ভিডিও EN
  1. Home/
  2. স্বাস্থ্য

জটিল অবস্থায় হাসপাতালে আসছে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরা

আবদুল্লাহ আল মিরাজ | প্রকাশিত: ০৯:১০ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২২

প্রতি বছরই জুলাই-আগস্ট মাসে বেড়ে যায় ডেঙ্গুর প্রকোপ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শুধু ঢাকা শিশু হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে ১০ শিশু। ভর্তি রোগীদের মাঝে তিনজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভর্তি শিশুদের বেশির ভাগই জটিলতা নিয়ে আসছে। এদের অনেকের ফুসফুসে পানি, শ্বাসকষ্ট ও ইন্টারনাল ব্লিডিং দেখা দেয়। এসব সমস্যার ফলে লিভার, ফুসফুস, কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অরগান আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে শিশুদের দীর্ঘ সময় হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে।

শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রথম তিনদিনের মধ্যেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। শিশুদের দিনের বেলায়ও মশারির মধ্যে রাখতে হবে। এছাড়া বারান্দা বা জানালায় মশা যাতে না ঢুকতে পারে, সেজন্য মশার নেট ব্যবহার করতে হবে।

শ্যামলীতে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে রোববার (২১ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চাপ বেড়েছে। হাসপাতালটির ডেঙ্গু ইউনিটের প্রতিটি বেডেই ভর্তি রোগী। জ্বরে ছটফট করছে শিশুরা। অনেক শিশু হাসপাতালে ভর্তি আছে পাঁচদিনেরও বেশি।

jagonews24গুরুতর অবস্থায় আসা শিশুর পরিচর্যায় নার্সরা, ছবি: মাহবুব আলম

সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান জাগো নিউজকে জানান, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত অনেক কম ছিল ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। জুলাই মাসে এসে এর প্রকোপটা অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। জুন মাসে এখানে ভর্তি হয়েছে ৪৬ জন ডেঙ্গু রোগী। তবে ১ থেকে ১৬ আগস্টের মধ্যেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখানে ভর্তি হয়েছে ৪৫ জনের বেশি। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি ২৩ শিশু। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১০ জন। ভর্তি রোগীদের মধ্যে তিনজনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। এছাড়া এ বছর চার শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছে।

তিনি জানান, ভর্তি শিশুদের বেশির ভাগই জটিলতা নিয়ে আসছে। এদের মধ্যে দেখা যায়, অনেক রোগীর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়, অনেক রোগী পেটে ব্যথায় ভোগে, ফুসফুসে পানি আসা, শ্বাসকষ্ট হওয়া ও ইন্টারনাল ব্লিডিং সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যার ফলে দেখা যায় লিভার, ফুসফুস, কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অরগান ইনভলভ হচ্ছে। তাই বেশি সময় হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে শিশুদের।

jagonews24মায়ের কোলে অসুস্থ এক শিশু, ছবি: মাহবুব আলম

শিশু হাসপাতালে ভর্তি আছে ছয় বছরের শিশু আবদুল্লাহ। তার বাবা ইকবাল জাগো নিউজকে জানান, ছয়দিন ধরে জ্বর আব্দুল্লাহর। এখন চিকিৎসক বলেছেন তার রক্তের প্লাটিলেট কমে গেছে। গতকাল (শনিবার) ১৬ হাজারে নেমে গিয়েছিল। আজ কিছুটা বেড়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে নিতে হবে।

আরও পড়ুন: ঢাকা শিশু হাসপাতালই যেন ডেঙ্গুর আখড়া! 

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমা বিনতে আলী চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালটিতে। তারও ১০৪ ডিগ্রি জ্বর। পাঁচদিন ধরে একই অবস্থা।

তার বাবা জানান, হয়তো পিসিইউ বা আইসিইউতে ভর্তি করা লাগতে পারে। তার শরীরে র‌্যাশ দেখা দিয়েছে।

তাহসিন নামে এক মাদরাসা শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি তিনদিন। এর আগে চারদিন ধরে শিশুটি জ্বরে ভুগছিল। তাহসিনের মা জানান, মাদরাসায় অনেক শিশু একসঙ্গে থাকে। ওখানে নানান অসুবিধায় আমার বাচ্চাটা অসুস্থ হয়ে যায়।

চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম জানান, আমরা দেখতে পাচ্ছি নানান কারণে পরিত্যক্ত বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখভাল ভালোভাবে হচ্ছে না। এতে আমরা বিভিন্ন জায়গায় যে এডিসের ঘনত্ব ও সংখ্যা দেখেছি এটি অনেকটাই উদ্বেগজনক। এডিস মশা যেহেতু সংক্রামক মশা, এতে এক রোগী থেকে অন্যজন সংক্রমিত হয়। তাই আমরা আহ্বান করবো সিটি করপোরেশনকে বিষয়টি আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে ডেঙ্গুর উপদ্রব: কবিরুল বাশার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার জানান, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমাদের অভিযান জোরদার করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় এডিসের লার্ভার উপস্থিতি বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তাই এই আগস্ট মাস ও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু মশার উপদ্রব থেকে যায়।

jagonews24হাসপাতালের বাইরে বসে আছে এক শিশু, ছবি: মাহবুব আলম

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে রোববার (২১ আগস্ট) জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৫ জন রোগী। এছাড়া মারা গেছেন একজন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৪৫৪ জন ভর্তি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৪৭টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৩৯২ জন। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৬২ জন।

ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ে ডা. রিজওয়ানুল আহসান জাগো নিউজকে বলেন, কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রথম তিনদিনের মাঝে ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিতে হবে। শিশুদের দিনের বেলাও মশারির মাঝে রাখতে হবে। বারান্দা বা জানালায় মশা যাতে না ঢুকতে পারে, সেজন্য মশার নেট ব্যবহার করতে পারি। এছাড়া শিশুরা স্কুলে গেলে যাতে পুরো শরীর ঢাকা থাকে, এমন পোশাক পরাতে হবে। জ্বর হলে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে। এছাড়া অভিভাবকদের বাসার আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা ও বাচ্চাদের প্রতি খেয়াল রাখারও পরামর্শ দেন তিনি।

এএএম/এমএইচআর/জিকেএস