বদলি-শোকজ প্রত্যাহারে ডিজিকে অনুরোধ প্রাথমিক শিক্ষকদের
ডিজির সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক নেতারা/ছবি: সংগৃহীত
বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। অনেককে ভিন্ন জেলায় ‘প্রশাসনিক বদলি’ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে আতঙ্কিত প্রাথমিক শিক্ষকরা।
শাস্তিমূলক বদলি ও শোকজ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছেন শিক্ষকরা। সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’র নেতারা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বদলি ও শোকজ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছেন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে সাক্ষাৎকালে এ অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডিজির সঙ্গে আমাদের শিক্ষক নেতাদের সাক্ষাৎ হয়েছে। আমরা বলেছি, শিক্ষকরা পরীক্ষায় ফিরেছেন। এখন পরীক্ষা চলছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলন চলাকালে যাদের বদলি ও শোকজ করা হয়েছে, তা অধিদপ্তর যেন প্রত্যাহার করে। এ বিষয়ে আমরা অনুরোধ করেছি। আমাদের দাবির বিষয়টি ডিজি বিবেচনা করবেন বলেছেন। আমরা আশাবাদী যে বদলি ও শোকজ প্রত্যাহার করা হবে।’
আতঙ্কিত প্রাথমিক শিক্ষকরা, বিপাকে নারীরা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলা বা থানাভিত্তিক। নিজ থানায়; অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকের নিজস্ব বাড়ির খুব কাছাকাছি বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়। এতে বাড়িতে থেকে শিক্ষকতা করার সুযোগ পান প্রাথমিকের শিক্ষকরা।
আন্দোলন চলাকালে হঠাৎ নিজ থেকে ভিন্ন জেলায়; কারও কারও এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগেও বদলি করা হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। বিশেষ করে নারী শিক্ষকরা এ নিয়ে বেশি আতঙ্কিত। এমন আতঙ্ক নিয়ে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ, খাতা মূল্যায়নে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ভিন্ন জেলায় বদলিতে সাধারণ শিক্ষকরা আতঙ্কিত। আরও অনেক শিক্ষককে বদলি করা হবে বলেও জেলা-উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক অফিস এবং অধিদপ্তর থেকে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অনেকে আতঙ্কগ্রস্ত।

তিনি আরও বলেন, ‘এমন আতঙ্ক নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া, খাতা মূল্যায়নসহ সার্বিক কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি খুব শিগগির যাতে এ বদলি প্রত্যাহার করা হয়। একই সঙ্গে নতুন করে যাতে ভিন্ন জেলায় বদলি না করা হয়, সেটা নিয়েও কাজ চলছে।’
তিন দফা দাবিতে গত ২৭ নভেম্বর থেকে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের ডাকে লাগাতর কর্মবিরতি শুরু করেন শিক্ষকরা। প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনে বার্ষিক পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটে। অনেক বিদ্যালয়ে নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু হয়নি। দাবি পূরণে আশ্বাস, চাকরিবিধি ও ফৌজদারি আইনে শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়েও শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরানো যায়নি। বাধ্য হয়ে গণহারে বদলি ও শোকজের পথে হাঁটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ১, ২, ৩ ডিসেম্বর দেশের অনেক জেলার সব বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের গণহারে শোকজ করা হয়। এরপর ৪ ডিসেম্বর আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া একজন প্রধান শিক্ষক, চারজন সহকারী শিক্ষকসহ মোট ৪৩ জন শিক্ষককে রীতি ভেঙে ভিন্ন জেলায় বদলি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এরপরই আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসে। ঘোষণা অনুযায়ী—রোববার সারাদেশে সব বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রায় এক কোটি। আর তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সহকারী শিক্ষক।
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে দশম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। তবে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তারা এ নিয়ে অসন্তুষ্ট। গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
এএএইচ/এমআইএইচএস