বই আলোচনা
আমি শুধু মানুষ হবো: ভালো মানুষ হওয়ার মন্ত্র

রকিবুল ইসলাম
ছড়াসাহিত্যের অনন্য পরিচিত এক নাম জগলুল হায়দার। তিনি একাধারে কবি, ছড়াকার, গীতিকবি ও প্রাবন্ধিক। শিশু-কিশোরদের জন্য তিনি লিখেছেন অসংখ্য বই। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য ছড়া, কবিতা, গল্প ও গান। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ছোটদের ছড়ার বই ‘আমি শুধু মানুষ হবো’। বইটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সংযোগ। বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২৫ সালের অমর একুশে বইমেলায়।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
ভালো মানুষ হতে গেলে বইপড়ার বিকল্প নেই। বই পড়েই একজন মানুষ ভালো মানুষ হওয়ার পথ খুঁজে পায়। ছন্দ, মাত্রা ও চমৎকার অন্ত্যমিল ব্যবহার করে ছড়াকার এখানে ভালো মানুষ হওয়ার ছড়াগুলো লিখেছেন। ‘মেয়েটার মনে খুব ইচ্ছে/ জানালার গ্রিল ধরে/ বৃষ্টিকে পাঠ করে/ মনে মনে ভিজছে/ মেয়েটার মনে খুব ইচ্ছে...’। ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় শখের অনেক কিছুই করা যায় না। মায়ের বারণ নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে তাই ভালো মানুষ হতে হয়। মাকে ভালোবেসে মায়ের নিষেধ মেনে তাই অনেক শখকেও বিদায় দিতে হয় হাসিমুখে।
ভালো মানুষ হতে হলে তোমাকে ফুল, পাখি, গাছপালা, নদী, পাহাড় সবকিছুকেই ভালোবাসতে শিখতে হবে। শিখতে হবে নিজের দেশকে ভালোবাসতে। নিজের দেশের পতাকাকে জানাতে হবে সম্মান ও শ্রদ্ধা। খোকা তাই আপুর পুরাতন সবুজ জামাটা কেটে মাঝখানে মায়ের লাল শাড়ির টুকরো বসিয়ে দিলো। হয়ে গেলো বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। তারপর—‘টাঙিয়ে দিলে ছাদের ওপর/ ছাব্বিশ মার্চ ভোরে/ আপু এবং মা দেখে সেই/ নিশান কেমন ওড়ে।’
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
সারাদিন পড়া, ইশকুল, কোচিং হোমওয়ার্ক করতে করতে ছোটদের মন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। খোকাখুকিরা তাই ছুটি চায়। এমন এক ছুটির অপেক্ষা চলতে থাকে বছরের পর বছর। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেই ছুটি আর আসে না। ছুটির কাছে তাই ছোট্ট খোকার চিরন্তন বায়না। ‘না ভেবো না লাল ঘুড়িটা আমায় নেবে সোজা/ তেপান্তরের দেশে/ বুক ভরে সব খুশি নেবো পাখির মতো ভেসে।/ পালক নেবো পাপড়ি নেবো দুইহাতে মুঠভরা/ ভাল্লাগে না সারাবেলা একঘেয়ে সব পড়া।’
ছড়াকবি জগলুল হায়দার ছড়ায় ছড়ায় এঁকেছেন বিচিত্র কল্পনার ছবি। শিশু-কিশোর মনে জাগিয়েছেন প্রেরণার সম্ভাবনা। নির্মল আনন্দ বিনোদনের পাশাপাশি ছোটদের মনে বুনে দিয়েছেন স্বদেশপ্রেমের বীজ। দেশকে ভালোবাসার অনুপম চিত্র এঁকেছেন এভাবে—‘এই যে নদী এই যে ঘাট/ নদীর পাড়েই সবুজ মাঠ/ মাঠের বুকে হাসি/ এটাই আমার দেশের ছবি/ সারা জনম এই ছবিটাই দেখতে ভালোবাসি।’ ছোটদের মনে দেশমাতৃকার ছবি আঁকা থাকলে তার মধ্যে মানবিক গুণগুলো বিকশিত হয়। ভালো কিছু করার জন্য তার মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। নিজেকে আলোকিত করে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করতে সে আনন্দ খুঁজে পায়।
বিজ্ঞাপন
শিশুরা স্বভাবতই কল্পনাপ্রবণ হয়ে থাকে। সে স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। কল্পনার রাজ্যে ভেসে বেড়াতে আনন্দ অনুভব করে। কখনো শঙ্খচিল, কখনো মেঘ, কখনো নীল আকাশের উদার জমিন। কিংবা কখনো ফুল-নদী-পাহাড়-অরণ্য অথবা ভরা সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। ‘একটা ছেলে ভাবতে ভাবতে/ নিজেই একটা আকাশ হলো/ সেই আকাশে নীল হলো/ দুইটা শঙ্খচিল হলো/ সেই ছেলেটা সুখ পেতে/ নিজেই নিজের বুক পেতে/ এমন হলো—/ তুমি বলো, এবার বলো/ কেমন হলো?’ কেমন হলো, তা কি তুমি বলতে পারবে? অবশ্যই পারবে। কারণ তুমিও তো এমন করেই ভাবো। কতদিন কত কিছু ভেবে ভেবে সময় পার হয় সোনামণিদের!
সকালে অ্যালার্ম ঘড়ির গান শুনে জেগে ওঠে খোকন। কিন্তু অ্যালার্ম ঘড়ির এমন ঘড় ঘড় গান খোকনের ভালো লাগে না। প্রতিদিন একই সুর। একই জ্বালাতন! খোকন ভাবে, ইস! অ্যালার্ম ঘড়ির বাজনাতে যদি পরি আসতো! তাহলে কতই না ভালো হতো! সারাদিন পরির সাথে খেলনায় মেতে থাকা যেত। উড়তে উড়তে মেঘের রাজ্যে যাওয়া যেত। কিন্তু পরি আর আসে না। তাই অনিচ্ছা থাকলেও মায়ের ডাকে ঠিকই সকাল সকাল উঠতে হয়। ‘ঘড়ি বেজে বন্ধ হলে/ মা ধরে দেয় টান তাই/ সাতটা বাজে সাতটা বাজে/ ইস!/ ছিঁড়লো বুঝি কানটাই।’
ডেইলি রুটিনের মতো ছকবাঁধা জীবনে আটকে থাকে ছোটদের কোমল মন। স্বপ্ন যখন ডানা মেলে উড়তে চায়; ঠিক তখনই কোনো এক অদৃশ্য দৈত্য এসে হানা দেয় কোমলমতি শিশুদের মনে। সব ভালো লাগা এক নিমিষে বাতাসে হারিয়ে যায়।
ছড়াকার জগলুল হায়দার ছোটদের জীবনে ঘটে যাওয়া এমন হাজারও প্রতিবন্ধকতা ফুটিয়ে তুলেছেন ছড়ায় ছড়ায়। ছোটরা পড়তে গেলে ভাববে এ তো আমারই কথা লেখা হয়েছে! খুব আগ্রহ নিয়েই পড়বে এমন মজার মজার ছড়া। ভালো লাগা ছড়াগুলো তাই শিশুমনে ভাবনার খোরাক জোগাবে নিঃসন্দেহে। ছোটদের পাশাপাশি বড়দেরও ভালো লাগবে শিশু-কিশোর উপযোগী ছড়ার বইটি।
বিজ্ঞাপন
বইয়ের নাম: আমি শুধু মানুষ হবো
ছড়াকার: জগলুল হায়দার
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: নিসা মাহ্জাবীন
প্রকাশনী: সংযোগ
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৫
মূল্য: ৩০০ টাকা।
এসইউ/জিকেএস
বিজ্ঞাপন