ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

বিশ্বজুড়ে অক্টোপাস খাওয়ার সংস্কৃতি

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

সানজানা রহমান যুথী

তিনটি হৃদয়, নয়টি মাথা, আটটি বাহু-একটি মেরুদণ্ডহীন প্রাণী। প্রাণীটির শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কথা শুনলে যে কেউ এমনিতেই ভয় পেয়ে যাবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো প্রাণীটি আমাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় ও সুপরিচিত। বলছিলাম অক্টোপাসের কথা যাকে কমবেশি সবাই চেনেন। বর্তমানে সামুদ্রিক খাদ্য হিসেবেও বেশ পরিচিত একটি প্রাণী।

বিশ্বজুড়ে অক্টোপাসের বিভিন্ন রেসিপি বেশ জনপ্রিয়। একেক সংস্কৃতিতে একেকভাবে অক্টোপাস খাওয়ার প্রচলন দেখা যায়। তা দেশভেদে অক্টোপাসের রেসিপির দিকে তাকালেই বোঝা যায়। আমাদের দেশেও বর্তমানে অক্টোপাসের বিভিন্ন পদ পাওয়া যাচ্ছে রেস্তোরাঁগুলোতে। এজন্য কক্সবাজার যেতে হচ্ছে না ঢাকায় বসেই স্বাদ নিতে পারছেন সামুদ্রিক এই অক্টোপাসের নানান পদের।

আসুন কোন দেশে কীভাবে অক্টোপাস খাওয়া হয় এবং কীভাবে অক্টোপাস তাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হলো জেনে নেওয়া যাক-

জাপান
জাপানি খাবারে অক্টোপাস একটি খুবই জনপ্রিয় উপকরণ। জাপানিজরা সাধারণত অক্টোপাস সুশি, সাশিমি, কারাগে (ভাজা পদ), স্ট্যু, টক সালাদ, তাকোইয়াকি এবং আকাশিয়াকি সহ নানান রকম খাবারে ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে তাকোইয়াকি অন্যতম একটি জনপ্রিয় খাবার। যা গমের আটার ব্যাটারের মধ্যে ছোট ছোট টুকরা করা অক্টোপাস দিয়ে ছাচকৃত পাত্রে ভেজে তৈরি করে। পেঁয়াজ কুঁচি ও মেয়োনিজ এবং জাপানিজদের তৈরি বিশেষ ধরনের তাকোইয়াকি সস সঙ্গে আরও কিছু স্থানীয় উপকরণ দিয়ে পরিবেশন করা হয় এটি। এই তাকোইয়াকি জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড। তাই তাকোইয়াকিকে জাপানিজ সংস্কৃতি অন্যতম অংশ বলা চলে।

বিশ্বজুড়ে অক্টোপাস খাওয়ার সংস্কৃতিজাপানের স্ট্রিট ফুড তাকোইয়াকি

দক্ষিণ কোরিয়া
‘সান-নাকজি’ বা ‘লাইভ অক্টোপাস’ দক্ষিণ কোরিয়ার খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। সান-নাকজি হলো এক ধরনের ছোট অক্টোপাস যা কাঁচা অবস্থায় ছোট ছোট করে কেটে তিলের তেল, তিলের বীজ এবং কখনো কখনো আদা দিয়ে পরিবেশন করা হয়। এই খাবার কোরিয়ানদের কাছে বেশ সুপরিচিত। তাই তো পর্যটকরাও দক্ষিণ কোরিয়া গেলে ‘সান-নাকজি’ চেখে দেখতে ভোলেন না।

‘লাইভ অক্টোপাস’ দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তবে এ খাবার যেমন সুস্বাদু তেমনি জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ খাওয়ার সময় অক্টোপাসের স্নায়ু জীবিত থাকে তাই লাইভ অক্টোপাস গলায় আটকে যেতে পারে এবং হৃদযন্ত্রের কাজ বন্ধ হয়ে মানুষ মারা যায়। লাইভ অক্টোপাস খেতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা সেখানে নেহাত কম নয়। যদিও অক্টোপাস মেরে ফেলার কিছুক্ষণ পরই পরিবেশন করা হয়। তবে তখনও অক্টোপাসের বাহুগুলো নড়াচড়া করে। তাই এটি ভালোভাবে চিবিয়ে খেতে হয়।

বিশ্বজুড়ে অক্টোপাস খাওয়ার সংস্কৃতিদক্ষিণ কোরিয়ায় জীবন্ত অক্টোপাস খাওয়া বেশ জনপ্রিয়

গ্রিস
গ্রিসের দ্বীপগুলোতে খুব পরিচিত একটি দৃশ্য হলো-সূর্যের আলোয় দড়িতে ঝুলে থাকা অক্টোপাস, ঠিক যেমন কাপড় শুকানোর জন্য রোদে দেওয়া হয়। এই দৃশ্য গ্রিক উপকূলীয় জীবনের প্রাত্যহিক অংশ।

সাধারণত এসব অক্টোপাস তীরের কাছাকাছি স্পিয়ার ফিশিং বা বর্শা দিয়ে মাছ ধরার মতো করে ধরা হয়। জেলেরা যখন তাদের ধরা অক্টোপাস নিয়ে তীরে ফিরে আসে, তখন প্রথমেই তারা অক্টোপাসের মাংস নরম করার জন্য পাথর দিয়ে ছেঁচে নেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় মাংস কোমল ও রান্নার উপযোগী হয়।

এরপর অক্টোপাসগুলোকে শুকানোর জন্য দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। শুকিয়ে গেলে সেগুলোকে সাধারণত গ্রিল করে পরিবেশন করা হয়-কখনো গরম গরম, আবার কখনো ঠান্ডা সালাদ হিসেবেও পরিবেশ করা হয়।

বিশ্বজুড়ে অক্টোপাস খাওয়ার সংস্কৃতিগ্ৰিসের গ্ৰীলড অক্টোপাস

গ্রিক রান্নায় অক্টোপাস প্রস্তুতের সময় ব্যবহৃত হয় তাদের বিখ্যাত অলিভ অয়েল, রসুন, ওরেগানো, গোলমরিচ এবং লেবুর রস-এই সব উপকরণের মিশ্রণেই তৈরি হয় এক অসাধারণ সুগন্ধ ও সুস্বাদ গ্ৰীলড অক্টোপাস। এই পদটি গ্রিক সংস্কৃতিতে ‘মেজে’ বা ছোট নাস্তা হিসেবে পরিচিত। সাধারণত তাদের ঐতিহ্যবাহী পানীয় উজোর সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।

তিউনিসিয়া
অক্টোপাস ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে একটি জনপ্রিয় খাবার। বিশেষ করে তিউনিসিয়ানদের মাঝে। তিউনিসিয়ার জেরবা ও কারকেন্নাহ দ্বীপে স্থানীয় মানুষরা অক্টোপাস ধরেন। সন্ধ্যায় তারা সমুদ্রের তলায় ধূসর রঙের মাটির হাঁড়ি রাখেন। পরের দিন সকালে সেই হাঁড়িগুলো পরীক্ষা করে দেখেন, কোনো অক্টোপাস সেখানে আশ্রয় নিয়েছে কি না। অক্টোপাসও সেসব হাড়িকে তাদের আশ্রয়কেন্দ্র মনে করে ফাঁদে পড়ে যায়। এরপর তারা অক্টোপাস দিয়ে গ্রিল, রোস্ট, কুসকুস, পাস্তা কিংবা চোরবা (এক ধরনের স্যুপ), রান্না করে খান। অক্টোপাস সালাদও তাদের প্রিয় খাবারের একটি।

বিশ্বজুড়ে অক্টোপাস খাওয়ার সংস্কৃতিতিউনিসিয়ার জনপ্রিয় খাবার অক্টোপাসের সালাদ

আরও পড়ুন
ছবি তুলেই আয় করছেন সেজান
এক কাপ কফির বিশ্বরেকর্ড

তথ্যসূত্র: ভিজিট কোরিয়া, আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক, টেস্ট আটলাস

কেএসকে/এএসএম

আরও পড়ুন