ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

নেপালে পলাতক বন্দিরা ফিরে না এলে বিশেষ অভিযান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:২০ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নেপালের পলাতক বন্দিরা ফিরে না এলে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। দেশটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, জেন জি আন্দোলনের সময় দেশজুড়ে বিভিন্ন কারাগার থেকে পালানো সব বন্দি যদি ফিরে না আসে, তবে বিশেষ নিরাপত্তা অভিযানের মাধ্যমে তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। খবর বিবিসির।

কারাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক চমেন্দ্র ন্যুপানের তথ্য অনুযায়ী, রোববার রাত পর্যন্ত ১১ হাজার বন্দি পলাতক রয়েছেন। নেপালের কারা ব্যবস্থাপনা বিভাগ শুক্রবারের মধ্যে জেল পলাতকদের ফিরে আসার আহ্বান জানালে কিছু বন্দি ফিরতে শুরু করেন। তাৎক্ষণিকভাবে আরও কয়েকজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে গত কয়েকদিনে যারা পালিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই এখনো কারাগার ও কিশোর সংশোধনাগারে ফিরে আসেননি।

কারাগারে ফেরানোর উদ্যোগ
কারা ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক ন্যুপানে বলেছেন, যেসব অপরাধী ফিরতে চাচ্ছে না তাদেরকে শিগগির আটক করা হবে। তিনি আরও বলেন, এজন্য আমরা এরই মধ্যে বন্দিদের একটি তালিকা পুলিশ সদর দফতরে এবং অভিবাসন দফতরে পাঠিয়েছি, যাতে তারা পালাতে না পারে। সীমান্ত থেকেও তাদের আটক ও ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

কর্মকর্তারা জানান, ভারত-নেপালের উন্মুক্ত সীমান্ত থাকায় এ ধরনের বন্দিদের দেশ ছেড়ে পালানোর ঝুঁকির কারণেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জেল পালানো কেউ যদি পালিয়ে কোনো এলাকায় থাকে, তাহলে স্থানীয় জনসাধারণকে তা কারা কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে গণমাধ্যমের সহায়তায় বন্দিদের বারবার আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

মহাপরিচালক ন্যুপানে বলেন, কিছু বন্দি নিজেরাই ফিরতে চাচ্ছেন। নিরাপত্তা অভিযান ছাড়াও পুলিশ আলাদাভাবে পলাতক অপরাধীদের খুঁজে বের করার একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এছাড়া প্রতিটি থানাকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে এবং পুলিশ সে অনুযায়ী কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সারাদেশে একটি অভিযান পরিচালনা করব যেন পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের খুঁজে বের করা যায়।

তবে তিনি এটাও জানিয়েছেন যে, শুধুমাত্র কারাগার থেকে আটকদেরই এই নিরাপত্তা অভিযানে আটক করা হবে না, অন্য অপরাধে অভিযুক্তদেরও আটক করা হবে। এ বিষয়ে সাধারণ জনগণকেও সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

কারা মহাপরিচালক সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, জেল পালানো অনেক বন্দির আচরণই সংশোধন হয়নি। যে কারণে তারা আরও অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এটা ঠেকাতে আমাদের অবশ্যই একটি সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনা করতে হবে। খোঁজ নিতে হবে এবং তাদের ফিরিয়ে আনতে জোর আহ্বান জানানো হবে। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে যে পালানো কিছু বন্দি দেশের নানা প্রান্তে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়েছে।

যে কারণে তাদের এসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান কারা অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা। এক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জানিয়েছে, নেপালের এই জেন জি আন্দোলনের সময় পুলিশ ফাঁড়ি, থানা, জেলা সদরে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

সর্বশেষ পরিস্থিতি কী?
কারা বিভাগের মহাপরিচালক ন্যুপানের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ২৬টি কারাগার থেকে বন্দিরা পালিয়েছে। এর মধ্যে পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের সংখ্যা ১৩ হাজার ২০৭ জন।

আর কিশোর সংশোধনাগারসহ বন্দির সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার ৪২৯ জন। যার মধ্যে ১৪ হাজার ১৭১ জন আন্দোলনের সময় পালিয়ে গেছে। তবে কিছু বন্দি ফিরেও এসেছে। সেই সংখ্যা এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৪০ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৯৬ জন কারাগারে এবং ২৪৪ জন সংশোধনাগারে ফিরেছে।

নেপাল পুলিশের মুখপাত্র ও ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল বিনোদ ঘিমিরের উদ্ধৃতি দিয়ে জাতীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, কয়েকজন পালিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করলে ভারতীয় পুলিশ তাদের ধরে ফেরত পাঠিয়েছে। আবার সেনাবাহিনী, পুলিশ ও সশস্ত্র পুলিশও কয়েকজনকে আটক করেছে।

ঘিমিরে জানিয়েছেন, কিছু বন্দি নিজেরাই কারাগারে ফিরে এসেছে। তবে পলাতক বন্দিদের খুঁজে বের করার অভিযান চলতে থাকবে।

কারাগার আইন ২০৭৯ অনুসারে, যারা কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করবে বা পালাবে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

আইনে বলা হয়েছে, কারাগার থেকে পালানো বা পালানোর চেষ্টা করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার রুপি জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

আইনে আরও বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি প্রচলিত আইনে সাজাপ্রাপ্ত এবং প্যারোলে গিয়ে কিংবা কারাগার অথবা কিশোর সংশোধনাগার থেকে পালাবে তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার রুপি জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

টিটিএন