বিশ্ব ক্ষুধা দিবস
খাবার হবে ভালোবাসার, অপচয় নয়

২৮ মে বিশ্ব ক্ষুধা দিবস। এই দিনটির তাৎপর্য শুধু ক্ষুধার্ত মানুষদের প্রতি সহমর্মিতায় সীমাবদ্ধ নয়; এটি আমাদের জীবনযাপনের প্রতিটি সিদ্ধান্তকে আরও মানবিক ও সচেতন করে তোলার সুযোগও এনে দেয়। বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮০ কোটি মানুষ প্রতিদিন পর্যাপ্ত খাবার পায় না, তখন প্রশ্ন উঠেই আসে আমরা নিজেরা কীভাবে খাবার ব্যবহার করছি?
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অথচ এদেশেই প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ খাবার নষ্ট হয়। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও জাতিসংঘের একাধিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার খাবার কেবল অপচয়ের কারণে ব্যবহৃত হচ্ছে না। শুধু বাসাবাড়ি নয়, হোটেল-রেস্তোরাঁ, সামাজিক অনুষ্ঠান, এমনকি উৎসবগুলোতেও এই অপচয় চোখে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
আমরা অনেকেই বাজারে গিয়ে পরিমাণের চেয়ে বেশি পণ্য কিনে ফেলি। ছাড়ের লোভ, পরিকল্পনাহীন তালিকা বা কেবল অনভ্যাস সব মিলিয়ে এমন জিনিস কিনে আনি যা সময়মতো রান্না বা সংরক্ষণ না করায় নষ্ট হয়ে যায়। পরিণামে যা হয়, তা একদিকে যেমন খাদ্যের অপচয়, অন্যদিকে তা আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণও।
খাবার অপচয় কমাতে হলে প্রথম পদক্ষেপটি হওয়া উচিত পরিকল্পিত বাজার। পরিবারের সদস্যসংখ্যা অনুযায়ী সপ্তাহ বা দিনের একটি বাজার তালিকা তৈরি করা অত্যন্ত কার্যকর। একইভাবে, রান্নার সময়ও পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। অনেক সময় অতিথি আসতে পারে ভেবে অতিরিক্ত রান্না করা হয়, যা পরে কেউ না খেলে নষ্ট হয়ে যায়। এটি সহজেই এড়ানো যায় যদি আমরা একটু হিসেব করে রান্না করি।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
দিনের শেষে যদি কিছু খাবার থেকে যায়, সেটিকে ‘অপর্যাপ্ত’ বা ‘পরিত্যাজ্য’ মনে না করে সংরক্ষণের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। ঠান্ডা করে ভালোভাবে ফ্রিজে রাখা, পরে ভিন্নভাবে পরিবেশন করা বা প্রয়োজন হলে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া, এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
বিয়ে, জন্মদিন, পিকনিক বা অফিস পার্টি প্রতিটি সামাজিক আয়োজনে আমরা বহুবার এমন দৃশ্য দেখি, যেখানে প্লেটভর্তি খাবার একবার খেয়ে; অর্ধেক ফেলে দেওয়া হয়। এসব অনুষ্ঠানে আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি অতিথিদের খাবারের পরিমাণ নিজে পরিবেশন না করে তাদের নিজ দায়িত্বে নেওয়ার সুযোগ দেয়, তবে অপচয় অনেকটাই কমে। সেইসঙ্গে খাবার ফেলার জন্য নির্দিষ্ট ‘ফুড ব্যাংক’ বা বেঁচে যাওয়া খাবার সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখলেও ভালো ফল আসতে পারে।
বিজ্ঞাপন
বর্তমান প্রজন্ম, বিশেষ করে তরুণ ও শহুরে জনগোষ্ঠী চাইলে খাবার অপচয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি, স্কুল-কলেজে ক্যাম্পেইন, এবং ঘরে ঘরে সচেতন অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে এই পরিবর্তন সম্ভব।
বিশ্ব ক্ষুধা দিবস যেন আমাদের বলতে চায়, প্রতিটি দানার মূল্য আছে। আমরা যদি নিজের প্লেটের খাবার শেষ পর্যন্ত খাই, বাজার করি পরিমিতভাবে, রান্না করি যত্ন নিয়ে এবং বেঁচে যাওয়া খাবারকে অপচয় না করে কাজে লাগাই, তবে আমরা শুধু নিজের জীবনকেই নয়, বিশ্বের হাজারো ক্ষুধার্ত মানুষের জীবনে পরোক্ষভাবে পরিবর্তন আনতে পারি। তাই এ বছরের বিশ্ব ক্ষুধা দিবসে হোক আমাদের নতুন প্রতিজ্ঞা খাবার হবে ভালোবাসার, অপচয় নয় কোনোভাবে।
তথ্যসূত্র: দ্য হাংগার প্রজেক্ট, এফএও , বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিল, ওয়েস্ট কনসার্ন বাংলাদেশ), ওয়ার্ল্ড ব্যাংক।
বিজ্ঞাপন
কেএসকে/জেআইএম
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন