ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

দেশের যেসব মুদ্রা হারিয়েছে, যেগুলো চলছে

মামুনূর রহমান হৃদয় | প্রকাশিত: ০১:২৭ পিএম, ০২ নভেম্বর ২০২৫

আমাদের দেশে এক সময় ছিল কয়েনের রাজত্ব। বাংলাদেশ জন্মের পর ১, ২, ৫, ১০, ২৫ এবং ৫০ পয়সার কয়েন যেন ছিল সোনার হরিণ! অল্প পয়সা খরচ করলেই হয়ে যেত ব্যাগ ভর্তি বাজার। কালের বিবর্তনে হারিয়েছে সেসব মুদ্রা। এখন আর নেই কয়েনগুলোর অস্তিত্ব। ৫০০ টাকার বাজারও যেন চলে একদিন! চলুন জেনে নেই আমাদের দেশের কোন কোন মুদ্রা এখন শুধুই অতীত, আর কোনগুলো টিকে আছে অবহেলায় এখনো।

যেসব কয়েন হারিয়েছে

এক পয়সা
১৯৭০-এর দশকে যখন এক পয়সার মুদ্রা প্রচলিত ছিল, তখন এর ক্রয়ক্ষমতা বর্তমান সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। চকলেট বা লজেন্স, বাদাম, চুইংগাম, স্বল্প খাবার, কাঁচের মার্বেল ইত্যাদি পাওয়া যেত এক পয়সায়। মূল্যস্ফীতির কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টাকার মান কমেছে। এক পয়সার ব্যবহারও বিলুপ্ত হয়েছে।

দুই পয়সা
এক পয়সার তুলনায় দুই পয়সার ক্রয় ক্ষমতা বেশি ছিল। সাধারণত দুই পয়সায় ছোটখাটো কিছু জিনিস পাওয়া যেত। মিছরি, ছোট মিষ্টি, শুকনা ছোট মাছ এমনকি বাচ্চাদের খেলনা কেনা যেত।

দেশের যেসব মুদ্রা হারিয়েছে, যেগুলো চলছে

পাঁচ পয়সা
১৯৭৩ সালে প্রথম মুদ্রাটির প্রচলন শুরু হয়। ১৯৯৪ সালের পর আর ৫ পয়সা বের হয়নি। নতুন প্রজন্মের কাছে দেখার মতো পাঁচ পয়সা নেই। মধ্যবিত্ত পরিবারে শিশুদের স্কুলের টিফিনের জন্য পাঁচ পয়সা দেওয়া হতো। সে সময় পাঁচ পয়সার মুদ্রার গায়ে লাঙলের ছবিযুক্ত ছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা জাদুঘরে গেলে দেখা মিলবে পাঁচ পয়সার।

দশ পয়সা
দশ পয়সার ধাতব মুদ্রা সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। সত্তরের দশকে দশ পয়সায় কাঠের পেন্সিল বা একটি রবারও কেনা যেত। এছাড়াও কিছু দোকানে ছোটখাটো স্টেশনারি সামগ্রী পাওয়া যেত।

পঁচিশ পয়সা
এক পিঠে বাঘ আরেক পিঠে শাপলার ছবি দেখলেই চোখে ভাসে পঁচিশ পয়সার কয়েনটি। নব্বই দশকের অনেকেই এটি চিনতে পারবেন। শখ করে অনেকেই সেগুলো রাখতেন মাটির ব্যাংকে। সত্তরের দশকে বন্দর ঘাটে টোল দিতে বা নৌকায় যাতায়াতের ভাড়া হিসেবে এই পয়সা ব্যবহার করা হতো।

পঞ্চাশ পয়সা
১৯৭৩ সালে প্রচলিত প্রথম চারটি ধাতব মুদ্রার মধ্যে ৫০ পয়সা অন্যতম। সে সময় এই পয়সায় ডাল, ভাত, সবজি কিংবা মাছ অনায়াসে খাওয়া যেত। আজকের দিনে মুদ্রাস্ফীতির কারণে, ৫০ পয়সার মূল্য কমে গেছে। বাজারে বর্তমানে অচল এটি। তাই সেই সময়ে যে জিনিসগুলো ৫০ পয়সায় কেনা যেত তা এখন আর সম্ভব নয়।

দেশের যেসব মুদ্রা হারিয়েছে, যেগুলো চলছে

যেসব কয়েন এখনো প্রচলিত

এক টাকা
এক পিঠে শাপলা আরেক পিঠে পরিবার শুনলেই যেই নামটি মনে আসে সেটি এক টাকার কয়েন। শৈশবে ক্রিকেট খেলায় টস করার কাজে ব্যবহার হতো এটি। বাংলাদেশে বর্তমানে এখনো প্রচলিত কয়েন এটি। বর্তমান বাজার মূল্যে এক টাকায় তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তবে সত্তরের দশকে এই টাকায় চলত অনেক পরিবার।

দুই টাকা
বর্তমানে বাংলাদেশে দুই টাকার মুদ্রার ব্যবহার চালু রয়েছে। এক দিকের নকশায় ‘সবার জন্য শিক্ষা’ প্রতীক অপর পিঠে শাপলা প্রতীকযুক্ত কয়েনটি অনেকের পছন্দের। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ডিজাইনেও পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে এটি দিয়ে একটি চকলেট ছাড়া তেমন কিছু কেনা যায় না। তবে নব্বইয়ের দশকে স্কুলের ছেলেমেয়েদের কাছে এটি ছিল অনেক মূল্যবান। দুই টাকার একটি কয়েন সঙ্গে থাকলে স্কুলের টিফিনে আচার, চকলেট, চিপস, ঝালমুড়ি অনায়সে কেনা যেত।

পাঁচ টাকা
১৯৯৩ সালের ১ অক্টোবর প্রথম ৫ টাকার মুদ্রা চালু করা হয়। তবে সময়ের সঙ্গে এর নকশা ও গঠন পরিবর্তিত হয়েছে। প্রথমে যেই কয়েনটি চালু হয় তার গায়ে ছিল যমুনা সেতু, অপর পিঠে শাপলা। নব্বইের দশকে পাঁচ টাকায় হোয়াইটপ্রিন্ট কাগজের দিস্তা, একটি আস্ত বা একাধিক সাধারণ খাতা পাওয়া যেত। বর্তমানে এই টাকা দিয়ে ২-৩টি অফসেট কাগজ কিনতে পাওয়া যায়।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে একসময়ের ঝকঝকে পয়সাগুলো। যেগুলোর টুংটাং শব্দ একসময় বাজার থেকে স্কুলের মাঠ সর্বত্র ছিল জীবনের সঙ্গী। এখন সেসব মুদ্রা শুধু স্মৃতির পাতায় কিংবা মানিব্যাগের কোণে লুকিয়ে আছে। অনেক প্রাচীন কয়েন আজ মুদ্রা জাদুঘরের কাঁচের বাক্সে জায়গা পেয়েছে, ইতিহাসের নিদর্শন হিসেবে। হয়তো ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে প্রচলিত কয়েনগুলোও।

আরও পড়ুন
শেয়াই পিঠা বাগেরহাটের শীতকালীন ঐতিহ্য
অফিসে যৌন হয়রানি কী, শিকার হলে যা করবেন

সোর্স: শিক্ষক বাতায়ন

কেএসকে/এমএস

আরও পড়ুন