কেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে বললেন নিপুণ
সামন্ত লাল সেন (ইনসেটে) ও নিপুন আক্তার
রাজধানীর উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছেন বহু মানুষ। এরই মধ্যে আহতদের অনেককে নেওয়া হয়েছে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ দেশের মানুষ। এরই মধ্যে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানালেন অভিনেত্রী নিপুণ। কিন্তু কেন?
বিমান দুর্ঘটনায় সক্রিয় উদ্ধারকারী ও চিকিৎসকরা। তারকারা ফেসবুকে। উদ্ধারকর্ম, রক্তদান ও সচেতনামূলক পোস্ট দিচ্ছেন তারা। এরকম সময়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেনকে কাজে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন ঢালিউড অভিনেত্রী নিপুণ আক্তার। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, ‘প্লিজ ওনাকে বাচ্চাগুলোর জন্য হইলেও কাজে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন!’
মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে, ডাঃ সামন্ত লাল সেন বাংলাদেশে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি চিকিৎসার পথিকৃৎ ও একজন পুরোধা ব্যক্তি। তিনি ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা থেকে ‘ডিপ্লোমা ইন স্পেশালাইজড সার্জারি’ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে জার্মানি ও ইংল্যান্ড থেকেও সার্জারি বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন সামন্ত লাল। মাত্র পাঁচটি বেড নিয়ে শুরু করেন পোড়া রোগী ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ১৯৮৬ সালে অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বল্প পরিসরে শুরু করেন আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা।
২০০৩ সালে এই হাসপাতালে একটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বতন্ত্র বার্ন ইউনিট যাত্রা শুরু করে, যা পরে ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়। ডাঃ সামন্ত লাল সেন ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাকালীন প্রকল্প পরিচালক। এই বার্ন ইউনিট ২০১০ সালের নিমতলী ট্রাজেডি ও ২০১৪ সালের নির্বাচন-পূর্ববর্তী রাজনৈতিক কাণ্ডে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ধীরে ধীরে সারা দেশের পোড়া রোগীদের জন্যে আস্থা, ভরসা ও আশার অবিসংবাদিত নাম হয়ে ওঠেন ডাঃ সামন্ত লাল সেন। এরই ফলশ্রুতিতে সরকারি চাকুরি থেকে অবসরে গেলেও তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কের বিশেষ দায়িত্ব দেয় তৎকালীন সরকার।
সামন্ত লাল সেন ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। চিকিৎসাসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি তাকে ২০১৮ সালে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। বাংলাদেশ প্লাস্টিক সার্জন সোসাইটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের টেকনোক্রাট কোটায় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।
গত ১০ জানুয়ারি সিলেট হয়ে যুক্তরাজ্য যেতে চেয়ে বিমানবন্দরে আটক হয়েছিলেন অভিনেত্রী নিপুণ। পরে তাকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেয় পুলিশ। সে ঘটনার পর নিশ্চুপ ছিলেন এই অভিনেত্রী। দেশের বেশ কিছু ক্রান্তিকালেও চুপ ছিলেন অভিনেত্রী। অবশেষে উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার ঘটনায় সরব হলেন নিপুণ।
উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে করা একটি হত্যা মামলার অন্যতম আসামি করা হয় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেনকে। তবে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি।
এমএমএফ/আরএমডি