সিডনির বায়ুদূষণ চরমে, জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত, বায়ুদূষণে দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার তুলনামূলক দরিদ্র দেশগুলো তালিকার শীর্ষস্থান দখল করে থাকলেও ইউরোপ-আমেরিকার ধনী দেশের শহরগুলোকে এই তালিকায় দেখা যায় না। ফলে অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত, পরিচ্ছন্ন দেশের কোনো শহর এই তালিকায় থাকবে— তা একপ্রকার অকল্পনীয়। তবে কল্পনা এবার বাস্তবতার কাছে হার মানলো।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিসহ বেশ কয়েকটি শহরে বায়ুদূষণ চরমে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় আইকিউএয়ারের তথ্য বলছে, সিডনির বাতাসের একিউআই স্কোর ৫১৯, হ্যাঁ আপনি ঠিকই পড়ছেন। আইকিউএয়ারের মানদণ্ড অনুযায়ী স্কোর ৩০০’র বেশি হলেই যেখানে ‘বিপজ্জনক’, সেখানে সিডনির বাতাসের মান ৫০০’র বেশি, একেবারে ‘বিপর্যয়’ বলা যায়।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
হঠাৎ করে সেখানকার বাতাসের মানে এমন চরম অবনতি কেন, তা জানতে দেশটির শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোতে ঢুঁ মারলে দেখা যায়, আজ (মঙ্গলবার) সকালে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া থেকে উঠে আসা এক ধুলিঝড় এসে সিডনির আকাশ ঢেকে দেয়। ঘন ধুলার কুয়াশায় হারিয়ে যায় শহরের পরিচিত দৃশ্যপট— হারবার, স্কাইলাইন, এমনকি দূরের ব্লু মাউন্টেনসও বা নীল পর্বতশ্রেণিও।
অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল নিউজ ডটকমের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সিডনির কিছু এলাকায় বায়ুদূষণের জন্য দায়ী বস্তুকণা পিএম১০-এর মাত্রা পৌঁছায় ৬০০ মাইক্রোগ্রামে। সিডনির দক্ষিণে অবস্থিত নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চল ইলাওয়ারায় এই মাত্রা ছিল আরও বেশি, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৯০৩.২ মাইক্রোগ্রাম।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
এটি কতটা বিপর্যয়কর দুটি উদাহরণ থেকে চলুন বুঝে নেই। একই সময়ে আইকিউএয়ারের দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল পাকিস্তানের লাহোর। শহরটির একিউআই স্কোর ছিল ১৭৩, মানে ‘অস্বাস্থ্যকর’। আর সেখানে পিএম ২.৫ দূষণ কণার উপস্থিতি ছিল প্রতি ঘনমিটারে মাত্র ৮৭।
পিএম ২.৫ কণা প্রতি ঘনমিটারে ৮৭ থাকলেও লাহোরের বাতাস কেবল সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর নয়, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর। সেখানে সিডনি বা ইলাওয়ারায় দূষণ কণা ছিল পিএম১০, যা আরও ক্ষতিকর এবং তার পরিমাণ তালিকার দুইয়ে থাকা লাহোরের চেয়ে ১০ গুণের বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দূষিত বায়ুর শহর ভারতের রাজধানী দিল্লির বাতাসের এই মান ছিল তখন ১০৭, যা পরে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে আটটায় নেমে আসে ৫৭-তে।
বিজ্ঞাপন
এসব সূক্ষ্ম কণা ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিসের উপসর্গ বাড়িয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি চোখ, নাক ও গলায় জ্বালাও সৃষ্টি করতে পারে বলে নাগরিকদের সতর্ক করেছেন অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এমন পরিস্থিতিতে জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে নিউ সাউথ ওয়েলসের স্বাস্থ্য বিভাগ। বিশেষ করে যারা হাঁপানি বা শ্বাসজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের বাইরে না যাওয়া, ঘরের জানালা বন্ধ রাখা এবং প্রয়োজনে নাক-মুখ ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বায়ুদূষণের কারণে স্বাস্থ্যগত কোনো উপসর্গ দেখা দিলে বাসিন্দাদের ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন ১৮০০ ০২২ ২২২-এ যোগাযোগ করতে কিংবা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এমনকি জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ০০০ নম্বরে ফোন করতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
- আরও পড়ুন:
- প্রথমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পতাকা তোলার অধিকার পেল ফিলিস্তিন
- গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৫৪, আগুনে পুড়ে মারা গেলো শিশুরাও
- গাজায় ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদছে শিশুরা, চাপ বাড়লেও থামছে না ইসরায়েল
নিউ সাউথ ওয়েলস রুরাল ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, খরার কারণে সৃষ্ট ধুলা প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় রূপ নিয়ে সিডনি ও আশপাশের অঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে পড়ায় এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সকাল ৮টার দিকে শহরের বাতাসের মান চরমে পৌঁছালেও ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে অবশ্য তা কিছুটা কমে আসে বলে খবরে বলা হয়েছে।
টিটিএন
বিজ্ঞাপন