ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ফিচার

আধুনিক প্রজন্মের প্রেম ভাবনা

ফিচার ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:১৩ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

সাবরিনা নিপু

প্রেম আজও এক অবগাহন। তেতেপুড়ে যন্ত্রণায় জ্বলে আজও আমরা যে গাছটির আশ্রয় খুঁজে চলি হন্যে হয়ে তা হলো প্রেম। সে বৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়িয়ে তার পাতা থেকে চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টিধারায় এতটুকু সিক্ত হতে পারলেই আমরা ধন্য হই।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তবে সত্যি বলতে এক নিরবচ্ছিন্ন অন্তরঙ্গতার মধ্য দিয়ে হৃদয়ে প্রেমের মর্মরধ্বনি শোনার দিন এখন যে আর নেই সেটা কারো অজানা নয়। বর্তমানে বিয়ে ও দাম্পত্যে এসেছে পরিবর্তন। প্রতি মিনিটেই ভাঙছে সম্পর্ক। অথচ ভাঙার নির্দিষ্ট কারণ কেউ বুঝে ওঠার আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সম্পর্ক।

আমাদের সময়ের গান, কবিতা, সাহিত্য, গান, স্বভাব, ক্রিকেট-ফুটবল, সব কিছু এমনকি প্রেমও ভালো ছিল। এখনকার প্রজন্ম প্রেমের মর্ম কি বুঝবে এই হচ্ছে আমাদের চিরকালীন প্রস্তাবনা। তাদের মধ্যে সেই ‘নিবিড়ের সজলতা’ আর নেই, সম্পর্ক তাদের কাছে ঠুনকো খেলনারই নামান্তর।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তবে আমরা কখনও এ কথা ভেবে দেখি না যে ভালোবাসার আধার সেই প্রথম দিন থেকে একই। তা হলো… মন, হৃদয়, মগজ, অনুভূতি, টান ও তাগিদ। এই সবকিছু তখনও যা ছিলো এখনও তা ই আছে। নইলে মানুষ প্রেমেই পড়তো না। তবে হ্যাঁ যেটা বদলেছে সেটা হচ্ছে এর বহিঃপ্রকাশ।

আগে প্রেম ও বিয়ে ছিলো জীবনের একেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। প্রেম মানে শাশ্বত এক আবেগ তা আর এখন কেউ মনে করে না। তবুও কেউ কেউ প্রেমটাকে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। এর সংখ্যাও একেবারে কম নয়। বর্তমান আধুনিক প্রজন্ম প্রেম মানেই রোমান্টিসিজম এ ধারণায় বিশ্বাসী নয়।

বিজ্ঞাপন

একবিংশ শতকের প্রেম শরীরী আদান প্রদান ও তৃপ্তিকেই বড় বলে দেখছে। সঙ্গীর সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি ও স্পষ্ট আলাপ আলোচনায় দ্বিধান্বিত নয় তারা। আবার বয়সের ব্যবধানগত সম্পর্কিত কোনো প্রথাগত ধারণা বা ট্যাবু এরা মানতে চায়না।

একবিংশের সম্পর্কগুলো প্রেমকে আপন করেছে। এখন যন্ত্রের যুগ। যন্ত্র প্রেম উৎপাদন করে ও স্থির করে প্রেমের আয়ু অথবা এটিই প্রেমকে ধ্বংস করে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে হাতছানিতো থাকেই সারাক্ষণ। তাতে কেউ কেউ বিভ্রান্ত হয় বৈকি।

এরই সঙ্গে যুক্ত হয় দুই শহরে, কন্টিনেন্ট, গোলার্ধে, সময়বৃত্তে থাকা দু’টি হৃদয়। তখন সে প্রেমকে বাঁচিয়ে রাখতে ভরসা সেই প্রযুক্তি। তবে এ যুগের প্রেমের মতো এমন সহজ, সুলভ, সংক্ষিপ্ত , অচিরস্থায়ী হয়তো গত শতকের মানুষের সূদূর কল্পনাতেও ছিল না। তবে প্রযুক্তির দৌলতেই তা সম্ভব হলো।

বিজ্ঞাপন

অধুনিক প্রজন্ম প্রেমকে এখন বন্ধুত্ব নামে ডাকতেই যেন বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। প্রেমের ক্ষেত্রে এখন জীবন ছাপিয়ে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টা কমে এসেছে। প্রেমের সম্পর্কের সবচেয়ে গাঢ় যে বিষয় তা হলো অ্যাটেনশন পাওয়া।

আমরা কোথাও বেড়াতে গেলেও দেখি যুগলরা নিজেদের নিয়ে সময় কাটানোর চেয়ে যে যার ডিভাইস নিয়েই ব্যস্ত। ফলে একজন অপরজনের কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে।

ব্রেকআপ এই শব্দটি এখন বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয়। এর সঙ্গে আরও যোগ হয়েছে রিলেশন, একস্ট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার, ডিলিট, ব্লক এই শব্দগুলো। ডিকশনারিতে যুগ যুগ ধরেই ছিলো এ শব্দগুলো। তবে এর এতো বহুল ব্যবহার অন্য কোনো শতাব্দীতে ব্যাপক হারে ছিলোনা।

বিজ্ঞাপন

আধুনিক সমাজে যেসব বড় পরিবর্তন এসেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বিয়ে ও দাম্পত্যে অনিশ্চয়তা। কারণ সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর কোনো কারণেও সংসার ভেঙে যাচ্ছে এখন। সম্পর্কটা আর আগের জায়গায় নেই। প্রতি ঘণ্টায় যদি শুধু ঢাকা শহরেই একটি করে তালাক এর আবেদন করা হয় তাহলে প্রতি মিনিটে কতোগুলো প্রেম ভাঙছে তা সহজেই অনুমেয়।

এই মিলেনিয়ামে এসে প্রেম বিয়ের যৌথ তত্ত্বটাই ভেঙে গেছে। বিয়ে ও প্রেমের প্রোগ্রেশন আগে যেমন ছিল এখন তেমন নেই। আগে ছিল যাকে ভালোবাসলাম তাকে নিয়েই জীবনটা কাটানোর স্বপ্ন দেখা। যৌথ জীবন তৈরি করে সেখান থেকে তৈরি করবো পরিবার।

পুরুষরা বরাবরই বাইরে কাজ করেন। আর আগে বেশিরভাগ নারীরাই সংসার সন্তান আগলে রাখতেন। ক্রমশ সময় বদলে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ায় শুধু নয়, প্রত্যেকের আয় করার প্রয়োজনীয়তা, প্রত্যেকের নিজস্ব উচ্চাকাঙ্ক্ষা যৌথযাপনে এসেছে আমূল পরিবর্তন।

বিজ্ঞাপন

নারীরা এখন নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে খুবই সচেতন। আর এ সচেতনতার বৃদ্ধিই বর্তমানে বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারণ বলেও মনে করা হয়। নারীদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিও হতে পারে বিবাহবিচ্ছেদের একটি কারণ।

তবে আজকের প্রজন্ম শ্রেণীবৈষম্যহীন অকুণ্ঠতাকেই স্বীকৃতি দিচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এখন স্টিরিওটাইপ পাত্র/পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দেয়া অনেকাংশে বদলে গেছে। ফর্সা পাত্রী আসআর বিদেশি পাত্র চাওয়া যেমন কমেছে তেমনই কমেছে অভিভাবকের বাছবিচার। যা গত শতকের শেষ ভাগেও সম্ভব ছিল না। তবে তা এ প্রজন্ম করে দেখিয়েছে।

প্রযুক্তি এসে জীবনযাপনকে সহজ করে দিয়েছে। সমকামিতা বা পরকীয়া সমাজ স্বীকৃত নয় আজও। তবুও থেমে নেই কিছুই। সবার চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে লিভ ইন রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছে অনেকেই সফলভাবে। এখন দূরতম বিদেশেও একটি মাত্র কল করেই মানুষ প্রেমিক বা প্রেমিকার গলার স্বর শুনতে পাচ্ছে। ভিডিও কল দিয়ে দেখতে পাচ্ছে একে অন্যের মুখশ্রী।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে ভিডিও কল জন্ম দিয়েছে লাইভ যৌনতার। আবার লাইভ যৌনতা জন্ম দিয়েছে অনেক অপরাধের। যদিও প্রেমিক-প্রেমিকার জীবনে এই ভার্চুয়াল লাইভ যৌনতা এখন আর অস্পৃশ্য কিছু নয়। এটাই হচ্ছে জীবনের বাস্তবতা। এ নিয়ে নানা জনের নানা মত থাকতেই পারে।

জেএমএস/জিকেএস

আরও পড়ুন

বিজ্ঞাপন