ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

নকল চাবি তৈরি করে মাসে আয় ৬০ হাজার টাকা

মোহাম্মদ সোহেল রানা | প্রকাশিত: ০১:২৩ পিএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মোহাম্মদ সোহেল রানা

ওমর ফারুকের বয়স ৩৫ বছর। একযুগ ধরে ঢাকার খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকায় তালা-চাবি মেরামতের কাজ করছেন। প্যাড তালা মেরামতের মাধ্যমে এ পেশায় আসলেও কঠিন পরিশ্রম আর প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ধরনের মাইক্রো-মাইক্রোবাসের তালা-চাবি মেরামত করেন। শ্রমিক থেকে হয়েছেন মালিক। শুধু তাই নয় আরও দুইজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন এই তরুণ।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি ওমর ফারুক তার সফলতার গল্প ও কীভাবে এ পেশায় আসলেন তা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ সোহেল রানা-

বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পুরোনো সব ঐতিহ্য। বাড়ি-গাড়ি, অফিস-আদালত স্কুল-কলেজ দোকানপাটসহ সবকিছুই নিরাপদ রাখার অন্যতম মাধ্যম তালা। তালা নষ্ট হলে কিংবা চাবি হারিয়ে গেলে মানুষকে পড়তে হয় চরম বিড়ম্বনায়। প্রয়োজন পড়ে তালা মেরামত কিংবা নতুন চাবি তৈরির। তালা মেরামত আর নতুন চাবি বানানোর কাজ শিখেই সংসার চালাতেন এক শ্রেণির কারিগর। তবে প্রযুক্তির উন্নয়নে হারিয়ে যাচ্ছে এসবের কাজ। অনেকেই এ পেশাকে পরিরবর্তন করলেও ওমর ফারুক অন্যদের মতো হারিয়ে না গিয়ে প্রযুক্তির কল্যাণে নিজেকেও করেছেন পরিবর্তন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

ওমর ফারুকের সঙ্গে কথা হলে জাগো নিউজকে জানান, গ্রাম থেকে ১৯৯৮ সালে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকায় আসেন ওমর ফারুক। এরপরে দূর সম্পর্কের এক মামা সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে ২০০১ সালের দিকে সেই মামার তালা-চাবি মেরামতের দোকানে কাজে যুক্ত হন। কিশোর বয়সেই পড়াশোনার পাশাপাশি তালা-চাবি মেরামতের কাজ শিখতেন ওমর। এরপর কয়েক বছর কাজ শেখার পরে তিনি গ্রামে ফিরে যান। পরে ২০১২ সালের দিকে ঢাকায় ফিরে অন্যজনের দোকানে আবারও তালা-চাবি মেরামতের কাজেই যুক্ত হন। সেখানে কাজ শেখার অবস্থায় তিনি চিন্তা করেন নিজের একটা দোকান হলে অনেক ভালো হতো।

সেই চিন্তা থেকেই ২০১৪ সালের দিকে একটি দোকান দেন ওমর। যেখানে প্যাড তালা মেরামতের কাজ করতেন তিনি। তবে কয়েক বছর কাজের পর দেখেন উন্নত প্রযুক্তির ডিজিটালসহ বিভিন্ন ধরনের তালা বাজারে এসেছে। যা বেশ টেকসই। ফলে পুরোনো তালা-চাবি মেরামত করতে তেমন কেউ আর আসে না। এতে অনেকেই এ পেশা পরিবর্তন করেন। তবে এসব দেখে এই যুবক হতাশ হলেও ভেঙে না পড়ে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিছু করার চিন্তা করেন। এরপরে অনলাইনে বিদেশি কোর্সের মাধ্যমে ডিজিটাল মেশিন ও সফটওয়্যার ব্যবহার করে মাইক্রো-মাইক্রোবাসের তালা-চাবি মেরামত ও নকল চাবি তৈরির কাজ শিখেন। তবে এ কাজ শিখতে ওমরকে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রযুক্তিভিত্তিক কাজ শিখে বর্তমানে কেমন কাটছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওমর ফারুক বলেন, বর্তমানে নিজের দোকান ছাড়াও ঢাকার বাহিরে বিভিন্ন গাড়ির শো-রুম ও গ্যারেজে গিয়ে কাজ করি। এতে প্রতি মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা ইনকাম করছি। কাজ বেশি হলে আরও বেশি ইনকাম হয়। মা-বাবা, ভাইবোন ও স্ত্রী এবং দুই সন্তানসহ ১০ সদস্যের পরিবার। আল্লাহর রহমতে এই আয় দিয়ে তাদেরকে নিয়ে ভালোভাবেই চলতে পারছি।

অন্যদিকে, নতুন আরও একটি নতুন দোকান দিয়েছেন ওমর। যেখানে দুইজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। সেই দোকানে তারা প্যাড তালা-চাবি মেরামতের কাজ করেন। একই সঙ্গে তাদেরকেও প্রযুক্তিভিত্তিক কাজ শেখাচ্ছেন এই তরুণ।

প্রযুক্তিভিত্তিক কাজ নিয়ে ভবিষ্যতের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তির কল্যাণে সব তালা-চাবির ধরণ বদলেছে। ফিঙ্গার প্রিন্ট, কি-কার্ডস, কোড সংমিশ্রণ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সব তালা বাসাবাড়ি, শপিংমল এবং গাড়িতে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই হিসেবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই দিকে কাজের চাহিদা বেড়েই চলছে। তাই যতদিন পারি এই পেশায় থাকতে চাই। আর বেকার যুবকরাও চাইলেও প্রশিক্ষণ নিয়ে এই কাজে যুক্ত হতে পারে, তারা ভালো কিছু করবে বিশ্বাস করি।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যকর্মী

কেএসকে/এমএস

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন