ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

সিরিয়ায় দ্রুজ সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক নেতা হিকমাত আল হিজরি কে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:৪১ পিএম, ২১ জুলাই ২০২৫

সিরিয়ায় সম্প্রতি ইসরায়েলের বোমা হামলার ঘটনা দেশটির ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, দ্রুজ সম্প্রদায়, বিশেষ করে তাদের আধ্যাত্মিক নেতা হিকমত আল হিজরির প্রসঙ্গ নতুন করে মানুষের মনোযোগ কেড়েছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সিরিয়ার ওপর তাদের হামলাকে বৈধতা দিতে গিয়ে বলেছে, তারা ইসলাম ধর্মের এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ‌‘রক্ষা’ করতে হামলা চালিয়েছে।

দ্রুজরা হলো সিরিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন শতাংশ। আপাতত লক্ষ্য পূরণ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে কারণ সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বৃহস্পতিবার বলেছেন যে দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষা করা তার সরকারের প্রাধান্য।

সিরিয়ার এই সম্প্রদায়টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধের শিকার হয়েছে বলে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে বলেন, আমরা নিশ্চিত করছি যে তাদের অধিকার এবং স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের প্রধান অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি।

এ কথার প্রমাণ হিসেবে তার সৈন্য এবং বেদুইন সুন্নি গোষ্ঠীগুলোকে সুয়েইদা শহর থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানান। সুয়েইদা হলো দ্রুজ সম্প্রদায়ের ঘাঁটি। পর্যবেক্ষণ সংস্থার তথ্য অনুসারে, সম্প্রতি সুয়েইদা শহরে সহিংস সাম্প্রদায়িক সংঘাত হয়েছে। এসব সংঘর্ষে প্রায় ৬০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বিশেষ করে হিকমাত আল হিজরির সঙ্গে একটি চুক্তির পর সুয়েইদা থেকে সিরিয়ান বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

গত কয়েক মাসে তিনি দামেস্ক সরকারের অন্যতম কঠোর সমালোচক হয়ে উঠেছেন এবং তিনি দেশের অন্যতম প্রভাবশালী কণ্ঠস্বরও বটে।

তবে আল হিজরি সব ধরনের চুক্তির কথা অস্বীকার করেছেন এবং সরকারি বাহিনীগুলোকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, আমাদের প্রদেশকে এই দস্যুদের থেকে পুরোপুরি মুক্ত না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

দ্রুজদের আধ্যাত্মিক নেতা আল হিজরির সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিবিসি অ্যারাবিক সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, দ্রুজদের আধ্যাত্মিক নেতা আল হিজরির জন্ম ১৯৬৫ সালের ৯ জুন ভেনেজুয়েলায়।

তার বাবা সালমান আহমেদ আল-হিজরি সেসময় ভেনেজুয়েলায় কাজ করতেন। তিনি নিজেও একজন দ্রুজ নেতা ছিলেন। কিশোর বয়সে তিনি তার পরিবারসহ সিরিয়ায় ফিরে আসেন, যেখানে তিনি পড়াশোনা শেষ করেন এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়েন। দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওয়েবসাইট আল আমামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এরপর ১৯৯৩ সালে আল হিজরি কাজের জন্য আবার ভেনেজুয়েলায় ফিরে যান। পরে ১৯৯৮ সালে তিনি স্থায়ীভাবে সুয়েইদায় ফিরে আসেন এবং পাশের দ্রুজ আধ্যাত্মিক শহর কানাওয়াতে বসবাস শুরু করেন।

জর্ডানে পরিচালিত ও জার্মান সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত নিউজ ওয়েবসাইট সিরিয়া ডাইরেক্ট এমনটাই জানিয়েছে। আজকের এই শেখ বা ধর্মীয় নেতা, যিনি এক রক্ষণশীল ধর্মীয় পরিবেশে বড় হয়েছেন, তিনি দ্রুজ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে ধাপে ধাপে উপরে উঠতে থাকেন।

তার ভাই আহমেদের মৃত্যুর পর ২০১২ সালে অবশেষে আল হিজরি মরহুমের স্থলাভিষিক্ত হন। আহমেদ এক রহস্যজনক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। বিবিসি মুন্ডোকে ভেনেজুয়েলার সাবেক পার্লামেন্ট সদস্য আদেল এল জাবায়ার বলেন, আল হিজরি তার প্রয়াত ভাইয়ের মতোই, ভেনেজুয়েলার পাসপোর্ট রয়েছে এবং তিনি সেই বিপুল সংখ্যক দ্রুজ বংশোদ্ভূত ভেনেজুয়েলাবাসীর অংশ, যাদের একজন আমি নিজেও।

সরকারের মিত্র থেকে সমালোচকে পরিণত
হিকমত আল হিজরি, যিনি ২০১২ সাল থেকে দ্রুজদের আধ্যাত্মিক নেতা, তিনি ক্ষমতাচ্যুত বাশার আল আসাদের শাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থান রেখেছিলেন বলে বিবিসির অ্যারাবিক সার্ভিসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

২০১২ সালে তিনি সিরিয়ার তৎকালীর প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে উদ্দেশ করে বলেন, বাশার, তুমি জাতির আশা, আরব ঐক্যের আশা এবং আরবদের আশার প্রতীক।

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন, এই ধর্মীয় নেতা দ্রুজদের অস্ত্র তুলে নিয়ে আসাদের শাসন ব্যবস্থার পক্ষে লড়াইয়ে নামার আহ্বান জানান। তবে ২০২১ সালে সিরিয়ান সেনাবাহিনীর এক জেনারেলের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপের পর থেকে ক্ষমতাচ্যুত শাসকের সাথে আল হিজরির সম্পর্কে বিভেদ ও দূরত্ব তৈরি হয়।

আল-হিজরি একে মৌখিক অপমান বলে আখ্যা দিয়েছিলেন এবং এর জেরে সুয়েইদায় ব্যাপক বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়, যা কঠোরভাবে দমন করে তৎকালীন সরকার। তার এক সময়ের মিত্রকে হঠাৎ করে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর, এই শেখ ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শাম (এইচটিএস) দ্বারা পরিচালিত নতুন সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে স্বাগত জানান।

তবে গত কয়েক মাসে একের পর এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সিরিয়ার নতুন শাসকগোষ্ঠী ও দ্রুজ নেতা হিকমত আল হিজরির মধ্যকার সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।

মার্চের মাঝামাঝি সময়ে আল-হিজরি বলেছিলেন, দামেস্কের সরকারের সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া বা চুক্তি নেই।তিনি বর্তমান সিরীয় সরকারকে পুরোপুরি চরমপন্থী এবং আন্তর্জাতিক আদালতের কাছে অপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

নিরপরাধ মানুষদের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞ ইসলামিক স্টেট আইএস-এর বর্বরতার কথাই মনে করিয়ে দেয়—তিনি তখন এমন মন্তব্য করেছিলেন। এই আধ্যাত্মিক নেতার অবস্থান পরিবর্তন ও কিছু আচরণ দ্রুজ সম্প্রদায়ের কিছু অংশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

টিটিএন