনন পর্যন্ত করে ফেলে। তাহলে শিক্ষকরা এ অর্থনৈতিক দুর্দশা নিয়ে কীভাবে ফার্স্ট ক্লাস নাগরিক তৈরি করবে? এ নিয়ে কোনো সরকারের মাথাব্যথা নেই। টাকা নেই; টাকা নেই বলে হাহাকার। অথচ কত কাজে কত টাকা বাজেট, তার ইয়ত্তা নেই।- অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
এর আগে টানা প্রায় এক মাস কর্মবিরতি করেছেন তারা। ঢাকায় একাধিক মহাসমাবেশ এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করলেও দাবি পূরণ হয়নি। সবশেষ গত ১৮ জুলাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সহকারী শিক্ষকদের মহাসমাবেশ থেকে আলটিমেটাম দেওয়া হয়। তবে বেঁধে দেওয়া সেই সময়েও প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার।

বাধ্য হয়ে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে ঢাকায় আমরণ অনশন কর্মসূচি করতে যাচ্ছেন তারা। প্রাথমিক শিক্ষকদের ছয়টি পৃথক সংগঠনের মোর্চা ‘সহকরী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ এ অনশন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে দেশের ৬৪ জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অংশ নেবেন।
আরও পড়ুন
সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আপাতত স্থগিত
আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী পুলিশদের ক্ষমা চাইতে হবে
ভাঙলো মাউশি, হচ্ছে পৃথক দুই অধিদপ্তর
শহীদ মিনারে একপক্ষ, পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ আরেক পক্ষ
ঐক্য পরিষদের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পূর্বঘোষণা অনুযায়ী- আমরা ১৭ অক্টোবর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি করবো। এতে সারাদেশ থেকে শিক্ষকরা অংশ নেবেন।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে বহুবার বৈঠকে বসেছেন। তারা প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেন না। এবার আমরা দাবি আদায় না করে ফিরতে চাই না।’
‘৫৪ বছরেও শিক্ষকদের কোমর সোজা করতে দেওয়া হয়নি’
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও শিক্ষকদের কোমর সোজা করে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘যে জাতির শিক্ষকরা কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারে না; আর্থিকভাবে ভঙ্গুর; সেই জাতি কীভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াবে? মাত্র সাড়ে ১২ হাজার টাকা মাইনে (বেতন) দিয়ে এই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কী কেনা যায়? কিছুই না; না বাজার করা যায়, না সন্তানের জামা-কাপড় কেনা যায়।’

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আর্থিক দুর্দশায় মানুষ আত্মহনন পর্যন্ত করে ফেলে। তাহলে শিক্ষকরা এ অর্থনৈতিক দুর্দশা নিয়ে কীভাবে ফার্স্ট ক্লাস নাগরিক তৈরি করবে? এ নিয়ে কোনো সরকারের মাথাব্যথা নেই। টাকা নেই; টাকা নেই বলে হাহাকার। অথচ কত কাজে কত টাকা বাজেট, তার ইয়ত্তা নেই।’
দেশ বাঁচাতে; শিক্ষা বাঁচাতে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী প্রধান রাশেদা কে চৌধূরী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন নেই বলেই তো শিক্ষার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। তারা ক্লাসে পড়ানোর চেয়ে প্রাইভেট-কোচিংয়ে মনোযোগ দিচ্ছেন। কারণ, তাদের তো দুটো পয়সা আয় করে টিকে থাকতে হবে। আমরা বহু বছর ধরে শিক্ষকদের এ দৈন্যদশা নিয়ে কথা বলছি, সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে আসছি, কোনো কাজ হয় না।’

শিক্ষকদের বেতন নেই বলেই তো শিক্ষার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। তারা ক্লাসে পড়ানোর চেয়ে প্রাইভেট-কোচিংয়ে মনোযোগ দিচ্ছেন। কারণ, তাদের তো দুটো পয়সা আয় করে টিকে থাকতে হবে।- রাশেদা কে চৌধূরী
সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। এমন সময়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি, রাজপথে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কতটা ক্ষতি হবে—প্রশ্নে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘সারা বছরই তো আন্দোলন লেগে থাকে। তার ওপর এবার বই পেয়েছে এপ্রিল-মে মাসে। তাহলে ক্লাস কয়টা দিন হয়েছে? নিশ্চয়ই খুব কম।’
‘পরীক্ষার আগ দিয়ে তড়িঘড়ি করে হয়তো বই শেষ করানোর চেষ্টা করতেন শিক্ষকরা। কিন্তু এখন তারা আন্দোলনে। ফলে না পড়েই পরের ক্লাসে উঠে যাবে কেউ কেউ। আবার অনেকে ফেল করে ড্রপ আউট হবে; ঝরে যাবে। এটা ঠেকানোর তো কোনো উদ্যোগ দেখি না’- যোগ করেন তিনি।
এএএইচ/এমকেআর/এমএস
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ প্রাথমিক শিক্ষকদের শাটডাউন স্থগিত, রোববার থেকে পরীক্ষা
- ২ আন্দোলন করা অসংখ্য প্রাথমিক শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় বদলি
- ৩ পরীক্ষা না নেওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষকের মাথা ফাটালেন অভিভাবকরা
- ৪ অধ্যক্ষ-প্রধান শিক্ষক নিয়োগে নতুন শর্ত, তৃতীয় বিভাগ থাকলেই অযোগ্য
- ৫ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার ফেয়ার, অংশ নিলো ৬০ প্রতিষ্ঠান