দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
বিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কীভাবে সর্বাধুনিক এআই মডেলে ঝুঁকছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথগ্রহণের দিনই চীনা কোম্পানি ডিপসিক একটি বিশ্বমানের ভাষাগত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল (এলএলএম) উন্মোচন করে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মহলে বড় ধাক্কা হিসেবে উপস্থিত হয় ঘটনাটি। মার্কিন সিনেটের গোয়েন্দা কমিটির ভাইস-চেয়ার মার্ক ওয়ার্নার বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ‘অপ্রস্তুত’ অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল।
এর আগেই ২০২৪ সালে বাইডেন প্রশাসন উদ্বেগ প্রকাশ করে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণে চীনা সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দারা হয়তো এগিয়ে যাবে। ফলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা, প্রতিরক্ষা দপ্তর ও পরমাণু অস্ত্র নির্মাতা এনার্জি ডিপার্টমেন্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়—এআই মডেল নিয়ে আরও সাহসীভাবে পরীক্ষা চালাতে এবং অ্যানথ্রপিক, গুগল ডিপমাইন্ড ও ওপেনএআই-এর মতো ‘ফ্রন্টিয়ার ল্যাব’-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে।
এজেন্টিক মডেলের পরীক্ষা
গত ১৪ জুলাই পেন্টাগন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ২০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত চুক্তি দেয়। ইলন মাস্কের এক্সএআই-ও এই তালিকায় রয়েছে। এই মডেলগুলোকে ‘এজেন্টিক’ বলা হয়—এরা জটিল কাজ ভাগ করে নিয়ে নিজেরাই পদক্ষেপ নেয় এবং অন্যান্য যন্ত্র (যেমন গাড়ি বা কম্পিউটার) নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।
আরও পড়ুন>>
- মোদীর ঘুম হারাম করেছে ইলন মাস্কের ‘গ্রক’, ভারতে আলোচনার ঝড়
- ইসরায়েলি বাহিনীকে এআই সহায়তার কথা স্বীকার করলো মাইক্রোসফট
- এআই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে চীনের অভিনব পরিকল্পনা
চ্যাটবট থেকে গোয়েন্দা কাজ
অ্যানথ্রপিক জানায়, তাদের তৈরি এআই মডেল ‘ক্লদ গভ’ এরই মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থায় ব্যবহৃত হচ্ছে। মডেলটি সাধারণ ক্লদের তুলনায় গোপন দলিল পড়তে পারে, প্রাসঙ্গিক ভাষা ও উপভাষায় দক্ষ, এবং ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন সুরক্ষিত সার্ভারেও চলে। এখন বিভিন্ন সংস্থার ভেতরেই নিজেদের এআই এজেন্ট তৈরির উদ্যোগ চলছে।
ইউরোপও পিছিয়ে নেই
ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা ইউকেআইসিতে এখন সবাই এআই মডেলের মাধ্যমে গোপন নথি বিশ্লেষণ করতে পারে। ফরাসি কোম্পানি মিস্ত্রাল তাদের সাবা মডেলকে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষিত করেছে, যা আরবি ও তামিলসহ আঞ্চলিক ভাষায় দক্ষ। এএমআইএডি-এর সঙ্গে তাদের সামরিক অংশীদারত্বও রয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর জিপিটি-৪ ব্যবহার গাজা যুদ্ধ শুরুর পর ২০ গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছে +৯৭২ ম্যাগাজিন।
গতি ও নিরাপত্তা-চিন্তা
ওপেনএআইর ক্যাটরিনা মুলিগান বলেন, ‘জাতীয় নিরাপত্তা খাতে এআই গ্রহণ এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।’ এনএসএ (সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স সংস্থা) কিছু অগ্রগতি দেখালেও অনেক সংস্থা এখনো নিজস্ব সফটওয়্যার ‘র্যাপার’ বানিয়ে মূল প্রযুক্তি থেকে পিছিয়ে পড়ছে।
অ্যানথ্রপিকের নিরাপত্তানীতি প্রধান তারুণ ছাবরা বলেন, কেবল চ্যাটবট হিসেবে ব্যবহার করাই পরিবর্তন নয়, বরং গোটা মিশন কাঠামোই পুনর্গঠন করা দরকার।
কিন্তু এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষায় সংশয় রয়েছে। আলান টিউরিং ইনস্টিটিউটের রিচার্ড কার্টার বলেন, এলএলএম মডেলগুলো এখনো ‘হ্যালুসিনেশন’ বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়।
এ অবস্থায় কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, বর্তমান এলএলএম গঠন কাঠামো বাস্তবজগতের কারণ বা পরিণতি বুঝতে যথেষ্ট নয়। বরং সংস্থাগুলোকে নতুন যুক্তিনির্ভর মডেল তৈরির দিকে এগোতে হবে।
কেএএ/