কুয়াশার চাদরে ঢাকা ঘরহীন মানুষের গল্প
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছবি তুলেছেন মাহবুব আলম
ভোর নামলেই হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঢাকাকে ঢেকে ফেলছে কুয়াশার চাদর। দূরের আলো ঝাপসা হয়ে আসে, শব্দগুলোও যেন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই শীত শহরের অনেকের কাছে আরামের; কেউ গরম চা হাতে নেয়, কেউ মোটা কম্বলে শরীর ঢাকে। কিন্তু এই একই শীতই কারও কারও জীবনে হয়ে ওঠে সবচেয়ে কঠিন বাস্তব।

ঢাকার রাস্তায়, ফুটপাতে, পার্কের খোলা মাঠে শীতের সঙ্গে প্রতিদিন লড়াই করছেন ঘরহীন ছিন্নমূল মানুষগুলো। গুলিস্তান–এর ব্যস্ততা পেরিয়ে একটু চোখ রাখলেই দেখা যায় এক কোণে কম্বল মুড়িয়ে বসে আছেন কেউ, কারও শরীরে নেই পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র। কারও চোখে ঘুম নেই, আছে শুধু ঠান্ডা আর অনিশ্চিত ভোরের ভয়।

শহরের আরেক প্রান্তে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের খোলা মাঠে রাত নামলেই আগুন জ্বালানো হয়। ছোট ছোট আগুনের চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন কয়েকজন। আগুনের শিখা উষ্ণতা দেয় ঠিকই, কিন্তু সেই উষ্ণতা ক্ষণিকের। আগুন নিভে গেলে আবার ফিরে আসে কাঁপুনি, আর দীর্ঘ রাতের নীরবতা।

এই মানুষগুলোর শীত শুধু আবহাওয়ার নয়; জীবনেরও। কারও মাথার ওপর ছাদ নেই, নেই নিরাপদ ঘুমের নিশ্চয়তা। শীতের রাতে শহর যখন ধীরে ধীরে নিশ্চুপ হয়ে আসে, তখনই তাদের দিন শুরু হয়। কখনো ফুটপাত, কখনো পার্কের বেঞ্চ, কখনো খোলা আকাশ এই নিয়েই কাটে রাত।

ঢাকার কুয়াশাচ্ছন্ন শীতে আমরা হয়তো জানালার কাচ মুছে বাইরে তাকাই, ঠান্ডা অনুভব করে আরেকটু গা চাদরে মুড়ে নিই। কিন্তু রাস্তায় থাকা মানুষগুলোর সেই সুযোগ নেই। তাদের কাছে একটি পুরোনো কম্বলই বিলাসিতা, আগুনের সামান্য আঁচই আশ্রয়।

এই শীত আমাদের শুধু ঠান্ডা অনুভব করায় না, প্রশ্নও তোলে। একই শহরে দাঁড়িয়ে কেউ উষ্ণতার খোঁজে চা খোঁজে, কেউ খোঁজে একটু আশ্রয়। কুয়াশার ভেতর ঢাকা পড়ে থাকা এই মানুষগুলোর গল্প হয়তো প্রতিদিনের ব্যস্ততায় চোখ এড়িয়ে যায়। অথচ শহরের এই শীতল বাতাসে তাদের নিঃশ্বাসও মিশে আছে নীরবে, অবহেলায়, অথচ গভীর মানবিকতার দাবি নিয়ে।
জেএস/