রঙিন এক বসন্তের উৎসবে
ছবি : মাহবুব আলম
বসন্তকে বিদায় দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ থেকেই দিন পঞ্জিকায় চৈত্রের দিন শুরু হয়েছে। তবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যিকারের বসন্ত নেমেছিল গতকালই। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা নেচে গেয়ে রঙিন আর প্রাণবন্ত করে তুলেছিল তাদের বসন্ত উৎসবের দিন।
সেই বর্ণিল আয়োজনে সুরের পসরা সাজিয়ে হাজির হয়েছিলেন বাপ্পা মজুমদার, কিরণ চন্দ্র রায় ও জনপ্রিয় গানের দল ‘জলের গান’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালচারাল সোসাইটির আয়োজনে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘বসন্ত উৎসব ১৪২২’। সময়ের হিসেবে পুরো একটা দিন ছিলো উৎসবের। কিন্তু দিনশেষে মনে হলো- এই যা! সময় ফুরিয়ে গেল! ফুরিয়ে গেল বসন্তের প্রাণোৎসব।
অনুষ্ঠানের শুরু হয় সকাল থেকেই শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে। এরপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব আলী যাকের। আরও ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মডারেটর সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী, বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা পেপার মিলসের ব্র্যান্ড হেড সলিম উল্লাহ সেলিম, সংগঠনের সভাপতি ওয়াসেক সাজ্জাদ ও সাধারণ সম্পাদক আহসান রনি। জানা গেল, এ উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের মোনালিসা ওমেন্স ক্লাব। 
ছিলো উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা, আলোচনা-বক্তব্য। তবে সবার অপেক্ষা ছিলো বিকেলের সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য। অবশেষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মূলমঞ্চে বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাবি শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মঞ্চে ছিলো ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, গম্ভীরা, গীতিনাট্য, নকশী কাঁথার মাঠের মঞ্চায়ন, মঞ্চ নাটক, পুঁথি পাঠ, জারী গান ও আবৃত্তিসহ লোকজ সংস্কৃতির বেশকিছু পরিবেশনা।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি মেলায় অাগত দর্শকের দৃষ্টি ও মনোযোগ কেড়েছে প্রাঙ্গণে সাজানো গ্রামীণ মেলা। এখানে ছিলো ফুড কর্ণার, চটপটি, ফুসকা, হাওয়াই মিঠাই, নানা ধরনের পিঠা, নাগরদোলা, বায়োস্কোপ, বানর খেলা, ফরচুন টেলার, ক্যারিকেচার ড্রয়িং, সাপের খেলা, মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র, মেয়েদের জন্য চুড়ি এবং মেহেদি কর্ণার।
দিন পেরিয়ে রাত নেমে ৭টা বাজে তখন। ‘রঙিলা রঙিলা রঙিলা রে/আমারে ছাড়িয়া বন্ধু কই রইলারে’- গান নিয়ে প্রথম শিল্পী হিসেবে মঞ্চে আসেন লোকগানের শ্রোতাপ্রিয় গায়ক কিরণ চন্দ্র রায়। শুরু হয় সুরের উৎসব। প্রচলিত ও অপ্রচলিত কয়েকটি লোকগানে দর্শক মাতিয়েছেন তিনি।
তারপরই শোনা গেল সেই নাম; যার অপেক্ষাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সময় গুনেছেন দিনভর। এলো, গাইল এবং বাজিমাত করে গেল ‘জলের গান’। জলের গানের পরিবেশনা শুরু হলো ‘এমন যদি হতো/আমি পাখির মতো/উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ...’ গানটি দিয়ে। পুরো গানে কণ্ঠ মেলালো সবাই। বাঙালি সংস্কৃতির বসন্তের উৎসবকে সবুজ করে তুলেছিলো জলের গানের মাটি ও মানুষের গানগুলো। দলটি পরিবেশন করেছিলো- ‘তুমি আমার পাশে বন্ধু হে’, ‘বকুল ফুল বকুল ফুল’ প্রভৃতি গানগুলো।
সময় তো আর বসে থাকে না। জলের গানের মুগ্ধতাই যখন কাটছে না তখন জানা গেল গান গাইতে প্রস্তুত গানের আরেক প্রিয় নাম বাপ্পা মজুমদার ও তার দল। ‘জলের গান’ বিদায় নিল আবার দেখা হবে, গান হবে বলে। মঞ্চে উঠে এলেন বাপ্পা। সারাদিনের ক্লান্তি তিনি মুছে দিলেন জনপ্রিয় ছয়টি গানে। তার পরিচিত গানগুলোর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়েছিলো মল চত্বরের সবাই। বাপ্পা একে একে গেয়ে শোনান ‘দিন বাড়ি যায়’, ‘গাড়ি চলে না’, ‘বাজি’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর’ ‘পরী’র মতো সুপারহিট গানগুলো।
বাপ্পার গানের পর ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথমবারের বসন্ত উৎসব। দিনভর হৈ চৈ আর গান-সুরে প্রাণ পূর্ণ করেই যেন বিদায় নিলেন সবাই। যেতে যেতে বললেন- ভালো থেকো বসন্ত, আবার দেখা হবে......
এলএ