শিক্ষার্থী সংকট, নিজস্ব ভর্তি ব্যবস্থাপনায় ফিরতে চায় জবি
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার নানা অব্যবস্থাপনা ও প্রথম বর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী সংকটসহ বেশ কিছু বিষয় আমলে নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রশাসন গুচ্ছ পদ্ধতিতে না যাওয়ার কথা ভাবছে। গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হলে আগের মতো নিজস্ব ভর্তি ব্যবস্থাপনায় ফিরবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। নিজস্ব মান বজায় রাখতে গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার বিকল্প নেই বলে দাবি শিক্ষকদের।
বুধবার (২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল সভায় গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির বিপক্ষে মত দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ বিষয়ে আলোচনা হলেও গুচ্ছের বিষয়ে সামনের একাডেমিক কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক।
সভায় অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরুতে শিক্ষার্থীদের আর্থিক, যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ সার্বিক ভোগান্তি হ্রাসে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানায় আয়োজক কমিটি।
তবে বিভাগ পরিবর্তন ও ইউনিট শুরুতেই বাদ দেওয়া, পরীক্ষার ফি আচমকাই বাড়িয়ে দেওয়া, কর্মদিবসে পরীক্ষার তারিখ ফেলায় তীব্র যানজট, নিজের পছন্দের কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে না পারা, সর্বশেষ মানবিক ও বাণিজ্য অনুষদের পরীক্ষার ফলাফলে তীব্র অসঙ্গতিতে গুচ্ছ পদ্ধতি ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে হাজারো ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীর কাছে। গুচ্ছের সার্বিক অব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমলে নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গুচ্ছ ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এরপর গত ৭ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সপ্তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজ্ঞান (এ) ইউনিটে ২৩ হাজার ৯৫৫ জন, মানবিক (বি) ইউনিটে ৯ হাজার ৯৪০ জন ও বাণিজ্য (সি) ইউনিটে ৭ হাজার ৭৬২ জন ভর্তিচ্ছু আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়।
বিভিন্ন বিভাগের নির্ধারিত আসনে ভর্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ হয়। তবে সর্বশেষ ধাপ হিসেবে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমেও গুচ্ছ পদ্ধতির নানা অব্যবস্থাপনা ও অসংগতির প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মেধাতালিকা থেকে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় পালাক্রমে মোট ৭টি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। এতেও নির্ধারিত আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ফাঁকা আসন পূরণে ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি গণসাক্ষাতের আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রথম থেকে সপ্তম মেধাক্রমে বিষয় বরাদ্দ পেয়েও যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হননি তাদেরও সাক্ষাতকারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। গণ সাক্ষাতকারেও শিক্ষার্থীদের তেমন উপস্থিতি না মেলায় আরও একটি মেধাতালিকা প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত হয় ৮ মার্চ থেকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করার। ক্লাস শুরুর আগেই ফাঁকা আসন পূরণে মঙ্গলবার (১ মার্চ) আবারও গণসাক্ষাতকার আহ্বান করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বারবার মেধাতালিকা ও গণসাক্ষাতকার আহ্বান করেও আসন পূরণ না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র শিক্ষক বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতির অসঙ্গতির ফলেই এবার শিক্ষার্থী সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বারবার গণসাক্ষাতকার দেওয়ায় এখানে মেধার কোনো মূল্যায়ন হচ্ছে না। যারা নম্বর পেয়েছে তারাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরাই হবে একমাত্র সমাধান।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তির ব্যাপারে সভায় অনেক শিক্ষক এর পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। সামনের সভায় আলোচনার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রায়হান/এমআইএইচ/এমআরএম/জেআইএম