মঙ্গলে গাছের পরাগায়ণে সাহায্য করবে ‘ভ্রমর-সদৃশ’ রোবট!
ভ্রমরের মতো দেখতে রোবটটি/ ছবি: সিএনএন
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-এর গবেষকরা এমন এক ক্ষুদ্রাকৃতির রোবট তৈরি করছেন, যা দেখতে অনেকটাই ভোমরা বা ভ্রমরের মতো।
কাগজের ক্লিপের চেয়েও হালকা এই রোবট প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ বার ডানা ঝাপটাতে পারে এবং সর্বোচ্চ গতিবেগ তুলতে পারে প্রতি সেকেন্ডে দুই মিটার পর্যন্ত। এটি উল্টে যেতে, ভেসে থাকতে এবং নানা কসরতও করতে পারে।
গবেষকদের আশা, ভবিষ্যতে এই রোবট কৃত্রিম পরাগায়ণে ব্যবহার করা যাবে, এমনকি পৃথিবীর বাইরে মঙ্গল গ্রহেও। এমআইটির ডক্টরাল শিক্ষার্থী ই-হসুয়ান ‘নেমো’ হসিয়াও বলেন, মঙ্গলে ফসল ফলাতে চাইলে প্রাকৃতিক কীটপতঙ্গ নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সেখানে আমাদের রোবট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
আরও পড়ুন>>
- রোবটের ‘গর্ভে’ মানবশিশু? চীনের গবেষণায় বিশ্বজুড়ে হইচই
- বিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কীভাবে সর্বাধুনিক এআই মডেলে ঝুঁকছে?
- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিস্ময়বালক কে এই কাইরান কাজী?
মৌমাছি নয়, বিকল্প সমাধান
প্রকল্পটির প্রধান গবেষক কেভিন চেন জানান, প্রাকৃতিক মৌমাছিকে প্রতিস্থাপন নয়, বরং যেখানে মৌমাছি টিকে থাকতে পারে না— যেমন আল্ট্রাভায়োলেট আলোতে ভরা উঁচু স্তরে সাজানো ফসলের গুদামখামারে— সেখানে রোবট ব্যবহারই মূল লক্ষ্য।
বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা প্রকৃতির অনুকরণে এমন নানা রোবট তৈরি করছেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তৈরি করেছেন গিরগিটির মতো রোবট, যা বিপজ্জনক ধ্বংসস্তূপে নিজ অঙ্গ কেটে ফেলে বেরিয়ে আসতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার চুং-অ্যাং বিশ্ববিদ্যালয়ের দল বানিয়েছে শুঁয়োপোকার মতো রোবট, যা শরীর বাঁকিয়ে হামাগুড়ি দিতে সক্ষম।
ক্ষুদ্র রোবট, বহুমুখী কাজ
ভোমরা-সদৃশ রোবটের ডানা তৈরি হয়েছে লেজার-কাট প্রযুক্তিতে। এর কৃত্রিম পেশি প্রসারিত ও সংকুচিত হয়ে ডানা ঝাপটায়। গবেষকেরা একইসঙ্গে ঘাসফড়িং-সদৃশ একটি রোবটও তৈরি করছেন, যা আকারে মানুষের আঙুলের চেয়েও ছোট এবং এক লাফে ২০ সেন্টিমিটার উঁচুতে উঠতে পারে।
এই ক্ষুদ্র রোবটগুলো দুর্যোগের ধ্বংসস্তূপে নিখোঁজদের খোঁজে, কিংবা পাইপলাইন বা টারবাইন ইঞ্জিনের ভেতর অনুসন্ধানে ব্যবহারের উপযোগী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বড় চ্যালেঞ্জ শক্তি সরবরাহ
বর্তমানে রোবটগুলো তারের মাধ্যমে চালিত হয়। ব্যাটারি বা সেন্সর বসিয়ে এগুলোকে পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় করা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। গবেষকদের ধারণা, বাস্তবে এমন রোবট কাজে লাগাতে আরও ২০ থেকে ৩০ বছর সময় লাগতে পারে।
কেভিন চেন বলেন, পোকামাকড় কোটি কোটি বছর ধরে বিবর্তনের মাধ্যমে যে দক্ষতা অর্জন করেছে, সেখান থেকে শেখার মতো অনেক কিছু আছে। তাদের গতি, আচরণ আর গঠনের ভেতরেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির সূত্র লুকিয়ে আছে।
সূত্র: সিএনএন
কেএএ/