বিশ্বের সেরা ৫ খাবার, স্বাদ নিতে লাগবে পাসপোর্ট-ভিসা

বিখ্যাত আইরিশ নাট্যকার, সমালোচক এবং রাজনীতি চিন্তক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছিলেন, ‘খাবারের প্রতি ভালোবাসার চেয়ে আন্তরিক ভালোবাসা আর কিছু নেই’। সত্যিই কিন্তু তাই, ভোজনরসিকদের কাছে খাবার শুধু পেট ভরানোর জন্য নয়, এটি তাদের কাছে আলাদা এক অনুভূতি। যে অনুভূতিকে পুঁজি করে আজ অনেকেই হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া তারকা। তাদের অবশ্য একটা নামও আছে ফুডভ্লগার। যারা দেশ এবং দেশের বাইরের নানান খাবারের স্বাদ কেমন তা দর্শকদের জানান।
ফুডভ্লগারদের রিভিউ দেখে অনেকেই সেসব খাবারের স্বাদ নিয়ে অভিভূত হোন, কখনোবা হতাশ হোন। তবে একটি খাবার বা রেসিপি কখন সেরা হয় জানেন কি? শুধু সেই খাবারের স্বাদের জন্যই নয়, ইতিহাস, সংস্কৃতি, নান্দনিকতার কারণে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিশ্বজুড়ে এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো শুধু স্বাদের জন্য নয়, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও দামে এক অনন্য অবস্থানে রয়েছে। কেউ খায় বিলাসিতার স্বাদে, কেউ ইতিহাসের টানে। আজ চলুন বিশ্বের সেরা ৫ খাবারের সম্পর্কে জানব। যেগুলো ভ্রমণ নির্দেশিকা টেস্টএটলাসের তালিকা থেকে নেওয়া হয়েছে। এই খাবারের স্বাদ নিতে আপনাকে ছুটতে হবে দেশ থেকে দেশে। তাতে লাগবে পাসপোর্ট-ভিসা।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
১. পিজ্জা নাপোলিটানা, ইতালি
পিজ্জার জন্য বিখ্যাত ইতালি, এ কথা নতুন করে বলতে হবে না নিশ্চয়ই। বিশ্বের জনপ্রিয় খাবার পিজ্জার জন্মস্থান ইতালি। তবে ইতালির নেপোলি শহরের পিজ্জা নাপোলিটানা বিশ্বের অন্যতম সেরা খাবারের তালিকায় আছে একদম শুরুতেই।
পিজ্জা নাপোলিটানার জন্ম ১৮শ শতকের নাপলসে। তখন গরিব মানুষের খাবার হিসেবে পরিচিত ছিল এই সাদামাটা রুটি ও টমেটো। কিন্তু ১৮৮৯ সালে রানি মার্গারেটের জন্য বানানো হয় টমেটো, মোজারেলা ও তুলসীপাতা দিয়ে সাজানো একটি পিজ্জা, যা পরে ‘মার্গারেটা পিজ্জা’ হিসেবে খ্যাতি পায়। এমনকি ইউনেস্কো এই পিজ্জার ‘হস্তনির্মিত প্রণালি’কে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এই পিজ্জা তৈরিতে ব্যবহার হয় টমেটো সস, মোজারেলা, তুলসীপাতা, জলপাই তেল এবং নরম ময়দার ডো। কাঠের চুলায় মাত্র ৯০ সেকেন্ডে রান্না করা হয় এই পিজ্জা। সাধারণ রেস্টুরেন্টে এই পিজ্জা ৮-২০ ইউরো, তবে বড় বড় রেস্টুরেন্টে ৩০-১০০ ইউরো পর্যন্ত দাম হতে পারে।
২. সুশি, জাপান
জাপানে জন্ম হলেও সুশি সারা বিশ্বে এক জনপ্রিয় খাবার। ভাতের মধ্যে কাঁচা মাছ, সস, শসা, গাজর পেঁচিয়ে তৈরি এই বিশেষ খাবারের স্বাদ নিতে অনেকেই ছুটে যান জাপানে। সুশির ধারণা মূলত আসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংরক্ষিত মাছ থেকে। কিন্তু আধুনিক সুশি গঠিত হয় ইডো যুগে (১৬০০-১৮৬৮), টোকিওতে।
বিজ্ঞাপন
সুশি ভিনেগারযুক্ত ভাতের সঙ্গে কাঁচা মাছ, সবজি, সামুদ্রিক শৈবাল দিয়ে তৈরি হয়। নানা ধরনে হয়: নিগিরি, মাছ দিয়ে মোড়ানো মাকি, তেমাকি ইত্যাদি। সাধারণত ৫-৩০ ডলার, তবে বিশ্বমানের রেস্টুরেন্টে একটি মিলের জন্য ১০০-৫০০ ডলার লাগতে পারে। আমাদের দেশে এখন বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় সুশি পাওয়া যায়, তবে এর স্বাদ কতোটা জাপানিদের নিখুঁত রন্ধনশৈলীর ধারেকাছে যেতে পারে সেই প্রশ্নও তো থেকেই যায়।
৩. মাসামান কারি, থাইল্যান্ড
মূলত পারস্য (ইরান) থেকে আগত মুসলিম ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই খাবার থাইল্যান্ডে আসে। রাজবাড়িতেও এই কারি পরিবেশন করা হতো। নারকেল দুধ, কারি পেস্ট, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, মাংস (গরু বা মুরগি), চিনাবাদাম, আলু-সবকিছু একত্রে ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। থাইল্যান্ডে ৫-১৫ ডলারে বিক্রি হয় এক বাটি মাসামান কারি। এটি বিশ্বব্যাপী ‘সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার’ হিসেবে সিএনএন-এর তালিকায় এক নম্বরে ছিল।
বিজ্ঞাপন
৪. পিকিং ডাক, চীন
চীনের বেইজিংয়ে হাঁসের এই বিশেষ খাবারের উৎপত্তি। ইউয়ান রাজবংশ থেকে উৎপত্তি পাওয়া এই খাবার মিং রাজবংশে রাজকীয় খাবারে পরিণত হয়। পরবর্তীতে এটি চীনের জাতীয় গৌরব হিসেবে বিবেচিত হয়। হাঁসকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করে শুকিয়ে চামড়া খাস্তা করে চুলায় ঝলসে নেওয়া হয়। পাতলা প্যানকেকের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। সাধারণভাবে ২০-৫০ ডলার, তবে বেইজিংয়ের কিছু হোটেলে ২০০ ডলার পর্যন্ত এর দাম হতে পারে। এই খাবারের বিশেষত্ব হচ্ছে হাঁসের খাস্তা চামড়া ও তার সঙ্গে কাস্টমাইজড সস, রসুন পেস্ট ও কাঁচা শসা পরিবেশন-গৌরবময় রাজকীয় খাবারের প্রতীক।
বিজ্ঞাপন
৫. ফয় গ্রা, ফ্রান্স
উৎপত্তিস্থল ফ্রান্সে হলেও ইতিহাস বলছে প্রাচীন মিশরীয়রা প্রথম হাঁসের লিভার বড় করে সেটি খাওয়ার ধারণা আনেন। পরবর্তীতে ফ্রান্সে এই প্রথা বিলাসী খাদ্য হিসেবে গৃহীত হয়। এই রেসিপিতে বিশেষ পদ্ধতিতে খাওয়ানো হাঁস বা রাজহাঁসের লিভার ব্যবহার করা হয়। প্যাটে বা টেরিন হিসেবে পরিবেশন করা হয়। এই খাবার ৫০-২০০ ডলার প্রতি কেজিতে বিক্রি হয়। রেস্টুরেন্টে ৩০-১০০ ডলার দাম নিতে পারে একটি ফয় গ্রা পরিবেশনের জন্য। এটি ইউরোপিয়ান বিলাসবহুল খাবারের প্রতীক, তবে এর উৎপাদন নিয়ে প্রাণী অধিকার নিয়ে বিতর্কও রয়েছে।
সূত্র: সিএনএন
কেএসকে/জেআইএম
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন